স্মৃতি

  • আমিনা ফুপু

    আমিনা ফুপু

    আমার বাবার মোট ভাইবোন ছিল আটজন। বড় পিসি বা ফুপু আনোয়ারা। তিনি বিবাহিত জীবনে বাইশ বছর বয়সে মারা যান। বাবা ছিলেন দাদা শেখ মোহম্মদ এহিয়া ও দাদি গুলেজান বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। পুত্রসন্তান হিসেবে প্রথম। আনোয়ারা পিসিকে আমি দেখিনি। অর্থাৎ আমি জন্ম নেওয়ার আগেই তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। বাকি যাঁদের আমি দেখেছি ও জীবন কাটিয়েছি তাঁরা…

  • ফনেচাচা : দ্বিতীয় পর্ব

    ফনেচাচা : দ্বিতীয় পর্ব

    আমাদের গ্রামে কোনো শিক্ষালয় ছিল না। তাই বাবাকে (শওকত ওসমান) ছোটবেলায় কাদামাটি ভেঙে পাশের গ্রাম নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হতো। নন্দনপুর আমাদের ঘর থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার তো হবেই। সম্ভবত ১৯২৬ সালে আমাদের পাড়ার অদূরে পুবদিকে স্থাপিত হয় সবলসিংহপুর জুনিয়র মাদ্রাসা, অর্থাৎ প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি। বাবা তাঁর লেখাপড়ার শেষের দিকে এই সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের এই…

  • ফনেচাচা

    ফনেচাচা

    আমার বাবা ছিলেন আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। পুত্রসন্তান হিসেবে এক নম্বর। বড়ফুপু বা পিসির নাম ছিল আনোয়ারা। তিনি পূর্ণবয়স্কা হলে বিয়েও হয়, কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পর মারা যান। আটজনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন আমার একমাত্র ছোটচাচা শেখ গোলাম জিলানী। তার ওপরে এক ফুপু ছিলেন আমিনা বেগম। বাবা ও এই দুজন, এঁদের সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা।…

  • দাদা-দাদি

    দাদা-দাদি

    তৎকালীন যুগে আমরা সবাই ছিলাম গ্রামের ছেলে। আর জন্ম নিই মামার বাড়িতে। কারণ মায়ের বাবার বাড়িতে মায়ের যত্নটা ভালো হয়। অবশ্য এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে এটাই ছিল বিংশ শতাব্দী ও তার আগের সময়ের ধারা। আজ অবশ্য গ্রামেও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কথা। এই মহান শিল্পী গ্রামীণ…

  • হরিশচকে যাত্রাপালা

    হরিশচকে যাত্রাপালা

    সবলসিংহপুরের পুবদিক দিয়ে ছোট নদী মুণ্ডেশ্বরী বয়ে চলেছে। এপারে সবলসিংহপুর, ওপারে সরাসরি হরিশচক। আর উত্তরের শেষ দিকে পড়ে লতিফপুর। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর জায়গার নামে অনেক অদল-বদল ঘটে।হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায় জায়গার নাম বদল করে। কোথাও আবার সংক্ষেপে লিখে। যেমন বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ হলো এন.গঞ্জ। তেমনি আমাদের মুণ্ডেশ্বরীর ওপারে হরিশচকের উত্তরের গ্রাম লতিফপুর হয়ে গেছে নতিবপুর।…

  • আমার গ্রাম সবলসিংহপুর

    আমার গ্রাম সবলসিংহপুর

    খুব মজার ব্যাপার হলো, আমার গ্রাম সবলসিংহপুরে থাকা হয়েছে কম। কারণ বহুবিধ। একে বাড়ি মাটির চালার। দুই, আশপাশে খালি জায়গা নেই। তিনদিকে ঘর। সামনে নতুন পুকুর। এই দক্ষিণটা খালি ছিল বলে বাঁচোয়া। না-হয় দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। উঠোন বলতে তেমন আলাদা কিছু নেই। আমার বড়দাদা শেখ ইরশাদ আলী তাঁর মাটির দোতলা বাড়িটা আমার বাবা ভাইপো…

  • মামা-২য় পর্ব

    মামা-২য় পর্ব

    কয়েকদিন িবাড়িতে থেকে মামা কলকাতা চলে গেলেন। এর মধ্যে বালক হিসেবে আমি মামার নিত্যসঙ্গী হয়ে গেলাম। বাগান ও খালপাড়ে দূরে দূরে যাওয়া ছোটদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই আমি একা মামার সঙ্গী। আর মাত্র যুদ্ধফেরত এক সোলজারের একজন ব্যাটম্যান তো চাই। তাই আমি সেই জায়গাটা পূরণ করে ফেলি। মামাকে বুঝতে না দিয়ে লেফট রাইট করে পা…

  • মামা আসছে-১

    মামা আসছে-১

    জন্ম থেকেই শুনে আসছি মামা যুদ্ধে গেছেন। মামাকে দেখিনি অথচ আমি ছ’বছরের বালক। মা আর তাঁর দু’বোন – মামা একা। কিন্তু সবার বড়। ছবিতে দেখেছি ইংরেজ সোলজারদের মধ্যে। মামাকেও ইংরেজ মনে হতো। ছ’ফুট লম্বা, ফর্সা, মাথায় ফেল্ট হ্যাট। সেই গ্রুপ ছবিতে দেখে মামার পুরো চেহারা কল্পনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মামা যুদ্ধে…

  • নানা-নানি : তৃতীয় পর্ব

    নানা-নানি : তৃতীয় পর্ব

    নানারা তিন ভাই। আবার তাঁরা চার ভাইও। কারণ, নানার বাবা শেখ আবদুল জব্বার একজন বালককে পুত্র হিসেবে পালন করতেন। আর তা এতই নিবিড় ছিল যে, সবাই জানত তাঁরা চার ভাই। এমনকি আমার নানা বাড়ি বানানোর সময় বড় ভাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি তৈরি করেন। অর্থাৎ বাড়ি একটাই। শুধু দুজনের অবস্থান দুদিকে। পুবে বড় ভাই, পশ্চিমে মেজো।…

  • নানা-নানি : দ্বিতীয় পর্ব

    নানা-নানি : দ্বিতীয় পর্ব

    যে-কোনো সমাজব্যবস্থা তার সংস্কৃতি ও ভাষার চলনকে নির্ধারিত করে দেয়। পুরুষশাসিত সমাজ বলে নানাকে আগে আনতে হয়। পরে নানি। যদিও আমার কাছে আমার জীবনের প্রথম দশ বছরের প্রিয় মানুষ ছিল নানি। সুখে-দুঃখে নানি-নির্ভর। মা-র চেয়ে বেশি। সেখানে নানা ছিলেন বলতে গেলে শাসক। আমার ক্ষেত্রে খলনায়ক। কর্তাব্যক্তিরা বাকিদের কাছে একরকম খলনায়ক হয়েই দাঁড়ায়। কারণ তিনি নিয়ম-কানুনের…

  • বাল্য ও কৈশোর

    বাল্য ও কৈশোর

    পাঠশালা থেকে ইস্কুল, যেন এক লাফ। শহরের যে-প্রান্তে তখন আমাদের বাস তার সন্নিকট ছিল পাঠশালা। একটু এঁকেবেঁকে সেই পায়েচলা পথ – কিঞ্চিৎ বেতবনের পরেই এক সদ্যকাটা পুকুরপাড়, তারপর সিধে এক মাঠমতো বিস্তারের ধার ঘেঁষে গিয়ে বড়োরাস্তায় ওঠা, উঠে ডাইনে এগোলেই ওই টিনে-ছাওয়া চারচালা বাড়ি, যার নাম কিশোরীমোহন পাঠশালা। বারান্দায় কি পাঁচটে দরজা, নাকি একটাই? কিন্তু…

  • নানা-নানি : প্রথম পর্ব

    নানা-নানি : প্রথম পর্ব

    জ্ঞান হওয়া থেকে নানিকে সবসময় পাশে পেয়েছি। নানা কলকাতায় এক ব্রিটিশ জাহাজ কোম্পানির ডাক্তারের সহকারী, অর্থাৎ কম্পাউন্ডার। কম্পাউন্ডারের কাজ হলো ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী শুকনো ওষুধ অনুপাতমতো মিশিয়ে মিক্সচার তৈরি করে দেওয়া। ওষুধের শিশি স্বচ্ছ বা পাটকিলে রঙের হতো। এই শিশির গায়ে কাঁচি দিয়ে নকশা করে কাগজ কেটে লেই দিয়ে সেঁটে দেওয়া। দিনে ক-দাগ খাবে তা…