বৃহত্ত্বের যূথবদ্ধ মহত্তম শিল্প-প্রকল্প ও প্রদর্শনী

জীবনরক্ষা যখন প্রধান পাথেয় তখন সৃষ্টির আকুলতা হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার জোগাড় হয়। বিগত বছরের মার্চের শেষদিকে হঠাৎ লকডাউনে গৃহবন্দি পৃথিবীর মানুষ! অতিমারি কোভিড-১৯-এর আতংকে তখন আর সবার মতো সৃজনশিল্পীরাও বিভ্রান্ত! এ-সময় বিশ্বব্যাপী আমরা হারিয়েছি লক্ষ লক্ষ মানুষকে। বাংলাদেশের অনেক গুণী প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি! এই দুঃসময়ে উদ্ভ্রান্ত তরুণ শিল্পীসমাজকে সৃজনে ফেরাতে শিল্পী ঢালী আল মামুন ও বিশ্বজিৎ গোস্বামীর নেতৃত্বাধীন বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশন হোম আর্ট প্রজেক্ট নিয়ে অগ্রসর হয় – আট মাস আগে। লকডাউনে ঘরে থেকেই অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে চল্লিশের কমবয়সী তরুণশিল্পীদের আর্ট প্রজেক্ট আহ্বান করা হয়। বৃহত্ত্বের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে শামিল হয়েছেন দেশ-বিদেশের অগ্রজ কয়েকজন শিল্পী, শিল্পতাত্ত্বিক ও একাধিক প্রতিষ্ঠান। বৃহত্ত্বের আহ্বানে অনেক তরুণশিল্পী সাড়া দিয়েছেন। তাঁদের উপস্থাপিত প্রজেক্ট থেকে প্রাথমিক বাছাইকৃতরা তিনজন জুরি – শিল্পী অলক রায়, নিসার হোসেন ও তৈয়বা বেগম লিপির মুখোমুখি হন। গোটা প্রক্রিয়াই অনলাইনে সম্পন্ন হয়!

এই জুরিদের বাছাইকৃত কয়েকজন নবীন চারুশিল্পী তাঁদের প্রজেক্ট মেলে ধরেছেন বেঙ্গল শিল্পালয়ে। স্বাধীনতার মাস মার্চ থেকে এ-আয়োজন চলছে ঢাকার ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের কামরুল হাসান প্রদর্শনালয়ে। চলবে তিন মাসব্যাপী।

শিল্পী ও সমঝদারদের মধ্যে আগ্রহোদ্দীপক বিশেষ এই চারুকলা প্রদর্শনীতে নির্বাচিত শিল্পী হিসেবে অনুদানপ্রাপ্ত  কুড়িজন তরুণ  অংশ নিয়েছেন। তাঁরা হলেন –  আবদুল্লাহ আল বশির, আমিনুল ইসলাম আশিক, আনিকা তাসনিম অনুপ, অসীম হালদার সাগর, দিনার সুলতানা, জয়তু চাকমা, মো. আনিসুল হক, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম রাসেল, মোহাম্মদ মোজাহিদুর রহমান সরকার, রাফাত আহমেদ বাঁধন, রেজাউল করিম, রাকিব আনোয়ার, সাগর সরকার, এসএম রিয়াদ, সোমা সুরভী জান্নাত, শিমুল দত্ত, শিমুল সাহা, নিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সুমন ওয়াহিদ  ও তপন ঘোষ।

এই শিল্পীদের কাজের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন অবধি মেন্টরের ভূমিকায় ছিলেন দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য শিল্পী ও নামি শিল্পতাত্ত্বিকরা। তাঁরা হলেন – অধ্যাপক আবুল মনসুর, নাজলী লায়লা মনসুর, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের লুভা নাহিদ চৌধুরী, আর্ডেন ডায়াজ ও স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, বৃত্তের ট্রাস্টি শিল্পী মাহবুবুর রহমান, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাচ্যশিল্পবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক মিলিয়া বেলি বোস, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্চয়ন ঘোষ, সহকারী অধ্যাপক সৌমিক নন্দী মজুমদার, শিল্পসমালোচক মোস্তফা জামান, প্রজেক্ট ডিরেক্টর নুসরাত মাহমুদ, সৃজনশীল লেখক কাশফিয়া আরিফ। কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ছবিমেলার অন্যতম সংগঠক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মুখ্য কিউরেটর তানজিম ওয়াহাব। এই মেন্টররা প্রধানত অনলাইনে শিল্পীদের কাজ দেখেছেন, মতবিনিময় করেছেন ও পরস্পর অভিজ্ঞতাবিনিময় করেছেন। ফলে ব্যক্তিশিল্পীর সৃজনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অগ্রজের তত্ত্ব আর দর্শনের গভীরতার সংশ্লেষ!

এ এক নতুনতর সামষ্টিক অংশগ্রহণমূলক শিল্পধ্যান! তরুণদের সঙ্গে প্রাগ্রসর চৈতন্যের শিল্পী ও কলারসিকদের আন্তঃযোগাযোগ তাঁদের সৃজনকে ঋদ্ধ করার সুযোগ তৈরির অবকাশ এনে দিয়েছে যেমন, তেমনই মিথস্ক্রিয়ার এই ধারাটিকে সচল রাখার দায়িত্বও বর্তেছে সংগঠকদের ওপর।

কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন বৃহত্ত্বের নির্বাচিত শিল্পীরা – আসি সেই প্রসঙ্গে। দিনারকে দিয়েই শুরু করা যাক।

জয়পুরহাটের মেয়ে দিনার সুলতানা পুতুল চারুশিল্পে পাঠ নিয়েছেন পাশের দেশে। বিশ্বভারতী থেকে চারুশিল্পে স্নাতক সম্মান সম্পন্ন করে তিনি স্নাতকোত্তর করেছেন গুজরাটের বরোদার মহারাজ সোয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে!

পুতুল একেবারে সাধারণ ও সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে শিল্প সৃজন করেন। মাটি, বাঁশের সরু বেতি, পাটি দিয়ে তৈরি গৃহস্থালির তৈজসের নানা উপকরণ ও এর অনুরূপ জ্যামিতিক ফর্ম তৈরি করে সভ্যতার আবর্তন ও এসব সামগ্রীর রিচুয়ালকে নিজের প্রকল্পে মেলে ধরেছেন সমকালীন পরিপ্রেক্ষিতে।

ঝিনাইদহের ছেলে মো. ইমতিয়াজ ইসলাম রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের স্নাতকোত্তর। তিনি চলমান সময়কে অবলোকন করেন ও নিজের অভিজ্ঞতার খসড়া অঙ্কন ও লেখনীতে তুলে ধরেন। বিশাল আকারের তিনটি তুলট কাগজে দিনলিপির আদলে তাঁর যাপিত জীবনের নানা ঘটনাকে বিধৃত করেছেন। ঘরের বাইরে যাওয়া মাস্কপরা লোকজন, বাজার-সদাই, গালগল্পে মেতে ওঠা মানুষ, অনলাইনে নিজের ক্লাস নেওয়া, নালন্দা বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রতিকৃতি,  বাড়িবদলসহ নগরজীবনের অসংখ্য টুকিটাকি তাঁর চিত্রপটে বয়ান করেছেন। দিনলিপির এই শিল্পিত প্রয়াস দর্শকমনকে স্পর্শ করেছে।

ঢাকার মেয়ে সোমা সুরভী জান্নাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতক; স্নাতকোত্তর করেছেন বিশ্বভারতী থেকে। তাঁর চিত্রকর্ম ও স্থাপনায় নিজের ভ্রমণ, পরিবেশ ও দেখার অভিজ্ঞতা তিনি বিধৃত করেন প্রযুক্তির সাহায্যে। চারটি বাক্সের ভেতরে গ্লাস ভিউয়ার দিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি গাছের শুকনো পাতা, ঘাস, ধান, চাল প্রভৃতি। এতে সাধারণ দ্রব্যাদিকে অভিনব উপায়ে দেখানোয় একপ্রকার চমক আছে!

ঝালকাঠির ছেলে অসীম হালদার সাগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। সিরামিক্সকে তিনি ভাস্কর্যের মতো প্রয়োগ করেন। বর্তমানের কোভিড অতিমারিতে আহার্য দিয়ে অসহায় মানুষকে বাঁচানোর প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি কমিউনিটি মিলের ভাস্কর্য-স্থাপনা করে কঠিন সময়কে আমাদের সামনে সংবেদনশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

মো. আনিসুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্পে স্নাতকোত্তর করার পর গণচীনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট করেছেন। এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত তাঁর শিল্পকর্মের শিরোনাম হচ্ছে – ডাইমেনশন অব হাঙ্গার ২০২০। ঝোলানো সাতটি লম্বা পাতলা ও স্বচ্ছ টিস্যু কাপড়ের নিচের দিকে কাপড়ের ভেতরে সিরামিক পাত্র। তাতে নারী-পুরুষ ও প্রাণীর ক্ষুধার্ত অবয়বের ছবি।

মোহাম্মদ মোজাহিদুর রহমান সরকার নরসিংদীর ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। মানুষে মানুষে বিরোধ, যুদ্ধের বিপক্ষে তাঁর  শিল্পিত অবস্থানকে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলে দাবার ছকে তুলে ধরেছেন। এতে দাবার ঘুঁটি রূপে ব্যবহৃত হয়েছে মানুষ ও অন্যান্য কিম্ভুত প্রাণী-অবয়ব!

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ছেলে জয়তু চাকমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর। সাদা কাপড়ের ওপর কাঁথার মতো তিনি সেলাই করে নানারকম ইমেজ তৈরি করেছেন। তাতে পাহাড় ও পাহাড়ি প্রান্তিক মানুষ, প্রাণী, পরিবেশ ও তাদের দুঃখকষ্টকে সংবেদীভাবে চিত্রিত করেছেন।

আমিনুল ইসলাম আশিক মাদারীপুরের সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর আশিক মানুষের বাইরের রূপ ও ভেতরকার চেহারাকে তাঁর ভাস্কর্যচর্চার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি আশ্রয় করেছেন বিশ্বরাজনীতিকে।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের মুখের ভেতর থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানের অবয়বকে দেখা যাওয়া ভাস্কর্য এবং মাতৃকামূর্তির মাথায় বসানো স্যানিটাইজারের স্প্রে মেশিনের রূপ দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে।

ময়মনসিংহের ছেলে শিমুল দত্ত ভাস্কর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর। প্রদর্শনীতে তাঁর উপস্থাপিত ভাস্কর্যের শিরোনাম – কোভিড সময় ২০২০। ডিম ফুটে বাচ্চা মুরগির উঁকি দেওয়ার ক্ষণ ও আরেকটি ডিমের দেয়ালে বাচ্চা জীবনের ফুটনোন্মুখ আর্তি দেখা যাচ্ছে। শিশুতোষ ও অতিসাধারণ বিষয়কে তিনি সহজ সত্যতায় তুলে ধরলেও তাঁর কাজ একেবারে বিশেষ হয়ে উঠেছে!

আবদুল্লাহ আল বশির বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনার সন্তান। চিত্রকলায় পাঠ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও গণচীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বশির তাঁর শৈশবে নিজের জন্মস্থানের সন্নিহিত অঞ্চলের বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি আঁকেন। বৃহত্ত্বর প্রকল্পে তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে জলরঙে সুররিয়ালিস্ট ধারায় ছবি এঁকেছেন। এক নগর আবহে নদীবক্ষে জাহাজ আর ভবনসারি আর তার আকাশজুড়ে পাখি-ফড়িংয়ের ভিড় এবং ধরিত্রীর মতো এক নারীর খণ্ডিত অবয়ব তাঁর চিত্রকর্মকে রহস্যময় করে তুলেছে। এই প্রদর্শনীতে তাঁর দুটি চিত্রকর্মের শিরোনাম – নাইট মেয়ার-১ ও ২।

ঢাকার শিল্পী নিজামউদ্দিন আহমেদ শিল্পে পাঠ নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে। এ-প্রদর্শনীতে শিল্পী মানুষের জটিল জীবনের কষ্টকল্পিত আখ্যানকে অংকন ও প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যতিক্রমীভাবে তুলে ধরেছেন। কালো কালি, অ্যাক্রিলিক রং, শুকনো তুলি, কাগজ, পলিথিন ও পলিথিনে বাতাস ভরার কৃত্রিম যন্ত্রসহযোগে ‘চলমান সময়ের ফ্যান্টাসি ২০২০’-কে উপস্থাপন করেছেন নিজাম।

শিল্পী রাকিব আনোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অংকন করে চলমান জীবনকে বৃহত্তর ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন তাঁর ‘যাপিত বৃত্তান্তে’। এলামাটি মিশ্রিত হলুদাভ ক্যানভাসে বাঁশকাগজ যুক্ত করে কালি ও কলমে  কর্মব্যস্ত অসংখ্য মানুষ ও প্রাণীর কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের সন্তান শিমুল সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতক সম্মান সম্পন্ন করে পাকিস্তানের লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাডস থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ঐতিহ্যবাহী নকশায় দুর্দান্ত সূক্ষ্মতায় কাগজ কেটে কেটে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার ছবি তুলে ধরেছেন শিল্পী শিমুল।

সুমন ওয়াহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তরুণ শিক্ষক। চারুশিল্পে তাঁর শিক্ষালাভ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।    তিনি   নিজের   আত্মপ্রতিকৃতি নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন এই বৃহত্ত্ব প্রকল্পের অংশগ্রহণকারী শিল্পী হিসেবে। তাঁর চিত্রকর্মের শিরোনাম – ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’। সংস্কৃতির নব্য উপনিবেশবাদ দ্বারা মানুষ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, ক্রমান্বয়ে তার জীবনাচারে এর প্রভাব ব্যাপ্ত হচ্ছে – সেই দিকটি শিল্পী নির্দেশ করেছেন সমান মাপের দশটি ক্যানভাসে নিজের প্রতিকৃতির নানা আদল ও রেখার নির্দেশনায়। বৃহত্ত্ব প্রকল্পের এ-প্রদর্শনী দুর্যোগপূর্ণ এই সময়ের দলিল  ও এর উত্তরণের অন্যতম শিল্পিত উপায় হিসেবে অনেকদিন আমাদের মনে থাকবে।