কবিতা
-
দ্বিতীয় ঈশ্বর
আমি যখন দ্বিতীয় ঈশ্বরের মুখোমুখি বসি, জগৎ সংসার মানুষের মুখ সব হাওয়াকলের নাভিমূল থেকে অশরীরী আলোয় রহস্যঘন জীবনের প্রচ্ছদ দেখতে পাই। উন্মত্ত চোখ ও বোধের আঙটায় ঝুলে আছে মহাকাল! জন্মের নির্দিষ্ট সময়-কাল নিরবচ্ছিন্ন শূন্যতায় ভেসে বেড়ায়! নুনে ধরা সম্পর্করা গিলে খায় সার্বভৌম সত্যের দীর্ঘসূত্রিতা আমরা বেঁচে আছি যে যার মতো! প্রতিদিন অপেক্ষা, হৃদয় ও জলের…
-
পরিবর্তন
চোখ পিছনে তাকাবার আর দরকারই নেই … ঘুম আড়ালে বিদ্ঘুটে অন্ধকার জমা থাকে … চাকা আড়ালে খোলা থাকে নারীদের অন্তর্বাস শিরা তুমিই বা কেন মধ্যরাতে ভাঙো আয়না? দুপুর কে ধরবে গ্যালারিতে যাওয়া ছক্কার বল? মরু খেজুর পাতা রক্তাক্ত করেছে তোমার নাক রঙ তুমি কেন চিরল ঠোঁটে লাগাচ্ছো লিপস্টিক? পাওয়া আসলে কোনটা নিতে চাও ছক্কা না…
-
বৃষ্টি নামলে
বৃষ্টি নামলে কেমন এক মনখারাপ হয় – সে কেবল তোমারই জন্যে কেননা তুমি তো আমারই, পর নয় – যুগ যুগ ধরে তুমি আমারই তো ছিলে – রোজই মেলাতো পা, এই মন তোমাকে নিয়ে হিজিবিজি ভাবনা মিছিলে – জলদমেঘে ঢেকে এলো আচানক যেন সাঁঝ হয়ে এলো এই ভরদুপুর ঝরল বৃষ্টি উঠোনে, হাসনুহানার পাতায় সুর তুলে লক্ষ…
-
পোকাজন্ম
পোকা, তোমার আগুন মাখার ঝোঁক! পাখি, তোমার তীরের প্রতি নেশা! ফুল প্রায়শই আত্মঘাতী হয় এবং স্বপ্ন, স্বপ্ন সংকট-ঘেঁষা স্বপ্ন আগুন, আমি পোকা হয়ে যাই স্বপ্ন পাখি, তীর আমাকে তাক করে স্বপ্ন ফুল, ঘ্রাণের প্রতি দুর্বলতা ছিল স্বপ্ন নীল, আক্রান্ত একপ্রকার জ্বরে আমার এমন জীবনধারা দ্যাখো এক টোকাতেই আকাশে উড়ে যাই আর বাতাসে ছড়াচ্ছো নিশ্বাস তাতেই…
-
উত্তরাধিকার
পূর্র্বপুরুষদের মতো আমিও নতুনকে দিয়ে যাই কোলাহল-শৈশব, মেঘহীন বুকের মতো অনিন্দ্যসুন্দর নীলিমা, স্নিগ্ধ গুচ্ছ সকাল; একটি বৃন্তে জড়িয়ে থাকা শান্তিময় সময়। বৈভব সম্পদে অসুখ নিহিত, দেখেছি আমি, মমতার নিখাদ মায়ায় সারাটা সময় হেঁটেছি; আমাকে শান্তি দিয়েছিল দুরন্তপনার যাপন। ঐশ^র্যে ভোগের উৎসব দেখেছি পরতে পরতে যেখানে মানবতা কাঁদে, দ্বিপদী হয়ে যায় অমানুষ! ভূমিহীন আমি, ঘরহীন ঘরে…
-
জন্মান্তর, অঋব
তো, আমি মরবো ঠিক অপঘাতে – ফুলের স-গোত্র সংঘাতে বুকে এসে বসবে শকুন, পচবে না আমার লাশ, – বাঁচবো আমি সর্বভুক ক্ষুধার্তের পেটে, অথবা আমি বেঁচে রইবো প্রিয়তমা, বিস্মৃতি, তোর নীরব আঘাতে আঘাতে তুই আসবি, ডাকবি কেঁদে কেঁদে ‘ও, আউশ সখা কই গেলি-রে?’ আমাকে ঠোঁটে করে নিয়ে যাবে বাবুই, অ-ভুক্ত সেই ধানক্ষেত, নদী তীরে! ধান…
-
এত ভুল
ভেবেছিলাম, আজ ভবঘুরে হবো কিন্তু ওঁৎ পেতে ছিল আঁধার! আর সাথে ডেকে নিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিকে। তবে আমাকে আমার পথ চেনে – গন্তব্যের কাছেও আমি নই অচেনা। দেখা হলে পথের দুপাশের দূর্বাঘাস ও বুনোফুলগুলো জানতে চায়, আমি কেমন আছি? ধেয়ে চলা মেঘলা আকাশ থেকে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলে আমার সেই চেনা পথ বর্ণময় হয়ে ওঠে,…
-
কাঁটা
অষ্টাদশী পদ্ম নয়, বরং সুঁচালো কাঁটা হয়ে আছে সংসারের। তার চক্ষু তুলে তাকানোটা মৌমাছি বা ভিমরুলের হুল; কারো কাছে নীরব দংশন। ধরা-ছোঁয়া জিনিসের মাঝে ওদের বাঁকানো চোখ দেখে লেগে আছে সর্দি, বর্জ্যের বিশাখা থেকে নির্গমন হওয়া নাকের দুশমন-জল। একটু নড়াচড়া বা ডাব শীতল বাতাস খাওয়াকে মনে করা হয় পায়ের তলায় বা রানের পাশে হয়েছে বিষফোঁড়া। …
-
কৈফিয়ত
সেই পাকুড়বৃক্ষ জেগে উঠুক। অপেক্ষায় আছি। যে নিজের ছায়াশিল্প ভাসাতে ভাসাতে শেষবার কেঁদেছিল বংশাইয়ের কোমল জলে। কিংবা হয়তো ঘুমিয়ে পড়া এক ঈগলের গল্প শুনে যাওয়া হঠাৎ মধ্যরাতে যে দুপুর দুপুর বলে চেঁচাতে চেঁচাতে পৌঁছে গেছে অপরূপ মরূদ্যানের দিকে । সত্যিই জেনে গেছি কেউ নই আমি শূন্যতা নিঙড়ানো নৈঃশব্দ্য ঘিরে যে আছে ঘুমের আবহ নিয়ে মাতাল…
-
মৃতঘড়ি
সূর্য ও কুয়াশার সম্পর্ক আহ্লাদময় সাদা চাদরে ঢাকা কুসুমমুখ – প্রসন্ন সকাল চাঁদ এখন কৃষ্ণপক্ষের বাড়ি দিন দিন বাড়ছে রাতের দেহ বৃক্ষকাণ্ড ছোঁয় মৃত্তিকার বুক সে ভুলে গ্যাছে আকাশচুম্বনের গল্প রুগ্ণ সন্ধ্যায় কজন বাউল গায় শাহ আব্দুল করিমের গান।
-
এইসব নিঃসঙ্গতা
‘কোথাও কেউ নেই’ এইসব নিঃসঙ্গতা একদিন কবরের মতো শুয়ে রইলো। একটা শরীর শৈশবের দিকে গেল, একটা শরীর যৌবনের দিকে, সূর্য তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে লালটুকটুক মুখ করে ডুবে যেতে যেতে একবার ফিরেও তাকায়নি। সেইসব পথ আগের মতোই। সেই সব নদী। সেই সব গাছ। পাতাদের ঝরে যেতে দেখে সে-কবরটা শুয়েই রইলো। মোড়ে ঘোড়ার গাড়িটি স্থির। এইসব…
-
খেয়াঘাট
অনেক অনেক কথা বলেছে আমাকে আগে কখনো শুনিনি কোনোদিন। এমনকি কখনো দেখিনি কারো ভেজা চোখ। তখুনি ভেবেছি যদি ফিরে আসে, কোনো কথা না বলে দেখিয়ে দেবো খেয়াঘাট, খেয়া নিয়ে বসে আছি জোড়াসাঁকোর রবিবাবু করবেন পারাপার। যদি ফিরে যেতে নাই চায় দুই চোখে জানায় মিনতি কি রবো না দোহার পাড়ায়। অন্ধপ্রেমে…