পোকাজন্ম 

পোকা, তোমার আগুন মাখার ঝোঁক!

পাখি, তোমার তীরের প্রতি নেশা!

ফুল প্রায়শই আত্মঘাতী হয়

এবং স্বপ্ন, স্বপ্ন সংকট-ঘেঁষা

স্বপ্ন আগুন, আমি পোকা হয়ে যাই

স্বপ্ন পাখি, তীর আমাকে তাক করে

স্বপ্ন ফুল, ঘ্রাণের প্রতি দুর্বলতা ছিল

স্বপ্ন নীল, আক্রান্ত একপ্রকার জ্বরে

আমার এমন জীবনধারা দ্যাখো

এক টোকাতেই আকাশে উড়ে যাই

আর বাতাসে ছড়াচ্ছো নিশ্বাস

তাতেই তুমুল পুড়ে পুড়েই যাই

আসে, হাসে মহাফাল্গুন মাস

ভালোবাসা ডাকনাম ধরে ডাকে

তখন কি আর চুপ থাকা সম্ভব

আমাকে আমি রাখতে দেব কাকে?

ভাবতে ভাবতে রাস্তা হাঁটে একা

লোকের ভিড়ে হারিয়ে যায় লোক

কোত্থেকে সেই বাক্য ছুটে আসে –

পোকা, তোমার আগুন মাখার ঝোঁক!

পাখি, তোমার তীরের দিকে নেশা

যা না ঘটার, তাও ঘটতে থাকে

স্বপ্নকে খুব ডাকাত মনে হয়

একলা পেয়ে আমার কিছু রাখে?

সারারাত ধরে আমি বসে থাকি

যেন আমি অসংখ্য সারারাত বসে থাকি

সারারাত একটি কবিতার জন্যে বসে থাকি

যেন আমি অসংখ্য সারারাত বসে থাকি

                        একটি কবিতা লেখার মোহে

যেন বা কোথাও কথা দেওয়া আছে

আমার স্বপ্নের কাছে যদি আমি খুনও হয়ে যাই

তার আগে

একটি ভালোবাসার কবিতা লিখে যেতে হবে

যেন বা একটি ভালোবাসার কবিতা না পেলে

কাঞ্চননগরের মেয়েটি মরেই যাবে

ভালোবাসার অভাবে কেউ মরে গেলে

                            সেই দায় কার?

ভালোবাসার জন্যে কেউ পালিয়ে গেলে

                             সেই দোষ কার?

ভালোবাসার প্রভাবে কেউ সারারাত

নির্ঘুম জানালায় তাকিয়ে থাকলে

                                সেই যন্ত্রণা কার?

যেচে গিয়ে আমি বলব – আমার, আমার?

সেধে গিয়ে আমি বলব – আমার, আমার?

পাতাবাহার, ভালোবাসার জন্যে যে বিষ খায়

পাতাবাহার, নবম শ্রেণিতে উঠেই যে মরে যায়

পাতাবাহার, যে কিশোরী কোনোদিন আর

                                    যুবতী হবে না

তার কবরের দিকে তাকিয়ে যেন বা আমিই

আমাকে প্রশ্ন করি : আত্মহত্যায় দায় কার?

আমার, আমার

আমি আমার বিরুদ্ধে আজ বিচার বসাতে চাই

আমি আমার বিরুদ্ধে আজ থানায় যেতে চাই

                               আদালতে যেতে চাই

কেন না, একদিন

আমিই তো সেই কবিতাটি লিখে রাখতে পারতাম

যার মধ্যে দিগন্তপ্লাবিত ভালোবাসা থাকতে পারত

যার মধ্যে আত্মহত্যা-নিরোধক স্বপ্ন থাকতে পারত

আমি সেই ভালোবাসার কবিতাটি লিখে রাখতাম যদি

দুঃখপ্রাপ্ত, যন্ত্রণাকাতর কোনো কিশোরী হারিয়ে যেত না

আমার মাথার মধ্যেই চলে বিচার-সালিশ

আমার মাথার মধ্যেই আছে থানা-পুলিশ-আদালত

অভিযুক্ত, আমি অভিযুক্ত, যদি আমি

সত্যি সত্যিই একটি ভালোবাসার কবিতা লিখতে পারতাম! 

হাহাকার আছড়ে পড়া ভোর আসত না সেই বাড়িতে

যাদের মেয়েটি শুধু ভালোবাসা সংক্রান্ত আগুনে পুড়ে গেছে

যাদের মেয়েটি গতকালও বেঁচে ছিল, আজ লাশ হয়ে গেছে

এই যে লেখার নামে আমি বসে আছি সারারাত

যেন বা জীবনের যত রাত সব লেখার নামেই আমি

                              বসে থাকা নিয়ে আছি

ভালোবাসায় ভরা একটি কবিতা লিখব বলে বসে আছি

লেখা হয়ে গেলে আমি আমাকে মুক্তি দিতে পারতাম

একটি ভালোবাসার কবিতা লেখা হয়ে গেলে

আমি আমাকে বলতে পারতাম কবি

একটি ভালোবাসার কবিতা লেখা হয়ে গেলে

হাহাকারের বিপরীতে প্রাপ্য হতে পারত মূর্ছনা, ভৈরবীর

ব্যর্থতা কার? চারদিকে এত হাহাকার!

না-পারা আর কার?

আমার, আমার

এদিকে বসন্ত এসে ডাক দিচ্ছে, এসেছি আবার

যেন বা বসন্ত মৌমাছি, গুনগুন করছে, জানাচ্ছে –

লেখো লেখো, সেই ভালোবাসার কবিতাটি লিখে 

তুমি হও অকালপ্রয়াতা কিশোরীর মরণোত্তর বর