মতিন নাকি প্লাটিপাস

মতিন গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত তিনবার নিজেকে প্লাটিপাস দাবি করেছে। আমি পাত্তা দিইনি। দুইবার মোবাইল রেখে দিয়েছি; শেষবার বলার পর থেকে আমি মোবাইল অফ করে রেখেছি। গত রাত থেকে শুরু। এখন পরের দিন দুপুর ২টা।

আমি ড. ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। তাঁকে সন্ধ্যার আগে পাওয়া যাবে না; চেম্বার থেকে জানাল। আমি সকালে নাশতা করেছি; কিন্তু এখন দুপুরের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না। সত্যি চিন্তা হচ্ছে। প্লাটিপাস সম্পর্কে আমি সামান্য জানি; স্কুলের জিওগ্রাফিতে ছিল। এখন অনলাইনে আরেকটু পড়ে নিলাম। অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী; একমাত্র এই মহাদেশের কিছু অংশে এদের দেখা মেলে। বিশেষ বৈশিষ্ট্য : বিষাক্ত নখ আছে (এর সঙ্গে মতিনের কিছু কি মেলে?); একরকম জলজ; সবচেয়ে ভয়াবহ বৈশিষ্ট্য, এরা স্তন্যপায়ী কিন্তু ডিম পাড়ে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা একসময় মনে করেছিলেন, এটা হাঁস, ব্যাজার (বেজি জাতীয় বিরল প্রাণী) ইত্যাদি প্রাণীর অংশ নিয়ে বানানো কিছু। যখন তাঁরা একটা স্পেসিমেন হাতে পান, তাঁরা ভেবেছেন – এই প্রাণী আসলে দুনিয়াতে নেই; হোক্স মাত্র। ১৭৯৮ সালে। হায়! এখন মতিন নাকি সেটা হয়ে বসে আছে!

ড. ফিরোজ বললেন, এমন কিছু আগে শোনেননি তিনি। এটা বোধহয় নতুন কিছু। বিত্ত-বৈভবে থাকার ফলাফল।

অথবা মতিনের আর মানুষ হয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। ‘খুব বড়লোকের ছেলে নাকি?’ উনি জিজ্ঞেস করলেন। – ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের। টিভি চ্যানেলে কাজ করে; খবরের এডিটিং জাতীয় কিছু।’ ‘ও মিডিয়া! মিডিয়ায় কাজ করে নাকি! তাহলে সম্ভব হয়তো!’ কী বলে! আমার কথা তিনি বুঝতে পারছেন না। মতিন মানসিকভাবে না, শারীরিকভাবেই নিজেকে প্লাটিপাস দাবি করছে। ফিমেল প্লাটিপাস। ওর নাকি স্তনও হচ্ছে। ফিল করছে পেটে একটা ডিম। শারীরিকভাবে হলে অবশ্য ফিজিশিয়ানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করার কথা। আমি জানি। ফিরোজ সাহেবও হয়তো আমাকে তাই বলবেন। কিন্তু আমি নিজেই তো বিশ^াস করছি না। ভাবছি সমস্যা মানসিক। তাই তাঁকে কল দেওয়া। পরিচিত মাধ্যম হয়ে না গেলে বিখ্যাত তিনি এতক্ষণে ফোন রেখে দিতেন। আমাকে বুঝে কথা বলতে হবে। কিন্তু মতিনের সঙ্গে এখনো আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি।  

আমি আর থাকতে না পেরে মোবাইল অন করি। দুই মিনিটের মধ্যেই মতিনের কল আসে।

‘এখন কী অবস্থা?’

‘ভালো না। অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে।’

‘যেমন? মনে করতে পারছ না?’

‘অনেকটা তাই। যেমন মাকে ফোন করতে চাইলাম। করলাম না। অনেকদিন গ্রামে যাই না। পরশু যাওয়ার কথা ছিল। এখন মনে হচ্ছে যাব না।’

‘এতে কী হারিয়ে গেল?’

‘মানুষের শৈশব; বাপ-মার সঙ্গে স্মৃতি। আমাদের শৈশব প্রাণীদের চেয়ে অনেক লম্বা আর বাবা-মার সঙ্গে সম্পর্ক শুধু মানুষেরই এতদিন থাকে।’

‘এখন কি তুমি তাদের ফিল করছ না?’

‘নাহ্! এমনকি অনেক স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি। মার ছবি দেখে তেমন অনুভূতি হচ্ছে না।’

‘তোমার চিন্তা বা ভাষার ব্যবহার কিন্তু বেশ লজিক্যাল।’

‘চেষ্টা করতে হচ্ছে এর জন্য। তুমি কি খেয়াল করেছ আমি কত সময় নিয়ে একেকটা কথা বলছি? তোমার কথা বুঝতেও সময় লাগছে।’

‘বলতে চাচ্ছ তুমি ভাষা হারিয়ে ফেলছ?’

‘হুঁ। ভাষা ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে।’

‘আমাকে এখনো ফিল করছ? আমাকে মনে করতে পারছ?’

‘এইটা এখনো পারছি। কারণ … মেটিং সিজন বোধহয়।’

‘কিন্তু তুমি তো মেয়ে প্লাটিপাস! আমাকে কেন দরকার?’

‘সব হয়তো ব্যাখ্যা করা যাবে না। হয়তো আমার মগজে সেক্স রিলেটেড মেমোরি একমাত্র তুমিই!’

আমরা কিছুক্ষণ নীরব থাকি। তারপর মতিন জানতে চায় আজকের ব্রেকিং নিউজ কী। আমি হাসব না কাঁদব বুঝি না। আমি এখনো টিভি খুলিনি। বলি, পরে জানাচ্ছি। আমাকে অফিসে ফোন করে জানাতে হবে আজ আসছি না। না জানালেও কেউ ফোন করবে না। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিটা আমাদের।

মতিন ওর স্বপ্নের কথা বলছিল। কয়েকদিন ধরে সে জেগে জেগে একটা স্বপ্ন দেখে। আসলে একটা ভাবনা। ভাবনাটা তাকে এতটা বিমূঢ় করে রাখে যে, তার মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে। সে চিন্তা করে, সে কাদামাটিতে মাখামাখি করছে আর তার চারপাশে কিছু বাচ্চা প্লাটিপাস। সে দেখে এঁদো-ডোবার পাশে জংলার মাঝে একটা টিভি পড়ে আছে। টিভিটার কাঠের খোলস শুধু; এইচডি না; অনেক পুরনো দিনের। ওটা তার বাসা। ওখানে সে কিছু খড়-বিচালি রাখছে। কারণ খুব শিগগির সে ডিম পাড়তে যাচ্ছে। ‘এর মানে কী?’ মতিন আমার কাছে জানতে চায়। আমি কোনো মানে খুঁজে পাই না। একবার মনে হয় তার হরমোনজনিত কোনো অসুখ হয়েছে। কিন্তু গত মাসেও আমরা কিছু সুন্দর সময় কাটিয়েছি; মনে হয়নি ওর  কোনো সমস্যা আছে। পুরোটাই একজন স্বাভাবিক পুরুষ।

‘আমি সবজি ছাড়া আর কিছু খেতে পারছি না।’ এর একটা মানে আমি অনুমান করতে পারি। সে মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবে বলছিল কিছুদিন ধরে। তার এক বন্ধু তাকে একটা ফটো দেখিয়েছিল। অ্যাক্সিডেন্টে থেঁতলে যাওয়া একটা মানুষ। বন্ধু ছবিটা দেখানোর আর জায়গা বা সময় পায়নি! ওরা তখন রেস্টুরেন্টে বসে কাবাব খাচ্ছিল। সেই থেকে মাংস দেখলে মতিনের বমি চলে আসে; কিন্তু প্লাটিপাস তো নিরামিষাশী নয়। মতিন অবশ্য বলেছে, আসার সময় কিছু চিংড়ি নিয়ে আসতে। এটা মেলে। প্লাটিপাস চিংড়ি জাতীয় জিনিস খায়।

মতিনের জন্য আমি কয়েকটা পরীক্ষা উদ্ভাবন করেছি। কয়েকটা ডা. ফিরোজের পরামর্শে; বাকিগুলো নিজেই ভেবে বের করেছি।

১। মতিনের ল্যারিংকস স্ক্যান করাতে হবে। এইটার জন্য নাক, কান, গলার ডাক্তারের কাছে যাওয়া যায়। মানুষ থাকার একটা শর্ত বোধহয় গলার এই অরগান। আমাদের ভাষা বাজায় এই যন্ত্রটা। স্ক্যানে দেখা যাবে ওর এই যন্ত্রে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না।

২। মতিন কি সোজা হয়ে দাঁড়ায়? এই পরীক্ষাটা এখনই করা যেতে পারে। ওকে একটা কল দিলেই হলো। আমি উঠে জানালা বন্ধ করি।

বাইরে বড় কোনো আনন্দ শোভাযাত্রা যাচ্ছে। ঘর নীরব করে কথা বলতে হবে; যেন আমি সব শুনতে পাই। আমি ফোন করি। রিং হতে থাকে। কেটে যায়। আবার রিং দিই।

মতিনের ফোন ধরতে দেরি হচ্ছিল কারণ তার ফোনটা টেবিলের ওপর ছিল। হামাগুড়ি দিয়ে এসে সে ওটার নাগাল পাচ্ছিল না। তাছাড়া তার হাতের আঙুল তাকে আর আগের মতো সহায়তা করছে না কিছু ধরতে। আমি চুপ করে শুনি; কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না।

একই সঙ্গে তৃতীয় পরীক্ষা করে ফেলা যেতে পারে এখনই। মতিন কি লজ্জা পায়? এটাও মানুষ থাকার শর্ত; নেট খুঁজে এমনই বের করেছি।

– না। মতিন আর লজ্জা পাচ্ছে না। ইডেন গার্ডেনে যেমন

অ্যাডাম-ইভের লজ্জা ছিল না; আদি পাপের আগ পর্যন্ত। কীভাবে জানল সে আর লজ্জা পাচ্ছে না? সকালে বুয়া এসেছিল কাজ করতে। ওইসময় মতিন টয়লেটে যায়। সে টয়লেট করার সময় দরজা লাগায়নি। কাজের বুয়া তাকে দেখে ফেললেও তার লজ্জা লাগেনি। সে তখন ব্যস্ত কসরত করে টয়লেটে বসতে।

আর একটা পরীক্ষা আছে! সেটা কি খুব ভয়ের হবে?

আমি ভাবি – এত প্রাণী থাকতে সে প্লাটিপাস কেন? – কারণ এদের সঙ্গে মানুষের মিল আছে! এটা হওয়া সহজ! এরা ডিম পাড়ে কিন্তু আবার স্তন্যপায়ী। এরা সুকুমার রায়ের ছড়ার মতো। আজব একটা প্রাণী এবং এরা আধুনিক। ধুর! এই ভাবনাটা লজিক্যাল হলো না! 

মতিন জানতে চেয়েছিল ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্লাটিপাস আছে কি না। মতিন ওদেরকে কাছ থেকে দেখতে চায়। দেখতে চায় ওদের সঙ্গে সে কমিউনিকেট করতে পারে কি না। আমি জানি না। ছোটবেলায় সেই কবে চিড়িয়াখানায় গিয়েছি; এখনকার খবর জানি না। তবে মতিনের তো কয়েক বছরের মধ্যে যাওয়ার কথা। ঢাকায় এসেছে সে ছয় বছরের বেশি হয়নি। আমি চিড়িয়াখানায় ফোন করতেই থাকি। কেউ ধরে না। অবস্থা বেশি খারাপ হলে প্লাটিপাস দেখাতে মতিনকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া যায়! আমিও জিনিসটা কেমন দেখলাম।

মতিন বাসা থেকে বের হতে পারছে না; আমাকে জানিয়েছে। সে বুঝতে পারছে না, বের হয়ে সে কোথায় যাবে; কী কারণে যাবে। তার চেয়ে বাসার বাথরুমের পরিবেশটা তার ভালো লাগছে।  

বিকেলে খাবার নিয়ে আমি টিভি দেখছিলাম। খেতে ও টিভি দেখতে কোনোটাই ভালো লাগছিল না। তবু অভ্যাসবশে। টিভিতে দুজন মোটা লোক দেখাচ্ছিল। তারা কেউ খুব খুশি না। তবু হাত মেলাচ্ছিল। দুজনের চুলের বাহারই উল্লেখ করার মতো। দুজনের পরস্পরের থেকে নিজেদের লুকানোর চেষ্টাও দেখার মতো। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কিম জন কী যেন! আমি টিভি মিউট করে রেখেছি। শুধু ছবি দেখছি। ব্যাপারটা মজার; শব্দ ছাড়া টিভি দেখলে অনেক কিছু লক্ষ করা যায়; অনেক কিছু অন্যরকম বা হাস্যকর হয়ে যায়। আনমনে মোবাইল নাড়াচাড়া করতে করতে আমি মতিনকে আবার কল দিয়ে ফেলি। তার টিভিও চলছে; শব্দসহ। নিউজ না দেখে সে থাকতে পারে না। কিন্তু একজন প্লাটিপাস কি টিভির ভাষা বুঝতে পারছে? আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। না। যদিও শব্দ দেওয়া; সে শুধু ছবি দেখছে। ছবি দেখে খবর বোঝার চেষ্টা করছে। ভাষা মতিনের কাছে দূরের চলে যাওয়া ট্রেনের শব্দের মতো লাগছে। আমি কি তাকে বিশ্বাস করে ফেলছি? মনে করছি সত্যিই সে প্লাটিপাস হয়ে গেছে। আমি তাকে কথা বলতে বলি। কথা চালিয়ে যেতে বলি। আমার মনে হতে থাকে কথা বন্ধ করলেই সে পুরোপুরি প্লাটিপাস হয়ে যাবে। মতিন আমাকে বলে, কথা বলতে তার ভালো লাগছে না। সে অপেক্ষা করে আছে কখন আমি তার বাসায় যাব।

আমি বুঝতে পারি না ডাক্তার ছাড়া আর কার সঙ্গে মতিনের সমস্যা নিয়ে কথা বলা যায়। আমি হাসির পাত্রী হতে চাই না; মতিনকেও ছোট করতে চাই না। এমনিতেই তার নাম আর কথা বলার টান একটা হাসির খোরাক আমাদের বন্ধুদের মাঝে। দুনিয়ার তাবৎ খবর সে রাখে; এমনকি ভুলে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের শেষ খবরটাও সে জানে; তার  ঠাট্টার নাম হয়েছে এমটিভি – মতিন টিভি। আমি নিজেই ওকে নিয়ে ভাবতে থাকি। বিবর্তনের এ কোন ধরন আবার হাজির হলো; মানুষ প্লাটিপাস হয়ে যাচ্ছে।

হায় দুর্ভাগ্য! এর শুরু আবার মতিনকে দিয়ে। আচ্ছা এখন আমাদের বিয়ে হয়ে বাচ্চা হলে … সেগুলো কি …? আমি ভাবা বন্ধ করি। পানির কল বন্ধ করি। ঠান্ডা পানি আর এর শব্দ আমাকে আরামের পরিবর্তে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। গোসল না করে আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে আসি।

মতিন একটা ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। মতিন তার ই-মেইল চেক করতে চাচ্ছিল; তারপর ফেসবুকে ঢুকে কিছুক্ষণ মানুষের স্ট্যাটাস দেখা, প্রোফাইল দেখা, লাইক-কমেন্ট ইত্যাদি। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না কেন সে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। একটু পরপর অবস্থা এমন হচ্ছে যে, সে বুঝতে পারছে না ল্যাপটপ জিনিসটা কী আর এটা কী কাজে লাগে। ইমেইল-ফেসবুক আবছা আবছা তার ব্রেইনে এসেই আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। তার ব্রেইন একবার তাকে সিগন্যাল দেয় নিউজ পোর্টাল ঘুরে আসার। পরক্ষণে নিউজ ব্যাপারটা সে বুঝে উঠতে পারে না। এটা কী বা এর কাজ কী অথবা মানব (/প্লাটিপাস) জীবনে এর উপযোগিতা নিয়ে সে কোনো ভাবনা হাজির করতে পারে না। ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দিয়ে এটাকে খুলতে সে ব্যর্থ হয়। মতিনের হাতের আঙুলগুলো স্ক্রিনে আঁচড় কাটতে গেলে নিজেকে সে ঝারা দিয়ে সরিয়ে নেয়। বাথরুমের কলটা খোলা ছিল। পানির শব্দটা তাকে টানে। সে কান পেতে শুনতে থাকে আর এমন একটা ভুবনে ডুবে যায় যার বর্ণনা আমি দিতে পারব না। অথবা দিতে পারব না তার ব্রেইন এখন কীভাবে কাজ করছে। আমি তার ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলে দিই। সে ই-মেইল ইত্যাদি খুলতে আগ্রহ পায় না।

গ্রেইস! গ্রেইস!

আমার নাম। গ্রেইস কেলির নামে রাখা। মোনাকোর প্রিন্সেস। হলিউডের তারা। মতিন আমাকে ডাকে। তার কথা কাশফুলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসের শব্দ যেন। আমি কাতর হই। আমি তার উপযোগী একটা ভাষা কী হতে পারে তা আবিষ্কার না করতে পেরে চুপ করে থাকি। আমরা উভয়ের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকি। আমার একটু ভালো লাগে তখন। মতিনেরও সম্ভবত। সে তার টিভিটার প্লাগ টেনে ছুটিয়ে ফেলে ঘরটাকে নীরব করার জন্য।

আমি আস্তে জানতে চাই গ্রেইস কেলির কোনো মুভি সে দেখেছে কি না?

মতিন চুপ থাকে। সে কি মুভি বা গ্রেইস কেলি বা হলিউড, মোনাকোর গ্ল্যামার … এইসব বিষয়ে একেবারেই নিরুৎসাহী?

আমি ঢাকার লাখ লাখ মানুষ, জ্যাম-ধোঁয়া-ধুলা-কানে তালা লাগানো শব্দ সব পার হয়ে মতিনের বাসায় এসেছি। আমাকে শেষ পরীক্ষাটা করতে হবে। আমার ভয় লাগছে; আমি জানি না এর ফলাফল কী হতে পারে। মতিনের নখর কি বিষাক্ত হয়ে গেছে? আমি দেখি সে তাকিয়ে আছে; তার চোখের ভাষা আমি পুরো পড়তে পারছি না। আমি আমার ওড়নাটা খুলে চেয়ারের ওপর রাখি।

বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। কলটা ছাড়া। মাঝে মাঝেই ওই শব্দকে আমি অনেক দূর কোনো দেশ-সময় থেকে আসা ঝরনা ভেবে বসছি।