দ্বি-জাতিতত্ত্বের ট্রেন

পার্টিশন শব্দটা কানে আসতেই লাল সাইরেন বেজে উঠলো মগজে। দেশ হারালাম, পতাকা কেড়ে নিল, অতঃপর ট্রেন চলছে। লগবুকে সই করে শরণার্থী হলাম। এখন মুখ চুন করে বসে থাকি শিয়ালদা স্টেশনে। ভিটেমাটি হাতবদল হলো। রাতে ঘুমাতে পারি না, চোখ বুজলেই মা ডাক দেয়! জ্বলে ওঠে তুলসীতলার প্রদীপ, বাড়ির পাশের কুমার নদ, আটাডাঙ্গার বাঁওড়। কাঁচা শৈশবের মতো আদুরে রোদ্দুর। ঘাসের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃষ্টির ফোঁটা। শতবছরের সিঁদুরে আমগাছ। কুড়িয়ে পাওয়া কুলবরই সব ছবির মতো ঝুলে থাকে ফেলানীর কাঁটাতারে।

সবুজ দূর্বায় ডুবে থাকা প্ল্যাটফর্মে বসে থাকে ভাগের মানুষ। মসৃণগতিতে মৃত্যু আসে সাপের ফণা তুলে – আমাদের রিফিউজি নামটা বাঁচিয়ে রাখে উদ্বাস্তু কলোনির রেশন, হলুদ সাইরেনে  দ্বি-জাতিতত্ত্বের ট্রেন কেরি কেটে চলে যায় করাচির দিকে। পার্টিশনে আটকা পড়েছে হতভাগা বাঙাল। ভাজক গুণ ভাগফল সমান ভাজ্যের খেলা চলছে।