দুলাল সরকার

  • ভূমিজ চর্যার ইতিহাস

    অক্ষরের সুবিন্যস্ত অবয়বে লেখা আবেগের বাহন হয়ে যে আমার জীবন রচনার ক্ষেত্রে গল্প হয়ে ফুটে ওঠে প্রিয় বর্ণমালা – নিশীথ রাতের এক কুহকিনী – যে আমার অস্তিত্বের সংবেদী ঠিকানা – যে আমার হৃদয়ের  গহিন সুন্দর, বোধের দু’কূল বেয়ে থরে থরে মৌন মৃত্তিকার স্তরে সাজানো গোলাপ – যে আমার উদাসীন পাথারের একা সঙ্গিনী যে আমার কর্মব্যস্ত…

  • মরমি অজয়

    কিছু নির্বিকার ভালোবাসা আছে বৃক্ষপিঠে রুক্ষ আকাশে – অরিন্দম ব্যাকুলতা নিয়ে সুন্দরের নিস্পৃহ সবুজে নিষ্ঠাবতী রাতের দ্রাঘিমায় চৈতন্যের মগ্নতায় আহত সৌন্দর্যে পাখিদের অভিমানে বিকলাঙ্গ আলোকবর্ষ প্রত্যেকে গ্রামের বাড়িতে অথবা রাত্তিরে দূরে ডাকে নৈমিষ অরণ্যে কারো ঘরে; কিছু হাহাকার – গোপন কস্তুরী নীল ঝিঁঝি  বুকের শরীরে স্বয়ংক্রিয় শস্যের ধ্রুপদী খেলা সময় গুহায় কিছু বীভৎস ব্যথায় অতলান্ত…

  • শকুন্তলার পোষা হরিণীর চোখ

    রেখে দিতে পারো সম্পর্কের আলোকবর্তিকা, কিছু আবর্জনা হৃদয় নামক এক দেহগহ্বরের চোরাগোপ্তা পথে সংশ্লিষ্ট খণ্ডাংশে দেহানুভূতির মধ্যে আবেগের অভ্যুদয় কিছু ক্লান্তিবোধ, কিছু ফুল ফুটবার সাড়া … পাতা গজাবার ধ্যানে বৃক্ষের আহ্লাদে আর গণকবরের পাশে মৃত্তিকার অভিমান রেখে দিতে পারো, কিছু পিছুটান; রাত্রির কথোপকথন শেষে জীবনের সমতা আনতে পারে এ রকম কিছু নাম, কিছু সংহত কুঁড়ি…

  • লতা, লতা মঙ্গেশকর

    কেউ কি ডেকেছে তোমাকে … পঞ্চভূতে মিশে গেলে তুমি … জানি এভাবেই যেতে হয় তবু প্রশ্ন আসে, কেন যেতে হয়? ঠিকানা রাখিনি আমি; শুধু ভাঁজ খুলে অনুভূতি দেখিয়েছ জীবনের রেখায়-রেখায় এতো নীল শঙ্খের ভাঁজে একটি বীণায় অদৃশ্য সুরের যজ্ঞে মুখোমুখি ঝিনুক হৃদয় … হাত রেখে জানিয়েছ শব্দকে কোথাও নিয়ে যেতে হয় … কোথাও গভীরে, বুকের…

  • পঞ্চাশে পা দিয়েছো

    পঞ্চাশে পা দিয়েছো তুমি – কালের বিচারে বাল্য, কৈশোর ও যৌবন অতিক্রম করে আজ তুমি প্রবীণা, সেই তুমি তোমাকে প্রশ্ন করে দেখো – কতটুকু পরিপক্বতা অর্জন করে শরীর ও মনে আলোকিত তুমি – কতটুকু ঐশ্বর্যমণ্ডিত তোমার হৃদয়, তোমার অস্তিত্ব, দু-ডানা কতটা নক্ষত্রখচিত চিত্রল বন হরিণী কিংবা দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতির মতো পুষ্পমুগ্ধ? কতটা মুক্তিযুদ্ধসম্মত – ক্রমাগত স্বপ্নালোকিত…

  • কোথায় যে গ্যালো

    কইছিলাম না তুমি পত হারাইবা? শ্যাষে ডাঙা না পাইয়া তুমি কই গ্যালা তন্নতন্ন কইরগা হারাডা জীবনভর খুঁজলাম কত! চেনাজানা যেহানে যেহানে ছিল, জিগাইছি কত কইছি দ্যাখতে ক্যামোন ছিল হরীতকী রং জামাটা তোমার গায়ে, শরীলডা নীল বেগুনী আভার মতো দ্যাখলেই বোঝা যায় নির্জনতার উদ্দেশ্য সে জানে ভেতরে ভেতরে কিছু ভাবে … কোথাও না পাইয়া শ্যাষে জলউঁচা…

  • সকলেই যায় … তুমিও

    (প্রিয় মানুষ, শ্রদ্ধেয় হাসনাতভাই …) সকলেই যায় … তুমিও যাবে, ও-পথ কি এত প্রিয় প্রিয় সান্নিধ্যের টানে আকুবাকু করছিল মন ভেতরে ভেতরে তাই আকাশকে সাক্ষী রেখে ধণুর্ভঙ্গ পণ … আর সব থাক, তুমিও চললে পথে আর সব বট প্রাচীন পথের পাশে বটের দাওয়ায়? তুমিও হাজির হলে কেউ বুঝি ডেকেছিল এত তীব্র আহ্বান সত্তর ছুটে গেলে…

  • জলের প্রচ্ছদে তুমি থেকে যাবে

    দুলাল সরকার (আমার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চিরস্মরণীয়েষু) জলের প্রচ্ছদে তুমি থেকে যাবে – জানতে কি এসব কখনো? কাল ও প্রথম বেলা তোমাকে ছাড়াই যথারীতি ভোর হবে অভ্যাসবশত? একজন কৃষাণ সেও মাঠে যাবে, করোনা যেনেও রিকশা বের হবে – অসহায় বাতাস সেও চেয়ারের শূন্য নিশ্বাস আরো যারা ভালোবেসেছিল পৃথিবীর অন্য সম্পর্ক পথের জারুল, খেয়াঘাট? মহাকাল…

  • আমার এ পথচলাতেই আনন্দ

    ভোরের উঠোন ঝাড়– দিতে দিতে আমি তোমাকে দেখি …. সদ্য শিউলি ঝরা উঠোনের নিজস্ব গন্ধ নিতে নিতে আমি তোমাকে দেখি সবুজ শাড়ি পরিহিতা ভোরের মাধবী আলোয় স্মিত মুখে আলোর ঝরনা পরে কি উজ্জ্বল তুমি! সারা উঠোন জুড়ে পায়ের আনন্দে শ্যামল শোভা; কোথাও যাব না আমি, ক্ষণস্থায়ী এ দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে যে মুহূর্তের আবেগ আমি তাকে…