November
-
নবরাজের অন্তহীন রহস্য
সাম্প্রতিক সময়ে নবীন শিল্পীদের মধ্যে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিল্পী নবরাজ রায়ের শিল্পকর্ম। ধানমণ্ডির অলিয়ঁস ফ্রঁসেসের লা গ্যালারিতে কিছুদিন আগে তাঁর দর্শকনন্দিত প্রথম একক চিত্র-প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীর নাম ছিল ‘দি রিফ্লেকশন অফ এন্ডলেস মিস্ট্রি’, বাংলায় যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘অন্তহীন রহস্যের প্রতিফলন’। পঁচিশটি চিত্রকর্ম ও তিনটি ভাস্কর্য যে রহস্যগল্প আঁকে মনের দেয়ালে শিল্পীর বক্তব্যে…
-
খেয়াঘাট
অনেক অনেক কথা বলেছে আমাকে আগে কখনো শুনিনি কোনোদিন। এমনকি কখনো দেখিনি কারো ভেজা চোখ। তখুনি ভেবেছি যদি ফিরে আসে, কোনো কথা না বলে দেখিয়ে দেবো খেয়াঘাট, খেয়া নিয়ে বসে আছি জোড়াসাঁকোর রবিবাবু করবেন পারাপার। যদি ফিরে যেতে নাই চায় দুই চোখে জানায় মিনতি কি রবো না দোহার পাড়ায়। অন্ধপ্রেমে…
-
পুষ্পপ্রণয়ী চাষা
সিত-পুষ্পের পাশ-ঘেঁষে পথ চলি দেখি বড়বেশি ম্লান মুখ তার – অবনত মাথা, শরীর দুভাঁজ – এই গ্রহণের দিনে যায় না তাকানো এতটা দুর্গতি তার; ভূমি থেকে জল সরে গেছে বহুদূর কে জানে তা গেছে কি না অসীম সুদূরে, আদরে-সোহাগে তাকে কাছে পাবো এমন ভরসা উধাও শূন্যে আজ; গ্রহণের দিনে ভয় মানি তাই – ভয়…
-
সন্ধিসময়
কেন এত জ্বালাও বলো তো? কোথাও তো আর যাই না তেমন কেবল নূপুরে রিং-টোন বাজলে তবে বেরুই ওই নাশপাতি বনে বসি ক্ষণকাল। এ বিষম বয়ঃসন্ধির আগে সেখানেই পানকৌড়ির রোম আর রোদ লেগে ছিল ছিল বীজের ব্যাপক আকাক্সক্ষা স্বাদু বিস্কুটের মতো সেন্ট আর চা ছিল তরল অভ্যাস। তখন তপ্ত দিনে ঘামে আর কামে মেজাজের মাঠা বানাতাম। বোদলেয়ারের বালা পরে বিকেলে ও রাতে ক্লেদ থেকে কুসুম তুলে নিতাম। মধুমাসে ব্যাঙ্কের বালুসাই পাশে থাকলেও একজোড়া কাপে কফিস্মৃতি ঢেলে বিট লবণে মাখা ঝালমুড়ি সংবাদ সব নিয়ে পা বিছিয়ে বসতাম। ক্রিসমাসে কবিতার ফুলক্রিম, ঈদে বন্ধু ভাসা সেমাই, পুজো এলে সে বাগানের যে কি বিলাস! তখন জলসায় প্রাণমাখা টোস্ট এবং হানুকায় প্রবাসী প্রিয়দের পাঠানো প্রেসারপিল খেতাম। তখন আসলে ডি-টক্সিংই ছিল অভ্যাস অচেনা ঘণ্টার শেষ ফোঁটা পর্যন্ত ফিল্টারবিহীন সুখটানে মটকা মেরে পড়ে থাকতাম। এদিকে তুমি তখন পোর্সেলিন পিরিচে ফুঁ দিয়ে দিয়ে পান করতে আমাকে – আর আমি নাশপাতির লকার খোলা রেখেই দৌড়ে এসে ঘরে পান করতাম উইদাউট সুগারে তোমাকে ॥
-
ডাক
দুয়ারে রোজ যমের শুনি ডাক অনেক নিলি, কমই দিলি তুই কথার মালা গাঁথা এবার থাক মালায় তোকে টগর বেল জুঁই অনেক দেবো, কপালে চন্দন বাড়াবে শোভা, রাজার মতো যাবি অকাজ ছেড়ে কাজের কথা শোন আগুন ছোঁবে হাত-পা মাথা নাভি এখানে ভালোবাসে না কেউ তোকে সবাই নেবে জমানো তোর ধন কাঁদবে যারা লোকদেখানো শোকে বদলাবে দুদিনে…
-
এই নগরে
এ নগর থেকে একদিন বেরিয়ে যাবো আমি এখানে কেটেছে কত দীর্ঘ কালবেলা আর কত গ্রহণের কাল করবো পার এই ভণ্ডামি নষ্টামির শহরে! আর কত … বহুদিন পর আজ ভিজেছে নগর দূরের পথ অবধি! এমন বৃষ্টি এই ভাদরে! জল ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাতার কোলে লাফিয়ে নামছে ফোঁটায় ফোঁটায় এতকিছু – তবু বৃষ্টিশেষে কেন নেমে আসে মৃত্যুর স্তব্ধতা…
-
কলকাতা
গল্পগুলো রেখে দিই। স্মৃতিঘেরা মেঘলা দিনের জন্য। আজ মেঘলা মেঘলা দিন। একটু পরেই শুরু হবে বৃষ্টি। আমি নিউ গড়িয়ার হোটেল রুমের জানালায় রাখি চোখ। সামনে দিঘির জলের কাঁপন। কবি সুভাষ স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে পাতাল রেলের কন্যা। আমি তার হাত ছুঁয়ে দেবো বলে তড়িঘড়ি প্ল্যাটফর্ম। দমদম নয়। যাবো কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজের বারান্দায়। সেইখানে বনগাঁর…
-
রূপকল্প : ২০২৩
পাতাপাখিপুষ্প মন : সবুজ বার্তা নিয়ে উড়ে যায় দিগন্তের পানে … ঢেউ ওঠে অন্তরঙ্গ যুগল নদীতে; কী এক দারুণ রূপকল্প তৈরি হয়! নিজস্ব পৃথিবী সৃষ্টির খেলায় আবারো মত্ত হয় কুশলী স্রষ্টা; সৃষ্টিসূত্রে মহাপৃথিবীর গান বেজে ওঠে জলদূষণের শিকার যতসব নদী আছে ওরা স্বাদুজলে স্নান সেরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বভ্রমণে … মৎস্যকন্যারা সমুদ্রতীরে এসে সিক্ত শরীরে লাগায়…
-
অন্ধকারের হাত
কাছে ডাকে চেনা মুখ অন্ধকারের হাত বুকের ভূগোল শস্য সবুজ ঘর-গেরস্থালি; আগুনে পুড়ে নৈঃশব্দ্যের গোপন লাল রাত সময় নির্বাসিত চোখের সীমানা যতদূর ভ্রমণে কালবেলা; সাথিহারা যেমন অন্ধ বুকের বোতাম খোলা দূর অন্ধকারে সুধা ঢেলে রাত …
-
চুম্বন ও শস্যদানা
(উৎসর্গ : অকালপ্রয়াত এক বন্ধুর উদ্দেশে) টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে কথারা উড়ত হাওয়ায় আর আমাদের বৈকালিক ক্লাসে নানান খণ্ডদৃশ্য মুহুর্মুহু নেমে আসত বহুতর ধ্বনিসঙ্গে আমরা দেখতাম, বৃষ্টি নামছে শস্যদানার মতো ওদের কুড়িয়ে নিয়ে শূন্য পকেট ভ’রে আমরা ফিরতাম যে যার বাড়ি। তুই বলতিস, কবিতার জন্য কিছু অপেক্ষা লাগে যেমন ফসলের জন্য আমরা অপেক্ষা করি বৃষ্টির বলতিস, অপেক্ষা…
-
অনুসন্ধান
বাড়ি দেখলেই সুখী সংসারের কথা কল্পনা করো না ওটা হয়তো কপাল পোড়া কোনো ঘর, এককালে – সুখী মানুষের বাসস্থান ছিল! বাসস্থান মানেই কি সংসার? উদ্বাস্তুদেরও বাসস্থান থাকে, গৃহে থাকে তৈজসপত্রের খুনসুটি। সংসারে থাকতে হয় ব্যক্তিগত কেউ একজন যে আঙুলের ডগায় ঝরে পড়া চুল পাকিয়ে পাকিয়ে আবদার নিয়ে বলবেন : তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু …
-
আলোবসন্ত
আঁধারের অন্তর দেখতে গিয়ে দেখি – জোনাকি বন্দর আলোর বসন্ত বিনামূল্যে ফেরি করে বৃক্ষের সবুজ ফ্ল্যাটে কেঁপে উঠলো জলভরা যমজ চোখের নীল নক্ষত্র তবুও তাঁবু গেড়েছি গৃহ থেকে দূরে অসীম দিগন্ত উঠোনে, দেখে যাও বেদনা কাঠের ঘর – বড্ড বাদামি ঘুমন্ত পৃথিবী; মহুয়ার মগ্নতায় মনমমি হেঁটে যাচ্ছে কুয়াশাভেজা পথে। কার কাছে জমা আছে চেনা পায়ের…