দুই বিঘা জমি

বাপের পছন্দে রুহুল আমিন বাপের বন্ধুর মেয়ে রেবেকাকে একদিনের নোটিশে বিয়ে করে। বিয়ে করে বলার চেয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয় বলাটা বিশ^স্ত হয়। এমন নয় যে রেবেকা দেখতে-শুনতে খারাপ বলে রুহুল আমিন অরাজি হবে, দুধে আলতায় গায়ের রঙের সংজ্ঞা মেলানো সুন্দরী না হলেও গায়ের রং তার উজ্জ্বল শ্যামলা। আর্য রক্তের যৎসামান্য মিশ্রণে টিকালো নাকের ঢং, লম্বাও গড়পড়তা মেয়েদের মতোই। হোক না যেমনই, রুহুল আমিনকে তো কবুল বলার আগে রেবেকাকে কেউ দেখানোরই প্রয়োজন মনে করেনি। পড়াশোনা না জানা অকাট মূর্খ নয় রেবেকা, শহরের কলেজে বিএ ক্লাসে পড়ে, কথাটা পড়শি মেয়েরা শুনিয়েছিল হাতে মেহেদি দিয়ে নকশা আঁকতে আঁকতে। তবে অর্থ-প্রতিপত্তিশীলতায় যদি রুহুল আমিনের বাপের সঙ্গে তুলনা করতে হয় – এই শহরে একমাত্র এই পরিবারটিকেই করা যায় – এটা রুহুল আমিন নিজেই জানতো। রুহুলের আপত্তি জানানোর বাহ্যিক কোনো কারণই দৃশ্যমান ছিল না। আর অন্তর্গত যে-কারণ তা তো আর প্রকাশ্যে বলার মতো নয়, ফলে বলাও হয় না। সবে এমএ পরীক্ষা শেষ হয়েছে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা অজুহাত খাড়া করা যেত বটে। কিন্তু জেলা সদরে রুহুল আমিনের বাপের বিরাট ওষুধের ব্যবসা, উত্তরাধিকারসূত্রে এসবের মালিক সে। যেই সেই ব্যবসা নয়। নামে-ডাকে-আয়ে ঠিক ধনী বলতে এলাকায় যে দু-চার ঘর জ্বলজ্বল করে রুহুল আমিনরা তাই। সেই পরিবারের একমাত্র পুত্রসন্তান রুহুল আমিন। সময়ের বাওয়ে ছেলেকে বিশ^বিদ্যালয় অবধি পড়িয়েছেন বটে, কিন্তু বাপের এমন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা আর স্থায়ী বড়লোকিয়ানা ফেলে ছেলে চাকরি করতে যাবে – এটা তার বাপের কল্পনাতেও আসে না। চাকর থেকে চাকরি। হোক তা সরকারের কিংবা অন্য কারো। নিজের দোকান-বাসা মিলিয়ে যেখানে গণ্ডায় গণ্ডায় চাকর-বাকর সেখানে তার নিজের ছেলের নামের সঙ্গে চাকর যুক্ত হবে, এটা তিনি জীবদ্দশায় মেনে নেবেন পরের কথা, কল্পনায়ও আনতে পারেন না।

রুহুল আমিনের বাপ এমন অনেক কিছুই মানবেন দূরের কথা কল্পনায়ও আনেন না।  এক পুরুষ ব্যবসা করেই ফুলেফেঁপে শহরের কয়েকটা পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের মালিক তারা। তিন পুরুষের কেউ স্কুল-কলেজের ধার ধারেনি, বড়জোর গাঁয়ের মক্তব। গ্রামে রুহুল আমিনের দাদার ছিল অঢেল ধানিজমি, এক আইলে দাঁড়ালে যার অন্য আইল দেখা যায় না – তেমন সীমানাহীন সীমানা। বংশে সৈয়দ, এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি আর দশটা বাড়ি থেকে ঢের বেশি। এই বাড়ির বিয়ে-সুন্নতে দাওয়াত পেলে বর্তে যায় গ্রামবাসী। সেই বাড়ির ছেলে রুহুল আমিনের বাপ, সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস। বাপের হুমকি-ধমকি, মক্তবের হুজুরের বেতের বাড়ি আর মায়ের কান্না পেছনে ফেলে শহরে উঠে এসেছিল এক কাপড়ে মাইমলের মাইয়া জুহেনাকে বিয়ে করার অপরাধে। একে বিপুল জমি-জিরাতের প্রতিপত্তি, অন্যদিকে সৈয়দ বংশ। এই মাইমলের কইন্যারে ছেলের বউ মেনে নিয়ে গ্রামে সামান্যতম মাথা হেঁট করে থাকা অসম্ভব। ছেলেও বউ ছাড়তে রাজি না হলে গাঁয়ের পাঁচজন ডেকে রুহুল আমিনকে ত্যাজ্যপুত্র করেন তিনি। আইনের ঢাউস ঢাউস বইপুস্তক এই ত্যাজ্যপুত্র করার প্রক্রিয়ার পক্ষে না বিপক্ষে গ্রামের কেউ তার ধার ধারে না। পাঁচজনের সিদ্ধান্তই সেখানে আইন।

স্বেচ্ছায় হোক কিংবা বাধ্য হয়ে বাপের আদেশ শিরোধার্য করে জুহেনাকে নিয়ে  মহাজন জয়রামবাবুর দোকানে কর্মচারী খেটে জীবন শুরু হয় রুহুল আমিনের বাপের। যাবতীয় বৃত্তান্ত শুনে জয়রামবাবু দোকানে চাকরি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বাড়ির শেষ মাথায় অবহেলায় ঝুরঝুরে হয়ে যাওয়া ভাঁড়ার ঘরটিকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে দাঁড় করিয়ে, মাথার ওপরের ছন বদলে থাকার উপযোগী করে দেয়। শুরু হয় রুহুল আমিনের বাপের নতুন জীবন। জয়রামবাবু দয়াপরবশ হয়ে নাকি নিজের ব্যবসায়িক কোনো সুদূরপ্রসারী স্বার্থে  রুহুল আমিনের বাপের এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছিল তা কোনোদিনই আর কারো জানা হয় না।

কিন্তু অল্পদিনেই জয়রামবাবুর খুব বিশ^স্ত কর্মচারী হয়ে উঠেছিল রুহুল আমিনের বাপ। নিয়মিত মিটফোর্ড থেকে ওষুধ আনা, গ্রামে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দোকানে তাগাদা পাঠিয়ে বাকির টাকা উদ্ধারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব তার ওপরে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে দুপুরে খেয়ে ভাতঘুম যেত জয়রামবাবু। শালার বিয়েতে দুদিনের জন্য গিয়ে পাঁচদিন কাটিয়ে এলে ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো দুশ্চিন্তা পীড়িত করতো না তাকে।

মিটফোর্ডের বাজার থেকে মহাজনের হয়ে মালামাল আনতে আনতে নিজের সততা, বিশ^স্ততা আর শ্রমে রুহুল আমিনের বাপ নিজেই একদিন মহাজন বনে যায়। সে-ইতিহাস অবশ্য পঞ্চাশ বছর আগের। শহরের গোটাকয় বয়স্ক মানুষ ছাড়া তেমন কেউ জানে না, যাদের সংখ্যাও কমতে কমতে মাত্র গোটা কয়জনে এসে নেমেছে। তবে ভাগ্য আর সুযোগের এমন মানিকজোড় সংযোগ সব সময় সবার জীবনে আসে না। সংগ্রামের সময় রুহুল আমিনের বাপের কাছে দোকান-বাড়ি সব জিম্মা রেখে জয়রামবাবু ইন্ডিয়া গেলে আর ফিরে আসেনি, সেখানেই দেহ রাখে। বছরকয় পরে তার বড় ছেলে যখন দেশে আসে, রুহুল আমিনের বাপের ব্যবসা তখন বাড়-বাড়ন্ত।

দেশও তখন আদর্শে, উদ্দেশ্যে, পররাষ্ট্র আর রাষ্ট্রনীতিতে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো ঘুরে গেছে। ইন্ডিয়া তখন ঘোর শত্রু। একাত্তরের ইতিহাস লেখা হচ্ছে  নতুন করে। নতুন করে লেখা হচ্ছে রাষ্ট্রের গতিপথ। আজ একজন প্রেসিডেন্ট তো কাল অন্যজন। বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্র আর ক্ষমতার চেয়ার। আর সব যেমন-তেমন বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মোছার ব্যাপারে সবাই একাট্টা। আর ইন্ডিয়া, অস্বীকারের ডিটারজেন্ট দিয়ে তার সব অবদান ধুয়েমুছে ফকফকা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে সবে। শত্রুদেশ তখন ইন্ডিয়া। এই সময়ে জয়রামবাবুর ছেলে ইন্ডিয়া থেকে এসেছে শুনলে যে-কোনো সময় পুলিশে ধরতে পারে, কথাটা জয়রামবাবুর ছেলের কানে দিলো রুহুল আমিনের বাপ। কথাটা যে সে খুব মিথ্যা বলেছে তা নয়। আবার সত্যও নয় পুরোপুরি। মূলত কে খোঁজ রেখেছে তার যে পুলিশের কানে তুলবে। আর  কার স্বার্থই বা কী, স্বার্থ যা তা তো রুহুল আমিনের বাপেরই। ফলে কথাটা বলার পর অপরাধবোধ আর লোভের পরস্পরবিরোধী পীড়নে ক্লিষ্ট হয়েছে বহুকাল।

ছেলেটা সেই যে ভয় পেয়ে ইন্ডিয়া ফিরে গেল আর এ-মুখো হয়নি। যাওয়ার সময় ঘুরে ঘুরে সব কয়টা ঘর দেখছিল সে। চকচকে কালো চেয়ার, কারুকার্য করা আলমিরা, টেবিল, খাট। মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকার স্মৃতিও হয়তো মনে পড়ছিল তার, হাত বুলাচ্ছিল খাটের গায়ে। যেন খাট নয় এটা, জ্যান্ত মানুষ। জল টলটলে চোখে গুড়ের মতো মিষ্টি আমের গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে রুহুল আমিনের বাপের দিকে না তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আওড়াচ্ছিল, আমি আজ চোর বটে। রুহুল আমিনের বাপ রবীন্দ্রনাথ পড়েনি। শুনলো, বংশ যেন নির্বংশ ঘটে। জয়রামবাবুর ছেলে গেল তো বটে, রুহুল আমিনের বাপের ভেতরে রোপণ করে দিয়ে গেল এক অজানা আতঙ্ক আর ভয়। তার বংশ কি নির্বংশ হবে? কিন্তু ছাপড়া ঘর ছেড়ে বাবুর খাট-পালংক-আলমিরা ব্যবহার করে যে জীবন যাপনকে তিনি কয় বছরে নিজের করে নিয়েছেন অজানা আতঙ্কে হঠাৎ তার লোভ ছেড়ে দেওয়া সহজ কথা নয়।

এরপর থেকে হিন্দুদের সে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে। পরিবারের কাউকে সে কোনো হিন্দুর সঙ্গে মিশতে দেয় না। দোকানে কোনো হিন্দু কর্মচারী রাখে না। শহরের যে-হিন্দুরা বৃত্তান্ত জানে, তাদের সঙ্গে দেখা হলে এড়িয়ে যায়। তারা আদাব দিলে না শোনার ভান করে চলে যায়।

সেই বাপের কাছে যখন উড়োচিঠি আসে, রুহুল আমিন বিশ^বিদ্যালয়ে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে, তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তিল মুহূর্ত দেরি না করে ছেলেকে টেলিগ্রাম করে সে, ফাদার সিক, কাম শার্প। অসুস্থতার ভান করে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের অন্য এক ধনী ব্যবসায়ীর কন্যা রেবেকার সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করে রাখে। রুহুল আমিন পড়িমরি বাড়ি ছুটে এসে লম্বা বারান্দার আরাম কেদারায় বসা বাপকে হুঁক্কা টানতে দেখে একাধারে স্বস্তি পায় অন্যদিকে বিস্মিত হয়, বাপ তাইলে অসুস্থ নয়। কিন্তু কেন তাকে এমন জরুরি টেলিগ্রাম করে হঠাৎ ডেকে  আনা? এই ভাবনায় থই হারানোর আগেই বাপ পাশের জলচৌকিতে তাকে ইশারায় বসতে বলে। কোনোরকম আপত্তি করার সুযোগ না রেখে দৃঢ় কণ্ঠে তার বিয়ে ঠিক করার খবর দেয়। সঙ্গে এমন হুমকিও জুড়ে দেয় সচেতনভাবে, সে রাজি না থাকলে যেন এ-বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, আর এ-মুখো না হয় কোনোদিন। তার বাপের মতো সেও ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করবে। রুহুল আমিন অবশ্য তখন জানে এই ত্যাজ্যপুত্র ব্যাপারটির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তবু বাপের প্রতিষ্ঠিত প্রতিপত্তির সাম্রাজ্য, যা সে সহজেই পায়, তার জন্য অযথা লড়াই-সংগ্রামের দরকার কি? সেদিন রাতেই বাপ জনাকয় মুরুব্বি নিয়ে রেবেকার সঙ্গে রুহুল আমিনের কবুল পড়িয়ে একেবারে রেবেকাকে ঘরে তুলে নিয়ে আসে।

সুনন্দার সঙ্গে শেষবার দেখা হয় যেদিন, সেদিন রুহুলের আদতে আর কিছুই করার নেই। সুনন্দা একা নয়, খুব কাছের বন্ধুবান্ধব, যারা রুহুল আর সুনন্দার ঘটনা জানত কিংবা আঁচ করতে পেরেছিল, তাদের নিয়ে মোটামুটি দল ভারি করে এসেছিল সুনন্দা। বন্ধু আহমেদের অফিসে। সুনন্দার মাঝে কোনো অসততা ছিল না। গোটা পাঁচ-ছয়জন পরিবেষ্টিত রুহুল নিরুপায় অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসেছিল। ওরা নানাভাবে রুহুলকে বোঝানোর চেষ্টা করে, নানা ইশারায়, ইঙ্গিতে। শেষাবধি স্পষ্ট করেই বলে, রুহুল আর গ্রামে ফিরে না গেলেই হয়। কিন্তু রুহুল  নিরুপায়। কোনো উপায় নেই তার। কেন উপায় নেই – তা প্রকাশ্যে বলার সাহসও নেই তার। সবাই ভুল বুঝলেও না। কিচ্ছু করার নেই রুহুলের।

কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায় সুনন্দা। সুনন্দার চোখে জল থাকলেও  চলে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল  রুহুলের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি ঘৃণা আর মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলার দৃঢ়তা। রুহুলের সাহস বা সামর্থ্য বা সুযোগ কোনোটাই ছিল না তাকে আটকায়। কিন্তু কী হয়, সুনন্দা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুহুল আমিনের ভেতরে জন্ম নেয় তীব্র গ্লানি আর অপরাধ বোধ। বিশ^বিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে সুনন্দার সঙ্গে তার অসংখ্য ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত লেগে আছে। টিএসসির ঘাস আর খালি ক্লাসরুমের বেঞ্চ সাক্ষী রুহুল আমিন সুনন্দাকে একাধিকবার বলেছে, সুনন্দাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। সুনন্দার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময় কিংবা সুনন্দার অপরূপ স্তনযুগলে স্পর্শ করার লোভ সামলাতে না পেরে বারবার কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী, তুমিই শেষ। সে যে কেবলই কথার কথা ছিল তা নয়, এমনই মনে হতো রুহুল আমিনের, সুনন্দার বিশ^াস আর ভরসাও ছিল তার অনুগামী। অথচ আজ কত সহজে …! সুনন্দা কী অভিশাপ রেখে গেল? কী ছিল তার অশ্রুতে আর দীর্ঘশ^াসে? প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণা, নাকি প্রতিশোধের বাসনা? চাইলেই কী সে আর সুনন্দাকে ফেরাতে পারে, ভাবতে ভাবতে রুহুল আমিন  ফিরে আসে বাবার প্রতিশ্রুতির কাছে। বাবার ব্যবসা আর প্রতিপত্তিতে। 

জন্ম নিয়ন্ত্রণে শতভাগ সাফল্যের জন্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেবার কী জানি একটা পুরস্কার পায় সেবার রুহুল আমিনের বউ রেবেকা তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেয়। তখন মধ্যদুপুর। রোদ জন্মান্ধ বুড়োর মতো  হুমড়ি খেয়ে পড়েছে চারতলার জানালায়, রেবেকা গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে টের পেল তলপেটে চাপ। এই চাপ তার পূর্বপরিচিত। এর আগে দুই-দুইবার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে সে। প্রথমবার রুহুল আমিনের জন্য অপেক্ষা করেছিল। হয়তো আসতেও পারে। এর দুদিন আগে না বলেকয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল সে। দাঁত চেপে সহ্য করেছিল কয়েক ঘণ্টা; কিন্তু রুহুল আমিন আসেনি। সুনন্দার প্রতি করা অন্যায়ের পাপবোধের গ্লানিতে দাম্পত্যের সকল লেনদেন আর যাপনে আড়ষ্ট হয়ে থাকতো রুহুল আমিন। কোনোদিন রেবেকা স্ত্রীর স্বাভাবিক সহবাস পায়নি।  তাই বলে সন্তান জন্মের সময় তার অনুপস্থিত থাকাটা অস্বাভাবিক ঠেকে সবার কাছে। যদিও রেবেকা নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, সুনন্দা নামের এক ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ তার। মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে জেতা যায়, ছায়ার সঙ্গে জেতা যায় না। তবুও ভেতরে ভেতরে তীব্র ঈর্ষার জ্বলুনি উপেক্ষা করতে পারে না।  

প্রথমবার ব্যথা অসহ্য হয়ে উঠলে নিজে নিজেই অটোরিকশা ডেকে কাছের ক্লিনিকে গেছে। সঙ্গে যেতে চাওয়া ঝি-চাকর কাউকে নেয়নি। রুহুল আমিনের ভূমিকার বিপরীতে এই তীব্র জেদই প্রতিবাদ তার। ডাক্তারকে বলেছে, আমার প্রসব বেদনা উঠেছে, ভর্তি করেন। ডাক্তার ঘটাঘট ঘটাঘট শব্দ করা এক ফ্যানের নিচে হাতলঅলা চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা ফাইল খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘সঙ্গে কে?’ ‘কেউ না আমি একাই।’ শুনে জরুরি ফাইল রেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে দাঁড়ালেন। শিওর হতে চাইলেন সত্যিই সঙ্গে কেউ আছে কি না। নেই নিশ্চিত হয়ে বিস্ময় লুকিয়ে ডাক্তার হিসেবে মাথা ঠান্ডা রাখা পেশাগত দায়িত্বের বদলে হইচই শুরু করে দেন, ‘নার্স, নার্স!’ নার্সরা তড়িঘড়ি এসে এসে তাকে লেবার রুমে নিয়ে যায় আর মিনিট দশেকের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম নেয় এবং একদিন হাসপাতালবাসের পর বাসায় ফেরার সময় দেখলো রুহুল আমিন দিব্যি দোকানের উঁচু চেয়ারে বসে ব্যবসা তদারকি করছে। বাড়িভর্তি ঝি-চাকর-কর্মচারীদের কাছে এ-বিষয়টিও খুব অস্বাভাবিক লাগে। শরীরের সাময়িক ক্লান্তি আর অভিযোগের আগুন হজম করে সে ফিরে যায় সংসারের কাজে। এভাবেই বারবার, প্রতিবার। যতবার পোয়াতি হয়েছে সে, সন্তান বিইয়েছে।   

রুহুল আমিনের বউ বছর বছর বাচ্চা বিয়োয়। এ নিয়ে পাড়াময় হাসির হুল্লোড়। ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট বিজ্ঞাপনের যুগে দুই বছর বিরতি দিয়ে দিয়ে সাত সাতটি ছেলেমেয়ে। ভাবা যায়! রুহুলের বউয়ের পেট দৃশ্যমান হলেই ঝি-চাকরদের বিশ^স্ত বয়ানে পাড়াময় খবর রটে যায় আর লোকজন মুখ টিপে হাসাহাসি করে। তখনো বিকেল বিকেল পাড়ার বউ-ঝিরা দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবু হবু করলে পাড়ার মাঠে বাচ্চাদের খেলায় ছেড়ে দিয়ে চুল ছড়িয়ে বসে বসে গল্প জমায়। রুহুল আমিন বউয়ের উপ্রে দিয়া হাইট্টা গ্যালেই বউডার পেট হইয়ে যায়, বলে এরা এ-ওর ওপরে ঢলে পড়ে। রুহুলের বউ রেবেকা কোনোদিন এসব আসরে যোগ দেয় না। তার জগৎ একলা জগৎ। বিয়ের রাত থেকেই এই একলা জগৎ সে তৈরি করে নিয়েছে ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়, নিরুপায় হয়ে।

রুহুল আমিনেরও কম হেনস্থা সহ্য করতে হয় না যেখানে-সেখানে, বন্ধুমহলে। তার তো বাইরে বের না হলে চলে না। লোকজন সমানে বলতে থাকে, কী রুহুল, কয় নম্বর? শেষ দুই ছেলের সময় সে আজানই দেয়নি। গোপনে আকিকা করিয়েছে। 

রুহুল আমিন কাউকে বলতে পারে না রেবেকার গায়ে হাত দিতে গেলেই সুনন্দাকে দেখে সে। একই ভঙ্গি, একই সাড়া রেবেকার কাছে প্রত্যাশা করে রুহুল আমিন। আর না পেয়ে ফোঁসফোঁস করে ফিরে আসে। কিন্তু ঘুমও তার কাছে এক অসহনীয় যাতনার নাম। চোখ বন্ধ করলেই মেঘের পাহাড় ডিঙিয়ে এক শিশু তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। রুহুলের মনে হয় বাচ্চাটা এখনই পড়ে যাবে। সে হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে ধরতে চায়। পারে না। তন্দ্রাঘোর কেটে যায়। তখনই উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সে রেবেকার ওপর। বাজারে মায়া বড়ি, রাজা কনডম ইত্যাদি হরেকরকম জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপকরণের কথা তার মাথায়ই আসে না কখনো। রেবেকাও এসবের ধার ধারে না। বিয়ের রাতেই দুই নির্মম সত্য জেনেছে সে, স্বামী রুহুল আমিন বলেছে, বাপের কথায় সুনন্দার সঙ্গে প্রতারণা করে রেবেকাকে বিয়ে করেছে। স্ত্রীর অধিকার না পেলে কোনো অভিযোগ করা যাবে না।

জি-বাংলায় দিদি নাম্বার ওয়ান রেখে পাড়ার গৃহিণীরা এখন আর বিকেলের মিইয়ে যাওয়া রোদে উঠানে উঠানে গল্পগুজবে একত্রিত হয় না। পরচর্চা পরনিন্দা পরশ্রীকাতরতা যেটুকু টিকে আছে সে মোবাইলের কল্যাণে।

পুরুষরাও পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সন্ধান। রুহুল আমিনের বাচ্চাকাচ্চাদের গল্প আর কোনো গুরুত্বই বহন করে না পরিবর্তনের জীবনে। রুহুল আমিনের বাচ্চাকাচ্চারা যার যার মতো পথঘাট খুঁজে নিয়েছে। কেউ স্কুলে, কেউ কলেজে, সবচেয়ে বড়টা পড়ালেখা শেষ করে চাকরিও পেয়ে গেছে একটা। এর মাঝে রোহিঙ্গারা দলে দলে এসে দেশে ঢুকে পড়েছে, এক মহামারি এসে প্রবল বেগে ছুটতে থাকা পৃথিবীকে যেন থাপ্পড় মেরে থামিয়ে দিয়েছে। আরো কত কত ইস্যু এসে একটার ওপর আরেকটা স্তর বসিয়ে সময়ের বহমানতাকেই বহমান রাখে, মহাকালের নিয়ম রক্ষা করে চলেছে। 

 রুহুল আমিনের ছেলেমেয়েরা আবার আলোচনার কেন্দ্রে আসে যখন তার কলেজপড়ুয়া দুই নম্বর ছেলেটা ঢাকার মেসে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে খবর এলে রেবেকা অন্দরে জ্ঞান হারায় আর রুহুল আমিন আবার নিখোঁজ হয়। শহরে মেসমেম্বারদের থানা পুলিশ দৌড়াদৌড়ি শুরু হলে পুলিশ বারবার ছেলের বাপকে ফোন করে; কিন্তু তার হদিস পায় না।  মোবাইল-বইপত্র ঘেঁটে কি জানি ক্লু পেয়ে মেসে থাকা আরেক মেয়েকে ধরে আনে। মেয়ের বাপও তখন হন্যে হয়ে রুহুল আমিনকে খোঁজে। রুহুল আমিন নিরুদ্দেশ। পোস্টমর্টেম শেষে মৃতদেহ বাড়ি এলে পড়শীরা দলবেঁধে মাটি দেয় ছেলেটাকে। সবার তীব্র, তীক্ষè, করুণ, বিষাদময় প্রশ্নের কাছে নিরুত্তর থাকে রেবেকা। এই সন্তানদের জন্মের সময় রুহুল আমিনের না থাকায় অভ্যস্ত রেবেকা পুত্র হারানোর শোকেও রুহুল আমিনের নিরুদ্দেশ হওয়াটা অস্বাভাবিক লাগলেও অবাক লাগে না তার। 

ক্রমে বিষয়টা স্বাভাবিকত্ব ছাপিয়ে চলে যায় বিষাদ আর কৌতূহলের অতলে। রুহুল আমিনের দুই নাম্বার সন্তান মেয়েটাকে বালিশচাপা দিয়ে মেরে ফেলে জামাই। মেয়ের শাশুড়ি ফোন করে ঘটনা জানালে যথারীতি থানা পুলিশ হইচই শুরু হয়। কোমরে দড়ি পড়ে জামাইয়ের। মামলার বাদী হওয়ার জন্য খোঁজ পড়ে রুহুল আমিনের। তখনো রুহুল আমিন নিরুদ্দেশ। কেউ ভেবে পায় না রুহুল আমিন যায় কই! কই যেতে পারে সে!  

রুহুল আমিনের পরিবারে তৃতীয় মৃত্যু ঘটে ছোট ছেলেটি পুকুরে ডুবে। এ বছরই স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর কথা তার। নিখোঁজ হওয়ার পরপর পাড়া-পড়শির সঙ্গে সেও খোঁজাখুঁজি করছিল। ঘণ্টাপাঁচেক পরে যখন তার দেহ ফুলেফেঁপে ভেসে ওঠে তখন মৃতদেহ উদ্ধার থেকে শুরু করে পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা কিংবা দায়িত্ব শেষ করার জন্য রুহুল আমিনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখনই ব্যাপারটা একটা বিরাট রহস্য নিয়ে পুনরালোচিত হতে থাকে গ্রামময়। সবশেষ যখন বড় ছেলের দিকের নাতিটা রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়িচাপা পড়ে, থ্যাঁতলানো শরীর দেখার আগেই রুহুল আমিন নিরুদ্দেশ হলেও এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। জীবদ্দশায় এক পরিবারের চার-চারটা মৃত্যু দেখলো তারা। এ কী কাণ্ড! সন্তান জন্মের সময় রুহুল আমিনের অনুপস্থিতির বিষয়টা কেউ না জানলেও একেকটা মৃত্যুর পর রুহুল আমিনের এই অনুপস্থিতি নানা মুখরোচক সম্ভাবনায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।

জানালায় উঁকি দিয়ে নিশ্চিত হয় রুহুল আমিন, মহিলাটি সুনন্দা। যদিও বয়সের মেদ আর ভাঁজে তাকে চেনা দায়। তবু এত কাছের মানুষটা, যার নিশ্বাসের শব্দটা পরিচিত ছিল একসময়, তাকে অচেনা লাগার মতো অমানুষ ভেতর থেকে হয়ে উঠতে পারেনি সে। কিন্তু  সুনন্দা এখানে কেন? কী চায় সে? স্বামী-সন্তান নিয়ে পুরোদস্তুর সুখী সুগৃহিণী সুনন্দা। খবর নিতে হয় না, বন্ধুবান্ধব দায়িত্ব নিয়ে খবর দেয়।  রুহুল আমিনও জীবনের পাতা উলটে এক্কেবারে ঘষে ঘষে সুনন্দার নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

চারদিক সুনসান। ভরদুপুরগুলি এমনই মৃত্যুর মতো নিঃসঙ্গ চুপচাপ হয়। সুনন্দা উঠানে দাঁড়িয়ে সামনে এগোনোর রাস্তা না পেলে রুহুল আমিন বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। যে নারী সামনে তার, চেহারায় আভিজাত্য। সিঁথির গোড়ায় সাদাকালো চুলের পথ কেটে জ্বলজ্বলে সিঁদুর, গায়ে মচমচে মাড় দেওয়া সুগন্ধি শাড়ি। শরীরের ভারিক্কিতে বয়স আর সুখের মাখামাখি। আঁখিপল্লবের দিকে তাকিয়ে নীরবে ঘরের দরজা দেখিয়ে দিয়ে বের হয়ে যায় রুহুল আমিন।

সুনসান নীরবতা ভেঙে আর্তবিলাপে সুনন্দার সামনে এসে দাঁড়ায় রেবেকা, আপনেরে বড় দেখার শখ ছিল আমার। কী মনে কইরা আইলেন এতদিন পর? মুখস্থের মতো গড়গড় করে বলতে থাকে রেবেকা, মনে মনে কম খুঁজি নাই আপনেরে, যতবার প্রসব বেদনায় হাসপাতাল গেছি, ততবারই আমি আপনেরে স্মরণ করছি। যতবার আমার বুক খালি হইছে, আমি আপনেরে স্মরণ করছি।

– আমাকে? অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যে আকাশ থেকে পড়ে সুনন্দা।

– সে আপনেরে ভুলতে পারে নাই। সে আপনের সাথে দেখা করতে যায় বারবার। আমি আপনেরে একটা কথাই বলতে চাইছি, আমার সন্তানের গায়ে যেন আপনার দীর্ঘশ্বাস না পড়ে। এতদিনে দেখা পেলাম আপনার! এত্তগুলা সব্বোনাশ হওনের পরে? অথচ কী অপেক্ষাই না করছি আপনের জন্য!

মৃত্যুশোকে রেবেকার কণ্ঠে উদ্ভ্রান্ততা, আপনি ওরে ক্ষমা কইরা দেন।  আমার বংশ যে নির্বংশ হয়ে যাইতাছে।

রুহুল আমিনের জীবনে একাধিক দুঃসংবাদ শুনে  সুনন্দা এসেছিল সান্ত্বনা আর সমবেদনা নিয়ে। উল্টো নিজের দিকে তাক করা অভিযোগের তীর দু-হাতে আটকে ধরে নিষ্কৃতি চায় সে,  নির্বিকার স্বরে বলে, আমার তো কোনো রাগ নাই রুহুল আমিনের সঙ্গে, তাই ক্ষমারও প্রশ্ন নাই। আমার সঙ্গে বিয়ের পর কোনোদিন দেখা হয়নি রুহুলের। রুহুল আমিনকে ভুলে গেছি আমি। আমি খুব ভালো আছি। খারাপ থাকলে হয়তো মনে রাখতাম।

তবে? তবে? রুহুল আমিন ঘরে ফিরলে উসকোখুসকো উন্মাদের মতো আচরণ করে রেবেকা। রুহুলের মুখোমুখি দাঁড়ায়, সুনন্দা কইছে, আমার ওপর তার কোনো রাগই নাই। তাইলে ক্যান এমন হইতেছে? আমার ঘর ক্যান শূন্য হইতেছে?

উন্মত্ত রেবেকাকে কী উত্তর দেবে জানে না বেদনাক্লান্ত রুহুল আমিন। সে কেমনে বলে প্রতিবার সন্তান জন্মের সময় ইন্ডিয়া যেত সে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম যেখানে যেখানে যত বাঙাল আছে কোথায় না খুঁজেছে সে জয়রামবাবুর বংশধরদের। শুধু একবার মাফ চাওয়ার জন্য। বংশ যেন নির্বংশ না হয় – এজন্য এতগুলি সন্তান নিয়েছে সে। তন্দ্রাঘোরে পরে যাওয়া শিশুগুলিকে বাঁচানোর জন্য বারবার জয়রামবাবুর সন্তানদের খুঁজেছে।

রুহল আমিনের বাবা তো ঘর, ব্যবসা সব বৃত্তান্ত বিয়ের রাতে ছেলের কাছে সবিস্তারে বলে নিজেকে হালকা করে নিয়েছে। জগদ্দল পাথরের মতো এতদিন যা চেপে ছিল তার একলার বুকে। স্ত্রী, একমাত্র পুত্র কাউকে যা বলতে পারেনি সে। সব দায়িত্ব সেদিন রুহুল আমিনের বুকে চাপিয়ে দিয়ে যেন হাঁফ ছাড়ে রুহুল আমিনের বাপ, আর  তারপর রুহুল আমিনের হাত ধরে অসহায় অনুনয় করে বলে, বংশ নির্বংশ হওয়ার অভিশাপ থেকে যেন রুহুল তার পরিবারকে বাঁচায়। এ-চিন্তাতেই নিজেকে প্রস্তুত করেছে রুহুল আর এভাবেই তার ঘরে সাত সাতখান সন্তান …। কিন্তু … কিন্তু …। কোনো কোনো অপরাধ শোধবোধ করার সুযোগ প্রকৃতি মানুষকে দেয় না। প্রকৃতি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নেয়।