সুজিত বসু

  • ঘরে ফেরা

    ঘরে ফিরে মনে হয় স্বয়ংক্রিয় আলো জ্বলে উঠবে স্বপ্ননীল, ঘরে ফিরে রোজ মনে হয় কেউ আসবে, নিয়ে যাবে খোঁজ বেঁচে আছি কিংবা আমি মরে গেছি কি না প্রিয় বন্ধু কেউ এলে খুবই হয় ভালো বন্ধু যদি নাও আসে অন্তত শত্রুরা ঘরে এসে কথাচ্ছলে করে যাক ঘৃণা আমার তুচ্ছাতিতুচ্ছ দুঃখ ব্যথা সুখ ঘরের আসবাব ছাড়া কেউ…

  • ডাক

    দুয়ারে রোজ যমের শুনি ডাক অনেক নিলি, কমই দিলি তুই কথার মালা গাঁথা এবার থাক মালায় তোকে টগর বেল জুঁই অনেক দেবো, কপালে চন্দন বাড়াবে শোভা, রাজার মতো যাবি অকাজ ছেড়ে কাজের কথা শোন আগুন ছোঁবে হাত-পা মাথা নাভি এখানে ভালোবাসে না কেউ তোকে সবাই নেবে জমানো তোর ধন কাঁদবে যারা লোকদেখানো শোকে বদলাবে দুদিনে…

  • বেলা বয়ে যায়

    বেলা বয়ে যায়, বিকেল ঝিমোয়, সন্ধের নেই দেরি বেলা বয়ে যায়, বৃথা তন্দ্রায় ভালো না কালক্ষেপ বয়ে যায় বেলা, শেষ হয় মেলা, ওপারে যাওয়ার ফেরি ফেলেছে নোঙর, মনের পাথরে মাথা খুঁড়ে আক্ষেপ গত মুহূর্ত অতীতের দিকে অনেক দূর তো গেল কিছুই হলো না, শরতের সোনা রোদ্দুর দিলো ফাঁকি ভেসেছি উজানে, টেলিফোন কানে লাগিয়েই শুনি হ্যালো…

  • জীবন নিয়ে

    কিছুটা ছিল কুয়াশামোড়া গোপনে বলা কথা বাকিটা ছিল তীব্র ঝড়ে অনাবৃত দেহ কিছুটা ছিল প্রলাপ আর কিছুটা নীরবতা দহনে ছিল শরীরে জ্বালা, প্রলেপে ছিল স্নেহ কখনো ধনশিখরে চড়ে টাকার নাম জপ কখনো থাকে মাধুর্য ও কখনো কটু স্বাদ বিবাগী মন সহসা করে মৌন কলরব পাহাড়-চূড়া সমুখে, তবু নিকটে থাকে খাদ শরীরী খেলা ক্ষণিকে দেয় মানব-মানবীকে…

  • স্বপ্নের ভেনিস

    জলে জলে জলময়, সূর্যালোকে শুয়ে থাকে ভেনিস নগরী জলকন্যা অপ্সরী কি? উঠেছিল কোনোদিন সাগর মন্থনে এমন সুন্দরী নারী? দিকে দিকে ফুলরেণু স্বর্ণময়ী তরী ভেসে যায় অনায়াস, সারিবদ্ধ মানুষের অপরূপ ধনে কিভাবে এ-অধিকার, যেন তারা কোনোদিন আগুনের আঁচে করেনি শরীর স্নিগ্ধ, যেন খুব শীতলতা ও জলসিঞ্চনে বাগানে গোলাপচারা যা যেন হবে না দগ্ধ, পুরোনো গ্যারেজে মোটরবোটের…

  • রোমের পথে ফ্লোরেনজিয়া

    আমার দু-বাহু জুড়ে এমন শৃঙ্খল ছিল আগে তা বুঝিনি, রোমের মসৃণ পথে স্তূপাকারে এত কাঁটা, জ্বালানো লজ্জায় মৃণালভুজের মূলে বিলীন রক্তিম আভা, ত্বকের গোলাপি ক্রমশ বিলীন হয়, ইতালীয়া যুবতীর ভুল ইংরেজিতে কি পাও হে যাযাবর, অর্থনীতি আলোচনা ছেড়ে এসে পাপী স্বর্গের সোনালি সিঁড়ি যেন তুমি হাতে পেলে, ট্রেনের চাকায় নম্র মৃদু ক্ষমাধ্বনি, যা ছিল সামান্য…

  • লসান হ্রদের তীরে

    লসান হ্রদের তীরে বড়ো বেশি মৌনধীর শান্ত বসে থাকা উপকূলে শ্বেতছায়া, সূর্য ফ্রেমে ঝুলে থাকে আনত গম্ভীর, ডানার কম্পনধ্বনি মেলে পাখি উড়ে যায়, নীলজলে ঢেউ মগ্ন সে উদাত্ত ভীরু, সাদাটে মেঘের রাশ পরিচ্ছন্ন আঁকা এ-বিরাট চিত্রপটে, সমস্ত সুইজারল্যান্ড মন্দ্র আমন্ত্রণে বিভোল লতার বাহু ফেলে রাখে তন্দ্রাচ্ছন্ন লসান স্টেশনে; এ কেমন বাহুলতা, জাল এই ঘোরজাল, এর…

  • যোগাযোগ

    আলোছায়ার খেলা তোমার মুখে যতই কেন থাকি আলোর খোঁজে মুখ ঢাকলো ছায়াই অসংকোচে ভাগ্য হাসে বিদ্রƒপে কৌতুকে ওষ্ঠাধরে অনেক মধু জমা দাওনি পেতে কখনো তার স্বাদ একটা ছোট বিচ্যুতিকে ক্ষমা করলে জীবন হতো না বরবাদ চাঁপার সুবাস ছিল তোমার দেহে দূরে থেকেই উপভোগের স্নান চেয়েছিলাম, লুকোলে সন্দেহে সহ্য করি তীব্র অপমান অস্নাত সেই অবস্থাতেই বাঁচি…

  • ফেলে আসা দিন

    সুজিত বসু গলির মোড়ে প্রথম দেখি তাকে নরম ভোরে পথে পটের ছবি সর্বনাশই হাতছানিতে ডাকে দু-চোখ হলো প্রতীক্ষাতে লোভী গলির মোড়ে বাগানওলা বাড়ি গোলাপ গাঁদা মল্লিকা মালতী ফুলকে দিত মৃদু জলের ঝারি আর আমাকে লাগামছাড়া ক্ষতি বুকে তখন কচি ঘাসের ঝোপ গলার স্বরও ভাঙতে থাকে রোজ তার দু-গালে লজ্জাগাঢ় ছোপ না চাইতেই নয়নসুখী ভোজ অতীতে…