না-আসা চিঠি

উনিশশো একাত্তরের ২৪শে মার্চ বেলা এগারোটার দিকে, এক ঘণ্টা পর মাথার ওপরে আসবে চৈত্রের সূর্য, মানুষের চলাফেরায় আতঙ্ক এবং স্বাধীন দেশ পাওয়ার স্বপ্ন, ফারহানা, পরনে ছিল তাঁতের শাড়ি, শান্তিনগর পোস্ট অফিসের বাক্সে এ-ফোর সাইজের কষি টানা কোড়া কাগজে, সাদা কাগজে লিখতে গেলে ওর লেখা লাইনের শেষে গিয়ে চলে যায় ওপরের দিকে, কখনো নিচে, নিজের লেখার বাস্তবমেজাজের চড়াই-উতরাই সে মেনে নিয়েছে, লেখা দুই পৃষ্ঠার একটা চিঠি ফেললো। চিঠির গন্তব্য পাবনার রাধানগর। প্রাপক : খায়রুল আলম।  

পোস্ট অফিস থেকে বের হয়ে বাঁয়ে ঘুরে মালিবাগের মোড়ে আসতেই ফারহানার চোখে পড়ে পাকসেনাদের তিনটি জিপ, রাজারবাগের দিক থেকে আসছিল, দ্রুত চলে গেল মগবাজারের দিকে, তার পরেই পাকমোটর। সেখান থেকে ডানে সোজা চলে গেলে পড়বে ফার্মগেট। কিলোমিটারের কাছাকাছি পথ পার হলে ক্যান্টনমেন্ট। খাকি পোশাক। মারণাস্ত্র¿।

মোড়ের আশপাশের রাস্তায় দাঁড়ানো এবং চলাচল করা মানুষের ছোট ছোট ভিড়ে জিপের চাকা থেকে উড়ে আসা ধুলো লাগে। কেউ কেউ চোখ মোছে। চোখে-মুখে স্বপ্ন, ভয়, ঘৃণা। কারো দাঁত দাঁতে কামড়ায়। দু-একজন অস্ফুট স্বরে বললো, ‘হারামজাদারা।’ জিপে বসে থাকা পাকসেনাদের হাত রাইফেলে। ঠান্ডা দৃষ্টি মাপছে পথচারীদের। তারা জানে, আগামীকাল রাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, রাজারবাগ এবং পিলখানাসহ ঢাকা শহরের কোথায় কোথায় আক্রমণ করবে। বন্দুকের বিচারেই মানুষকে হত্যা করে, অনেক জায়গায় আগুন দিয়ে বোঝাবে : বান্চোত, আজাদি কিয়োঁ চাহতে হো তুম লোগ?

মালিবাগের ভাবি আইসক্রিম ফ্যাক্টরির পেছনে বাসায় ফেরার পর একটা দৈনিক কাগজের সাংবাদিক বড়ভাই শিহাব রহমান, ভাবি সুলতানা আর মা প্রায় একসঙ্গে ফারহানাকে বললো, ‘কোথায় গিয়েছিলি?’ 

ইচ্ছে হয়েছিল বলে, কতদিন এই বাসা থেকে শেখ মুজিবের মুক্তির জন্যে, ‘ঢাকা না পিন্ডি’ বলতে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে কত মিছিলে গেছি, যেতেও দিয়েছ, তখন তো কিছু বলোনি। এখন বাইরে যাওয়ার কথা বললে, তোমরা বলবে, অবস্থা খুব খারাপ। বাইরে যাবি না। কখন আর্মিরা গুলি করে কে জানে?

প্রশ্ন করার সময় শিহাবের গলাটা একটু জোরে শোনা গেছে। তখন আইসক্রিমঅলা গলিতে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছিল,  ‘আইসক্রিম, আইসক্রিম।’

ভাবি আইসক্রিমের টিনের বাক্সের ওপর শিল্পীর কাঁচা হাতের আঁকা ছবি : নতুন বউ, মাথায় ঘন কালো চুল। ওপরে লাল কাতানের ঘোমটা। কপালে লাল টিপ। লাল লিপস্টিক লাগানো দুটো হাসি হাসি ঠোঁটের সামনে, সোনার চুড়ি পরা হাতের তর্জনী ও বুড়ো আঙুলে ধরা হলুদ রঙের আইসক্রিম। চোখেমুখে উপভোগের আভা। 

প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আইসক্রিমঅলার ডাক কানে আসতেই ফারহানা স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়, ‘আমি আর পাশের বাড়ির ফরিদা আইসক্রিম বানানো দেখছিলাম।’

কীভাবে আইসক্রিম বানায় ফারহানার কাছে কেউ জানতে চাইলে সে বলতে পারবে না। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির সামনে দিয়ে ফারহানা দিনে কতবার যাতায়াত করে, সে-হিসাব সে বলতে পারবে না। কখনো তার কৌতূহল হয়নি আইসক্রিম কীভাবে বানায়, তা দেখার।

ভাই, ভাবি ও মায়ের কারো মনেই এলো না যে, আইসক্রিমের ফ্যাক্টরি তিনদিন আগে বন্ধ হয়ে গেছে। 

ফারহানা যাওয়ার আগে তার ভাবিকে বলেছিল কেন বাইরে যাচ্ছে। ভাই ও মায়ের সামনে ফারহানার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে না-জানার যে-অভিনয়-ভাব ভাবি করলো তাতে ফারহানা খুব খুশি হয়েছে।

শিহাবের সন্দেহ হয়, সাংবাদিকদের সন্দেহ করার প্রবণতা বেশি থাকে, সাংবাদিকরা প্রকাশ্যে চলাফেরা করা গোয়েন্দা, পরে সুলতানাকে জিজ্ঞেসও করে। বাইরে যাওয়ার কারণ জেনে শিহাব হাসে। হাসির সময় তার মুখের ওপর ও নিচের পাটির হলদেটে কয়টা দাঁত, সিগারেটের ধোঁয়ার ফল, যত্ন করে কাটা গোঁফের নিচে দেখা যায়।

একাত্তরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের দিকে হবে, শিহাব যাচ্ছিল প্রেসক্লাবে, মৌচাক মোড়ে, তখন মৌচাকের কেবল একটা ছাদ হয়েছে, সামনে গোঁসাই বাড়ির কয়েকটা নারকেল ও আমগাছের পাতায় রোদ ছিল, ওই ছাদে ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ায়, আশপাশের ছাদ ও বারান্দা থেকে মেয়েরা দেখে, শুধু ঘুড়ি ওড়ানোই দেখে না, মিছিল যাওয়া, সৈনিক ভরা ট্রাকও দেখে। ফারহানাকে একটা রিকশা থেকে নামতে দেখেছিল শিহাব। রিকশায় বসেছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও গোঁফঅলা এক তরুণ, হাতে ছিল জ¦লন্ত সিগারেট। সুলতানাকে রাতে, ‘ফারহানা কি প্রেম করছে?’ প্রশ্ন করে শিহাব। সুলতানা হাসে। ‘ওকে জিজ্ঞেস করো।’

‘ছেলেটা কী করে। নাম কি খায়রুল?’

খায়রুল ইতিহাসের ছাত্র। এমএ পড়ছে। সাবসিডিয়ারি ছিল দর্শন ও ইংরেজি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি। ছাত্র মধ্যমানের। রাজনীতি করে। বামপন্থী। বন্ধুদের বলে, ‘আমি মিডিয়াহলিক।’ ফারহানাকে বলেছে, ‘তুমিও জানো সিভিল ওয়ার শুরু হতে পারে, পশ্চিম পাকিস্তান একটা মরণ কামড় দেবেই, আমরা যুদ্ধ করবো।’ 

শিহাব হিসাব করে, ফারহানার সামনে অনার্স পরীক্ষা। বিষয় সমাজবিজ্ঞান। সাবসিডিয়ারি দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ছাত্রী ভালো। ঢাকা ইউনিভার্সিটি। বোনের পড়ার টেবিলে দেখেছে হুমায়ুন কবিরের মার্কসবাদ। বইটার তৃতীয় পৃষ্ঠায় লেখা : খায়রুল। নিচে তারিখ : ৩/১১/১৯৭০। শিহাবের মনে হয়েছিল, তার বোনকে কোনো সহপাঠী পড়তে দিয়েছে। সাংবাদিকের গোয়েন্দাবুদ্ধি তখন কাজ করেনি।  

দুই

জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবি গুলিস্তান হলে ফারহানা ও খায়রুল একসঙ্গে দেখেছিল। হল থেকে বের হয়ে দুই আনার চিনেবাদাম কিনেছিল খায়রুল। বসবে পল্টন ময়দানে। এই ময়দান তখন রাজনৈতিক মিটিংয়ে প্রায় প্রতি রাতদিন মানুষের ভিড়ে জেগে থাকে। মিটিং শেষে সাধারণ মানুষ

 জটলা বেঁধে আলোচনা করে, তর্ক করে। ইয়াহিয়া, ভুট্টো আর পাকিস্তানের বন্ধু চীন ও আমেরিকা কী ষড়যন্ত্র করছে, কে জানে? শেখ মুজিব ও ভাসানী যা যা বলছেন, করছেন এবং ছাত্রনেতারা যা যা বলছেন ও করছেন, সোনার বাংলা গড়া নিয়ে যত আশা নেতারা দেখাচ্ছেন, তার চুলচেরা ব্যাখ্যা করতেই থাকে এবং কথার মাঝখনে কোনো একজন একটা সেøাগান মন্ত্রের মতো বলে : ‘ঢাকা না পিন্ডি? ঢাকা ঢাকা। জয় বাংলা।’

গুলিস্তান ও নাজ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যতবার ওরা গেছে, সামনের কামানটার নল সিনেমা হলের বুকের ওপর আটকানো নায়ক-নায়িকার ছবি, মানে মানুষের দিকে, দেখে অনেক কথার মধ্যে অন্তত একবার খায়রুল বা ফারহানা বলেছে, ‘যুদ্ধ ও হত্যার ইতিহাস এবং গর্ব, দেখছে মানুষ আর সিনেমার ব্যানার।’ 

খোসা ভেঙে বাদামের দানা ফারহানার হাতে দিতে দিতে জীবন থেকে নেয়া ছবির বিষয় নিয়ে কথা বলার মধ্যে খায়রুল কয়েকবার ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গুনগুন করে গেয়ে এবং ‘শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কি ছেড়ে দেবে? স্বাধিকারের আন্দোলন কোন দিকে যাচ্ছে? মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামের দালালরা পাকিস্তানকে কি ভাঙতে দেবে?’ বলেছিল।

তিন

উনিশশো ঊনসত্তরের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহিদ মিনারে সকালবেলা ফুল দেওয়ার সময় খায়রুলের সঙ্গে ফারহানার পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকে একাত্তরের ১৮ই মার্চের মধ্যে খায়রুল ও ফারহানা বন্ধুদের সঙ্গে বা কখনো দুজন মধুর ক্যান্টিনে, অনেক ছাত্রছাত্রীর উত্তেজিত কথা ও তর্ক-বিতর্কের মধ্যে বসে বলাবলি করেছে, খুঁজেছে উত্তর : দেশের অবস্থা, বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? বাংলাদেশের পতাকা, সূর্যের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র। স্বাধীনতা পাওয়ার স্বপ্ন। ৭ই মার্চের বক্তৃতা। সামরিক শাসক মদ্যপ ইয়াহিয়ার সঙ্গে মিটিংয়ের ফলাফল কী হবে? পাকিস্তান তো চালায় সামরিক বাহিনী। পাঞ্জাবিরা বাঙালির শাসন কি মানবে? চীন ও আমেরিকার ভূমিকা। ভুট্টোর রাজনৈতিক কৌশল। পাকিস্তান জাতীয় লীগের আতাউর রহমান ও শাহ আজিজ কোন ষড়যন্ত্র করছেন? ভারত কী করবে? মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কী কী হতে পারে? রাতে মহল্লায় মহল্লায় তরুণদের পাহারা। রাইফেল নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্যারেড। পল্টনে বিশাল জনসভায় ভাসানীর বলা, ‘শেখ মুজিবের নির্দেশিত ২৫শে মার্চের মধ্যে কোনো কিছু না করা হলে আমি শেখ মুজিবের সাথে মিলে ১৯৫২ সালের মতো আন্দোলন গড়ে তুলবো।’ এবং ‘লাকুম দীনকুম অলইয়া দ্বীন’- বলার দু-একটা কথার পর বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নাও।’

‘আরবি কথাটির অর্থ – তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’ – বলে খায়রুল বলতো, ‘ওই ধর্ম শব্দটির অর্থ ভাসানী বুঝিয়েছেন স্বাধীনতা। কারণ পরের কথাটি মনে রাখতে হবে, পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নাও।’

দেশ, রাজনীতি, স্বাধীনতা, ভবিষ্যৎ, স্বাধীন দেশের আদর্শ, বেঁচে থাকার পথ – এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক কথা, তর্ক বলা ও শোনার ভেতরেই দুজন পরস্পরের জন্য তৈরি করে নিচ্ছিল একটা আস্থার জায়গা, যা ফারহানা ও খায়রুলের আগামী জীবনের যৌথ-যাপনের লক্ষ্য-ভিত্তি হবে।      

‘সময়ের কথা, পরিবর্তনের ধারা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে না দেখলে মানুষের সম্পর্কের স্বপ্ন আর প্রেমকে উপলব্ধি করা যায় না। মনে আছে, তোমাকে একদিন প্লেটোর একটা কথা বলেছিলাম, তা হলো : ‘প্রেম হলো সামগ্রিকতার বাসনা ও অন্বেষণ।’ সামগ্রিকতা শব্দটি খুবই অর্থবহ।’ খায়রুল একবার পাবনা থেকে ফারহানাকে চিঠিতে লিখেছিল।

১৮ই মার্চের বিকালে খায়রুল ও ফারহানা মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ বসেছিল টিএসসিতে। বেশি কথা হয়নি। পরদিন খায়রুল চলে যাবে পাবনায়। খবর এসেছে, মা খুব অসুস্থ। দুদিন পাবনায় থেকে ঢাকায় চলে আসার কথা ছিল। ‘পাবনায় গিয়ে তোমাকে চিঠি দেব’, বলেছিল খায়রুল।

মার্চের ২১ তারিখে পাবনা থেকে খায়রুল দুই পৃষ্ঠার একটা চিঠি, হাতের লেখা বাঁকা নয়, পোস্ট করে। প্রাপক ফারহানা আকতার, মালিবাগ, ঢাকা।

চার

২৩শে মার্চের মধ্যরাত ও পরদিনের সকাল ১০টা পর্যন্ত ফারহানা চিঠিটা লিখেছিল। চিঠির শেষে ফারহানা ও খায়রুল কখনো ইতি শব্দটি লিখতো না।

‘প্রিয় আমার, সত্য আমার’

ওপরের চারটি শব্দ লেখার পর বারবার পড়েছিল ফারহানা।

‘প্রিয়তা বদলায়। সত্যের হিসাব ব্যক্তির সততার ওপর নির্ভরশীল। অবশ্য সত্যকে বহন করা খুবই কঠিন কাজ’, কথাগুলি খায়রুলের।

যে-কোনো কথা ও বিষয়ের ওপর খায়রুল একটা-দুটো গল্প জুড়ে দিয়ে ওই কথা ও বিষয়কে এমনভাবে ডান হাত তুলে, বাম হাতের তর্জনী ও বুড়ো আঙুল ডলতে ডলতে বলতে থাকে, যেন যা বলছে তা অভিজ্ঞতা থেকেই বলছে। যেন কদিন আগেই সামনে ঘটেছিল। ফারহানা পরে ‘কোথায় ঘটলো?’ জিজ্ঞেস করলে, একটা হাসি দিয়ে বলতো, ‘অর্ধেক বানানো, অর্ধেক সত্য। আমাদের জীবনের মতো। যারা শুনছিল তারা কিন্তু আনন্দ পেয়েছে। আর শোনো, সত্য কখনো নিন্দা নয়। আর নতুন কথা না বানালে কথা মরে যায়।’ 

‘তুমি ভালো আছো?

আশা করি খালাম্মা এখন ভালো আছেন।

বলেছিলে, দুদিন পরই চলে আসবে। যা অবস্থা, মনে হচ্ছে আসতে পারবে না। আমার ভয় করছে। আর যখনই বিভিন্ন সময়ে আমি ভয় ও আতঙ্কের কথা তোমাকে বলেছি, তুমি কখনো হেসে, কখনো সিরিয়াস হয়ে বলেছো, ‘ভয় ও আতঙ্ক জীবনের অংশ। যেমন ভালোবাসা, দূরে চলে যাওয়া, হত্যার সাক্ষী হওয়া, নদীভাঙন দেখা। চলো এখন – আমার সোনার বাংলা…।’

খায়রুল আশাবাদী মানুষ। যে-কোনো খারাপ অবস্থায় সে খুব ঠান্ডা মাথায় বলে, এই ঘটনা জীবনের অংশ। এই মুহূর্তে সব থেকে জরুরি কাজ হলো, জীবনকে সামনে রাখা। যার মাথায় গুলি লাগলো, মরে গেল, সে তো আর ফিরে আসছে না, তা হলে যা তখন করণীয় তাই করতে হবে।

ওই ‘তাই করতে হবে’র মধ্যে কী কী করণীয় তার চটজলদি তালিকা খায়রুল করতো। অনেকবার ফারহানা খায়রুলকে বলেছে, ‘তোমার মধ্যে একরকমের নিষ্ঠুরতা আছে।’ খায়রুল হেসে হ্যামলেটের সংলাপ বলেছে, ‘আই মাস্ট বি ক্রুয়েল অনলি টু বি কাইন্ড।’

অনেকদিন ফারহানা খায়রুলের ওইরকম কথায় বিরক্ত হয়েছে। বলতে চেয়েও বলেনি, তুমি জীবন ও বাস্তবতাকে যেভাবে দেখো, তা অনেকের জন্যে ভারী বোঝা।

‘শিহাব ভাই কদিন ধরেই বলছেন, যে-কোনো দিন পাকসেনারা অ্যাটাক করবে, হত্যা করবে, স্বাধীনতার সংগ্রাম কাকে বলে রক্তে রক্তে আর হাড়ে হাড়ে বোঝাবে।’ চিঠির এই লাইনের নিচে ফারহানা কালো কালিতেই দুবার রেখা টেনেছিল।

‘আগে কখনো শিহাব ভাই তোমার কথা আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। দুদিন আগে বিকালে ভাবি আর ভাইয়ের সামনে আমি চায়ের কাপ রাখার পর ভাই তোমার কথা জিজ্ঞেস করলো। প্রশ্ন করে আমার দিকে তাকায়। আমার মুখের ভাব বুঝতে চেষ্টা করছিল। ভাবি কিছু বলেনি। ভাই দৃষ্টি ঘোরায় পাশের টেবিলে রাখা ইত্তেফাক, সংবাদ ও দৈনিক পাকিস্তানের ওপর। সব কাগজের প্রধান শিরোনাম আর খবর কী হতে পারে তুমি জানো। আমি বলেছি, তুমি পাবনায় গেছো, তোমার মায়ের অসুখ।

‘তুমি কি পাবনায় প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়তে পারছো? কাগজ না পড়লে তুমি তো দেশে আর পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক কাণ্ডকারখানা নিয়ে, মানুষের বাঁচার অবস্থার সঙ্গে নিজের অবস্থার অবস্থানটা কোথায়, তা চিন্তা করতে পারো না। তুমি বলো, বিবিসি আমাদের দেশ ও রাজনীতি নিয়ে যে-সব খবর বলে তার থেকে আমরা বেশি জানি। নিজেকে বলো, আমি মিডিয়াহলিক মানুষ। খবর ছাড়া বেঁচে থাকা গাধার বেঁচে থাকা।

‘তুমি ঢাকায় থাকলে বঙ্গবন্ধুর একটা কথা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলতে পারতাম।  ‘জয়বাংলা’ সেøাগানের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর কাছে, তিনি বলেন, শেষ নিশ^াস ত্যাগের সময়েও তিনি কলেমা পাঠের সাথে জয় বাংলা উচ্চারণ করবেন।

‘আমি নিশ্চিত, তুমি বলতে, বঙ্গবন্ধুর ওই কথার মধ্যে কলেমা আর জয় বাংলা একাকার, যেন দুটোই জীবনের জন্যে ধর্মীয় উচ্চারণ। মোল্লারা বঙ্গবন্ধুর কথার মধ্যে ধর্মকে অবমাননা করার ব্যাপার খোঁজেনি। খুঁজলেও কেউ তাদের পাত্তা দিত না। অবশ্য মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রে তৎপর। দেশ স্বাধীন হলে ভবিষ্যতেও ষড়যন্ত্র করবে।  

‘এখন অনেক রাত। মৌচাকের সামনে দিয়ে হর্ন বাজাতে বাজাতে, মনে হয়, পাকসেনাদের গাড়ি যাচ্ছে। ভাবি আইসক্রিমের সামনে কয়টা কুকুর খুব ডাকছে। আমার সামনের জানালা খোলা। আমলকী গাছে কাকের বাসায় দুটো কাক পাখা ঝাপটালো।

খুব ঘুম পাচ্ছে।

ভোরে উঠে আবার লিখবো।’

ফারহানা প্রায় নিশ্চিত চিঠির শেষ অংশ যখন খায়রুল পড়বে তখন চিঠির মার্জিনে লিখবে, ‘ভবিষ্যতে তুমি লেখক হতে পারবে। কারণ, তোমার চিঠিতে প্রকৃতি, মানুষ ও নিঃসঙ্গতা একাকার।’

পাঁচ

খায়রুলের চিঠি। চিঠির শেষে ‘তোমার চির সত্য’ শব্দ তিনটির নিচে লেখা তারিখ : ২১/৩/১৯৭১

প্রাপক, ফারহানা আকতার

মালিবাগ, ঢাকা।

হাতে হাত রাখা সত্য আমার।

আশা করি তুমি, তোমরা ভালো আছো।

মা এখন অনেক সুস্থ। 

দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরবো। মা যেতে দেবেন কি না, বুঝতে পারছি না।

আমার সঙ্গে চেনাজানা যারই দেখা হচ্ছে, প্রশ্ন একটাই, ঢাকার অবস্থা কী? শেখ মুজিব কী করবেন? আমি বলেছি, ৭ই মার্চের ভাষণের তিনটি আসল কথা, মূল কথা, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’, আর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতে পারে। ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না’ কথাটার মধ্যে যে-বিদ্রোহ আছে তার চেহারা আমরা ৭ই মার্চে দেখেছি।

একটা সংগ্রাম, আন্দোলন সাধারণ মানুষদের, যারা আগে কখনো রাজনীতি করেনি, তারা কত দ্রুত দেশ, অধিকার, চাওয়া-পাওয়া, কী হবে, স্বাধীন হলে কি সোনার বাংলা হবে? – এইসব প্রশ্ন করছে, উত্তর খুঁজছে। চোখেমুখে স্বপ্ন আর ভয় একাকার। ওই দুটো যখন একসঙ্গে মেশে মানুষের চোখমুখ অন্যরকম হয়ে যায়। কী যে দোলাচল!

আমি যতটা পারছি তাদের বলছি। ব্যাখা করছি। ‘ব্যাখ্যা’ বানান ভুল করলাম। অস্থিরতার কারণে হতে পারে।  তারা মনে করছে, ঢাকা থেকে এসেছি, বড় বড় নেতার কথা সামনে থেকে শুনেছি, আমরা তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেছি, রাজনীতি করি, ফলে যা বলবো তার মধ্যে কিছু সত্য পাবে। আবার এমনও হচ্ছে, কেউ কেউ আমার কথা শুনে বলছে, তুমি একটু বেশি আশাবাদী, দেশ স্বাধীন হলে কী হয় দেখো। সব শত্রু কি মরে যাবে?

যারা এরকম বলছে, তাদের কেবল আশার কথাই বলেছি। একটা দেশ স্বাধীন হলে, অনেক কিছু হতে পারে। দরকার কঠিন নেতৃত্ব। ন্যায়ের পথে শাসন। কিন্তু অনেক সময় উল্টোটাও দেখা যায়। একটা সুবিধাবাদী শ্রেণি গড়ে ওঠে। দেশকে ধ্বংস করে, লুট করে। পাকিস্তানে কোটিপতি বাইশ পরিবার, স্বাধীন বাংলায় তা হতে দেওয়া যাবে না।

তোমার সেলিমের কথা মনে আছে? এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র। চারু মজুমদারের ভক্ত। মধুর ক্যান্টিনে তোমার সঙ্গে আমি ওর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। গতকাল অনেকক্ষণ আমরা কথা বললাম। ওর সঙ্গে ছিল আরো তিনজন। বললো, ‘দেশ স্বাধীন হলে একটা ধনবাদী শ্রেণি গড়ে উঠবে, দেশকে লুট করবে, আমরা এখন যা করছি, তখনো আমাদের কাজ হবে শোষিত আর বঞ্চিতদের নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লব করা।’ 

আমি বললাম, ‘আগে দেশ স্বাধীন হোক।’

আমাদের কথা শুনছিল একজন সাধারণ মানুষ। অনেক কথা শুনে মানুষটা একটা কথা বললো, ‘কথার ইতিহাস কি ঠিক থাকে?’ 

বাড়িতে ফেরার পথে তার কথাটা আমাকে তাড়ায়, উত্তর খুঁজি। ঢাকায় ফিরে তোমার সঙ্গে আলোচনা করবো। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের মৌলিক গঠন এবং অধিকারের সমবণ্টনে  ইতিহাস কি শিক্ষা দেয়?

ছয়

ফারহানার চিঠির দ্বিতীয় পৃষ্ঠা :

রাতে ঘুম হলো না। ভোরে উঠে পুব দিকের জানালা খুলতেই দেখি নিচে একটা মরা বেড়াল। কয়টা কাক বেড়ালটাকে ঠোকড়াচ্ছে। জানালা বন্ধ করে দিলাম।

মৌচাকের সামনে দিয়ে কয়টা জিপ একসঙ্গে খুব জোরে হর্ন বাজাতে বাজাতে চলে গেল। মিলিটারিদের জিপই হবে। হর্নের আওয়াজের মধ্যেই ফজরের আজান হচ্ছিল। 

গতকাল রাতে শিহাবভাই বলছিল, অবস্থা খুব খারাপ। যে-কোনোদিন টিক্কা খান হত্যা শুরু করবে। 

তুমি ঢাকায় থাকলে, যদি যুদ্ধ শুরু হয়, আমি ভাইকে বলে তোমার সঙ্গে যুদ্ধে যাবো।

তুমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে জানো, যুদ্ধের সময় সৈনিকরা কী করে। সোফিয়া লোরেনের অভিনয় করা টু উইম্যান ছবি তার সাক্ষী।

গতরাতে আমি আধো তন্দ্রার ভেতরে একটা স্বপ্ন নয়, তবে স্বপ্ন ও বাস্তবতার মধ্যে পড়লে যা হয়, দেখলাম, পাকিস্তানের অনেক সৈনিক আমার চারপাশে। ওরা সব দাঁত বের করে হাসছিল। হতে পারে, তোমার কাছে শোনা সেকেন্ড ওয়ার্ল্ডওয়ারে জার্মান আর জাপানি সৈনিকরা কত কত ধর্ষণ করেছিল তার সত্য ইতিহাসের প্রভাব পড়েছিল আমার চিন্তায়। ফলে ওই স্বপ্ন।

২২শে মার্চে প্রতিটি খবরের কাগজে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ছাপা হয়েছে। মা পতাকা দেখে নফল নামাজ পড়লো।

তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ, ২৩ তারিখে রেডিওতে-টিভিতে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাওয়া হলো। তাছাড়া বাংলাদেশের নতুন পতাকা অনেক বাড়ির মাথায় উড়েছে সঙ্গে কালো পতাকা প্রদর্শন। মৌচাকের সামনে অনেক মানুষ পাকিস্তানের চাঁদতারা পতাকা ছিঁড়েছে। জিন্নার ছবিও পোড়ালো। আর সেøাগান, ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা।’ পাবনায় কি এসব হচ্ছে?

আমি জানি না, দেশ স্বাধীন হলে আমাদের সোনার বাংলার স্বপ্নকে আমরা ছুঁতে পারবো কি না। তুমি অবশ্য খুব আশাবাদী মানুষ।

মনে পড়ছে, একদিন বিকালে আমরা সাত-আটজন, তুমিও ছিলে, গেছি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কাছে, আমাদের থেকে বয়সে বেশি বড় ছিলেন না, তাঁকে তরুণরা গুরু বলে, চোখেমুখ রাজনৈতিক জ্ঞানে ভরপুর, কথাও বলেন সুন্দর করে, আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাও তাঁর কথাকে খুব গুরুত্ব দেন। ছাত্রদের ইশতেহারে কী কী লেখা হবে তাঁর নির্দেশনায় লেখা হতো।

তিনি দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। পরদিন মধুর ক্যান্টিনে আমরা তাঁর কাছে শোনা কথা নিয়ে অনেক আলোচনা ও তর্ক করেছিলাম।

তুমি বলেছিলে, দেশ নিয়ে ওনার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আশা জাগায়। একটা দেশকে ধ্বংস করতে পারে রাজনীতিবিদ, আমলাগোষ্ঠী, ব্যবসায়ী, ধর্মান্ধ ও সুবিধাবাদীরা – কথাগুলি নতুন নয়। তবে সত্য।  

হয়তো এই চিঠি তোমার হাতে যাওয়ার আগেই তুমি ঢাকায় ফিরে আসবে। যাওয়ার আগে বলেছিলে, ঢাকায় ফিরেই আমাদের বাসায় আসবে। আমি গত দুদিন থেকে শুধু মনে করেছি, দরজায় তুমি টোকা দিচ্ছ।

গতকাল থেকে জ¦র-জ¦র লাগছে। বাসায় কাউকে বলিনি। ভালো হয়ে যাবো।

তুমি সাবধানে থেকো। 

ফারহানা কেবল তোমার।      

ছয়

খায়রুলের চিঠির দ্বিতীয় পৃষ্ঠা :

খামটা বন্ধ করার আগে মনে হলো, এই চিঠি কি তুমি পাবে? যে-অসহযোগ চলছে তার মধ্যে ডাকঘরও তো বন্ধ। তুমি যদি চিঠি লেখো সেটা আসবে বলে মনে হয় না। হতে পারে, বিশেষ হুকুমে ডাক চলাচল এবং সরকারি কাজ ঠিক রেখে পাক-সামরিক বাহিনী বিশ^কে দেখাতে চাইবে, অবস্থা স্বাভাবিক। হতে পারে, এক বা দুই সপ্তাহ পরে চিঠিটা পাবে। 

আমি তোমাকে চিঠিতে যা যা লিখেছি, তুমি আমাকে যা যা লিখেছ তা দুজন পড়তে না পারলে তোমার যেমন খারাপ লাগবে, আমারও।

আমি প্রায় নিশ্চিত, তুমি এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছো, যেখানে আমাদের জীবন-যাপন হবে মানবিক এবং সকলের অধিকারপূর্ণ। তুমি জানো, মানবিকতা বলতে আমি কী বলতে চাই। আমরা সবাই মিলে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলবো।

মাকে বলেছি, ২৫ তারিখ সকালে ঢাকায় যাবো। মা রাজি হচ্ছে না।

তোমার মুখ সুন্দর করে আঁকতে পারলাম না। চোখের সামনে গোলাপটা ভালোই এঁকেছি মনে হচ্ছে।

পৃথিবীতে খায়রুল কেবল ফারহানার।

সাত

বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে কয়েকটি বিশেষ অনুমান :

২৫শে মার্চ সকালে খায়রুল ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল কি না অথবা পরে পাবনার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়ে শহিদ হয়েছিল কি না, সে-ব্যাপারে খোঁজ নিতে ফারহানা তার ভাবিকে দিয়ে ভাই শিহাবকে অনুরোধ করাতে পারে।

সুলতানা, ফারহানা ও মাকে নিয়ে একাত্তরের এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে শিহাব ঢাকা থেকে বগুড়াতে যাওয়ার পথে নগরবাড়িতে পাকসেনারা সুলতানা ও ফারহানাকে রেখে শিহাব ও তার মাকে গুলি করে যমুনায় ফেলে দিতে পারে।

কাঁধে স্টেনগান। খায়রুল পাবনায় ফিরে নিজেদের লুট হওয়া বাড়িতে ফারহানার চিঠি খুঁজতে পারে। আসবে ঢাকায়। মালিবাগে যাবে। পাবে না ফারহানাকে। তার মনে হতে পারে, বগুড়া থেকে ফেরেনি। খায়রুল বগুড়ায় যাবে কি না ভাবতে থাকে। ‘আমি যুদ্ধ থেকে ফিরেছি। আবার আসবো। নিচের ঠিকানায় থাকবো। খায়রুল। ২৮/১২/১৯৭১।’ চিরকুট লিখে দরজার নিচ দিয়ে রেখে যেতে পারে।

যুদ্ধে কোনোরকম ক্ষতিই ফারহানাদের হয়নি। একাত্তরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ফারহানা তার ভাবি ও মায়ের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে বাসার দরজা খোলার পরেই দরজার নিচে খায়রুলের চিঠি খুঁজবে। এবং অপেক্ষা করবে দরজায় কখন খায়রুল কড়া নাড়বে।

আট

খবরের কাগজে কখনো কখনো সংবাদ ছাপা হয় : ষাট বছর পর দুজনের ঠিকানায় চিঠি গেল। দুজনই প্রয়াত।