মধ্যরাতের লিখন

ডিউটি পুলিশ আকবর যখন স্টেডিয়ামকে বাঁয়ে রেখে সার্কিট হাউজমুখী হয় তখন প্রথমে এক তারপর দুই এবং তারপর একজোটে এলাকার কুকুরেরা হেঁকে ওঠে। দিনের বেলা হলে হইচই আর শোরগোলের মধ্যে কুকুরের চিৎকারকে বিশ্রী বিড়ম্বনা মনে হলেও এখন এই মধ্যরাতে তার মনে হয়, কুকুরের ডাক আসলে এক ভিন্ন ধরনের সংগীত। হয়তো সেটিকে প্রাণিসংগীত বলা যেতে পারে। কুকুরেরা কী গান গায় না। গাইতেও পারে। ধরা যাক একটা কুকুর প্রেমে পড়লো একটা কুকুরীর। তখন সে তার সেই মনের প্রেমভাবকে যে-অনুবাদে তার প্রেয়সীর কাছে পৌঁছে দেবে সেই ডাককে সভ্য মানুষের মনে হবে ‘ঘেউ ঘেউ’, অথচ সেই ডাকের মধ্য দিয়ে কুকুরটি তার কুকুরী-প্রেমিকাকে নিবেদন করে চলে প্রেম। আবার, ক্ষুধা পেলেও কী চিৎকার করে না কুকুরেরা! করে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেই ডাককেও তো তাদের ‘ঘেউ ঘেউ’ই মনে হয়। যাই হোক, আকবরের মনে হলো, মধ্যরাতে ভেসে আসা কুকুরের ডাক ততো খারাপ না। কুকুরেরা সেই ডাকে জানান দেয়, হ্যাঁ, পৃথিবীতে কুকুরেরাও রয়েছে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আকবর ভেবেছিল, কুকুরগুলো থাকবে স্টেডিয়ামের দেয়াল বরাবর যেখানটায় গোটা এলাকাটা পোড়া মাংস কি কাবাবের গন্ধে ভরপুর। যদিও মাংস বা কাবাব সবই তখন বিগত অতীত। ঘ্রাণটাই কেবল অবশিষ্ট থাকে। গোটাদিন বিশেষ করে বিকেল থেকে সন্ধে এবং সন্ধে উতরে অল্প আগেও লোকেরা পরোটা, শিক, শামি কাবাব, রেজালা, কারি, চপ এসবই খেয়েদেয়ে শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও আকবরের নাকে যে-ঘ্রাণ ধাক্কা লাগায় তাতে প্রবাদের অর্ধ না হোক অন্তত সিকি ভাগ তো পুরবেই। রাতে খেয়েছিল কোরাল মাছ আর মোটা সেদ্ধ চালের ভাত, মসুর ডাল আর বেগুন ভর্তা। পোড়া আর নানা রকম মাংসের ঘ্রাণে পেটের মধ্যে ফের ক্ষুধা চাড় দেয়। কিন্তু আকবর ভাবে, এই পাগল-করা ঘ্রাণ ফেলে রেখে কেন তারা দূরে দূরে ডাকে! হতে পারে, কুকুরগুলো এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। তারা জানে যে, মানুষেরা কেবল মানুষদেরই খেতে দেয়, আর কেবল ঘ্রাণটাই রেখে দেয় তাদের জন্যে। আগে তা-ও হাড্ডি নামে একটা জিনিস আসতো। কিন্তু সম্প্রতি তা-ও দুর্লভ হয়ে গেছে। হাড্ডি বিদেশে পাঠিয়ে নাকি মানুষ এখন অর্থ উপার্জন করে। সেই হাড় থেকে হয় বোতাম, শোপিস এবং আরো কত কী!

কুকুরদের নিয়ে আকবর সাধারণত ততো ভাবে না। কিন্তু জনশূন্য রাস্তায় বলা যায় মানুষের অনুপস্থিতির কারণেই তার মনোযোগ কেড়ে নেয় কুকুরেরা। একটু পরে কুকুরেরাও হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর তাদের ডাকও শোনা যায় না। সার্কিট হাউজের দেয়ালের সামনেকার বিস্তৃত চৌমুহনীর সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে আকবর রাস্তা পেরোবার উদ্যোগ নেয়। সার্কিট হাউজের গেটের দিকে পাহারায় থাকবে তার সঙ্গী মিজান। দূর থেকে আলো-ছায়ার মেশামেশিতে মিজানকে একটা ছায়ামূর্তির মতো দেখায়। আচমকা একটা শব্দের মতো কানে বাজলে সচকিত আকবর ত্রস্তে ডান দিকে ঘুরে তাকালে আলমাস সিনেমা হলমুখী ভিআইপি টাওয়ারের উল্টোদিকে সার্কিট হাউজের সীমানা  দেয়ালের দিকটাতে দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করতে হয় তাকে। শব্দটা আসে সেদিক থেকেই। আবছায়ামতো মূর্তি কী দেখা গেল দুটো! একটা অস্বস্তি করোটিতে ধাক্কা লাগালেও ভয় ছুঁতে পারে না আকবরকে। পারে না, কারণ রাইফেল রয়েছে তার সঙ্গে। এগিয়ে এলেই এমন প্যাঁদানি লাগাবে যে বাপের নাম ভুলে যাবে দুজনেই। কিন্তু তাতে সুরাহা হয় না সমস্যার। দ্রুত রাস্তা পেরিয়ে দেয়ালের কাছটাতে যেতেই মুখ দিয়ে আচমকা ‘হল্ট’ শব্দটা বেরিয়ে আসে আকবরের মুখ থেকে, যদিও সে শব্দটা উচ্চারণ করতে চায়নি। হ্যাঁ, মানুষ তারা দুজনই এবং দুজনেই যুবক বয়সী। কিন্তু এই উত্তীর্ণ মধ্যরাতে সার্কিট হাউজের দেয়ালের কাছে কী তাদের করণীয় সেটা ভেবে কূলকিনারা পায় না সে। জায়গাটা বেশ সংবেদনশীল বলেই বাড়তি নজর রাখতে হয়। যদিও যেটুকু সংবাদ রয়েছে তাতে আজ সার্কিট হাউজে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লোক থাকার কথা নয়। সরকারি কলেজের দুজন অধ্যাপক আর কোন একটা পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের থাকার কথা রাতে। তাঁদের অবশ্য সশস্ত্র প্রহরার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরেও কথা থাকে, কার মনে কী আছে কে বলতে পারে!

পকেটে থাকা টর্চের আলো ফেলতেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা যুবকমতো দুটো ছেলেই প্রথমে ভয়ার্ত ভঙ্গিতে কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেশ সপ্রতিভতার মেজাজে সটান দাঁড়ায়। দেখেই তাদের পাঠ করতে পারে আকবর। যদিও তরুণ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আগাম কিছু বলা মুশকিল। পরশুদিন দুটোকে ধরেছিল, দিব্যি সদর রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগ্রেটের তামাক ফেলে ভেতরে গাঁজা ভর্তি করে সুখী সুখী টান মেরে যাচ্ছে। কাল একটাকে ধরলো, দেখে মনে হলো কলেজপড়ুয়া কিন্তু ব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেল মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা। কাজেই আকবর তরুণ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে যথেষ্ট খুঁতখুঁতে। বলা যায় আকবরের টর্চের আলো দেখেই সার্কিট হাউজের গেটের দিক থেকে মিজানও এসে পড়ে। ফলে দাঁড়াল দুই বনাম দুই। আরো একটু বিস্তারিত বললে, দুই পুলিশ, দুই রাইফেল বনাম দুই যুবক এবং দুই ফাঁকা হাত। ওদের হাত ফাঁকাই। মানে হাতে বিপজ্জনক কিছু নেই, তবে অন্য কিছু যে রয়েছে সেটা নিশ্চিত। আকবর দেখে এবং মিজানও দেখে – দুই যুবকের হাতেই রয়েছে অবলম্বন। মিজান ততোক্ষণে দৌড়ে এসে এক হাতে একজনকে এবং আরেক হাতে আরেকজনকে পাকড়াও করলে তার কাঁধ থেকে রাইফেলটা মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে দারুণ কৌশলে ডান পায়ের বেড় দিয়ে যুবকদের একজনকে সামলায়। রাইফেল যেহেতু অনেক বেশি মূল্যবান, শুধু তা-ই নয়, রাইফেলের একটা গুলির দামই হয়তো পাকড়াও করা ছেলেটার চাইতে বেশি। তাই সে রাইফেল রক্ষায় ব্যবহার করে হাত এবং নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখা সুকৌশলে যুবককে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে ব্যবহার করে পা। অবশ্য বেশিক্ষণ তাকে কষ্ট হরতে হয় না। ততোক্ষণে নিজের রাইফেলটা কাঁধে মজবুত অবস্থানে অটুট রেখে দুই হাত এবং দুই পা দিয়ে সহযোগীকে সহায়তা দেওয়ার জন্যে এগোয় আকবর।

যুবক দুজনেই সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। যদিও নিরস্ত্রকেও সন্দেহের আওতামুক্ত রাখা যায় না। ওদের একজনের হাতে একটা বড় রঙের কৌটো এবং প্রমাণ সাইজের একটা ব্রাশ। দ্বিতীয়জনের হাতে একটা ক্যামেরা। দেখে দামিই মনে হয়। সম্ভবত প্যান্টাক্স টাইপের ক্যামেরা কিংবা ক্যাননও হতে পারে। জিনিসগুলিকে সন্দেহ করার মতো কিছু না হলেও সময়টা যেহেতু মধ্যরাত, রাস্তা জনশূন্য এবং জায়গাটা সার্কিট হাউজের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ স্থল, সেহেতু যুগপৎ আকবর এবং মিজান দৃষ্টিকে সন্দেহের বাঁকা বড়শি বানিয়ে তাতে গেঁথে নেয় দুজনকেই। এদিকে রঙের কৌটো এবং ব্রাশ দেখে বলা যায় তাৎক্ষণিক ভাবনার সূত্রে সার্কিট হাউজের দেয়ালের দিকে চোখ পড়ে আকবরের। বোঝা গেল, যুবকেরা রাতের অন্ধকারে ‘চিকা মারতে’ বেরিয়েছে। কিন্তু মোটা সাদা হরফে উৎকীর্ণ দেয়াললিখনের মর্ম বোঝা আকবর-পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয় না।

 সম্ভব হয় না মিজানুর রহমানের পক্ষেও। ব্রাশ ও রঙের কৌটো হাতে ছেলেটারই কাজ হবে সেটা। হস্তাক্ষর বেশ সুন্দর ও শিল্পিত। তবে দেয়াললিখন বাংলা নয়, ইংরেজিতে। ভাবনায় পড়ে আকবর। ইংরেজিতে লেখা দেয়াললিখন কার জন্যে! তবে কী যুবকেরা কোনো বিদেশি এজেন্ট! নইলে সর্বজনবোধ্য মাতৃভাষা রেখে ভিন্ন ভাষায় কেন লেখে লিখন! সাদা রঙের পুরু ব্রাশের আঁচড়ে ওরা দেয়ালে লিখে রেখেছে – হ্যাং তসলিমা নাসরিন অ্যান্ড আবদুল বাতেন।

আকবর কিংবা মিজান দুজনের কারো মাথায় ঢোকে না, প্রথমত ইংরেজিতে দেয়াললিখনের মর্ম; দ্বিতীয়ত, এতদিন পরে হঠাৎ আবার এরা কেন তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি চায়! ওর ফাঁসি এরই মধ্যে এতো লোকে এতোবার চেয়েছে যে, এখন সেসবের কথা লোকেই ভুলে গেছে। মাঝে-মাঝে মনে হয়, ফাঁসি ওর হয়েই গেছে। না হলেও  কেন তার ফাঁসি চায় তারা, আবার সেই ফাঁসি বাংলা ভাষায় না চেয়ে চায় ইংরেজিতে, সেটা রহস্য বটে। এবং সর্বশেষ তৃতীয়ত, কে এই আবদুল বাতেন? তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? নাকি তসলিমা বিয়ে করেছে আবদুল বাতেনকে? কিন্তু সেই আবদুল বাতেন কী দেশেই থাকে, নাকি বিদেশে? যদি বিদেশে থাকে তাহলে তো আর তাকে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ফাঁসি চাওয়া যায়। লোকেরা যখন-তখনই ফাঁসি চাইতে পারে। চাইলেই তো আর ফাঁসি এসে হাজির হয় না। তার জন্যে আচার লাগে, বিচার লাগে। সেটার ব্যবস্থা করার জন্যে রয়েছেন বিচারকেরাই। তোরা এই মধ্যরাতের অন্ধকারে ফাঁসি চাওয়ার কে, তাও আবার ইংরেজিতে!

থানা-হাজতের ভয় এবং খানিকটা লাঠ্যৌষধের হুমকি দেখালে যুবকেরা প্রথমটায় অনড় থাকলেও শেষে বাধ্য হয় স্বীকারে। রঙের কৌটো আর ব্রাশ হাতে ছেলেটার গ্রামের এক ভাই বিদেশ যেতে চেয়েছিল প্লেনের লেজের কোটরে লুকিয়ে; কিন্তু বিদেশে সে পৌঁছালেও জীবিত পৌঁছাতে পারে না। সে জানতো না প্লেনের চাকার গর্তে মানুষের পক্ষে যাওয়া অসম্ভব, চাকার গর্তে শুধু চাকাই যায়। তারপর তাদের গ্রামেরই তিনজনের মৃত্যুর খবর পেল কিছুদিন আগে। ওরা অনেকদিন আগেই মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মারা গেছে এবং তাদের সমাধি হয়েছে মালয়েশিয়ার অরণ্যে, যেখানে আরো বাঙালি যুবকের গণকবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া তাদের গ্রামের এবং তাদের আশেপাশের গ্রামের অনেক ছেলে ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে ভাসতে ভাসতে ডুবে পৌঁছে গেছে সমুদ্রের তলদেশে। কাজেই সে ভেবে দেখেছে এমন সাধের মূল্যবান জীবনটাকে কোনোভাবেই এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। বহু চিন্তা আর বুদ্ধি করে সে তার উদ্ভাবনক্ষম মাথার ভেতর থেকে বের করে এনেছিল বুদ্ধিটাকে। তার গ্রামের ছেলেরা এতো ওস্তাদ যে তারা সবাই চাকরি করে ধোলাইখালে। ওরা প্রায়ই বলাবলি করে, ড্রোন হেলিকপ্টার অ্যারোপ্লেন কোন ছার, তারা চাইলে রকেটও বানিয়ে ফেলতে পারে। কদিন আগে ওদেরই একটা ধরা পড়লো পুলিশের হাতে। বছর পাঁচেক নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে শেষে ধরা পড়লো। ফার্নিচারের রং, স্পিরিট আর পচা পানি মিলিয়ে বিদেশি মদ বানাতো। কী ভয়ংকর বুদ্ধি ছেলেটার। এক বোতলে খরচ ত্রিশ টাকা আর এক বোতল বিক্রি করতো এক হাজার টাকায়। সে তুলনায়, ছেলেটা বলে, আসলে ছেলেটার নামই আবদুল বাতেন,

সে-তুলনায় তার কাজটাকে ততো খারাপ ভাবা ঠিক না। সে শুধু সার্কিট হাউজের সামনেকার বিশাল দেয়ালটাকে অবলম্বন করে নিজের ভাগ্যটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

বুদ্ধিটা কেউ তাকে দেয়নি। সেটা তার নিজেরই মাথা থেকে বেরোয়। যদি সেজন্যে কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে দায়ী তার গ্রামের মানুষদের প্রবল উদ্ভাবনক্ষমতা। ভেবেছিল, তসলিমা নাসরিন এবং আবদুল বাতেনের একসঙ্গে ফাঁসি চাইলে ইউরোপের যে-কোনো দেশই সে আবদুল বাতেনকে ‘অ্যাসাইলাম’ মানে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে দেবে সহজেই। ক্যামেরা হাতে তার বন্ধুটি যদিও তখনো স্ন্যাপটা নিতে পারেনি। ততোক্ষণে সে আবদুল বাতেন এবং তার ক্যামেরাবন্ধু আকবরের দৃষ্টিতে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছিল। তবু বলতে হবে আবদুল বাতেনের কার্য প্রায় সিদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছেছিল। সে যে কেবল সাদা রঙের কৌটো নিয়েই বেরিয়েছিল তা নয়। আরেকটা রঙের কৌটোয় ছিল লালচে রং। ক্যামেরায় কোনোরকমে ছবিটা তুলেই সেই লালচে রঙের পোঁচ দিয়ে দেয়ালের লিখনটাকে সে করে দিত অদৃশ্য – একেবারে ভোজবাজির মতো।

আবদুল বাতেনের পরিকল্পনাটা সূক্ষ্মই ছিল বলা যায়। ইউরোপের কোনো একটা দেশে সে যেত ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে। তারপর ব্যাগ থেকে এই ছবিটা বের করতো – ‘হ্যাং তসলিমা নাসরিন অ্যান্ড আবদুল বাতেন।’ ইউরোপের লোকেরা ভাবতো, কী ভয়ংকর দেখো তো। নাহ্, ছেলেটাকে তো এভাবে মরতে দেওয়া যায় না। আর, আবদুল বাতেন কেন সবাই জানে, তসলিমা পৃথিবীবিখ্যাত। সে কেবল তার সেই খ্যাতিটাকে পুঁজি করতে চেয়েছিল। মোটকথা, তসলিমার বিশ^খ্যাতি আর তার স্থানীয় দেয়াল – এই দুটোর সমন্বয়ে সে তার বিদেশ-অভিবাসকে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। এখন এই পুলিশ দুটো প্রবল বাধার প্রাচীর হয়ে ভেস্তে দিলো সবকিছু।

যা হোক, আবদুল বাতেন ও তার সঙ্গীকে বিশ^াস করে আকবর এবং মিজান। সেই বিশ^াসের ফলেই তারা বাতেন ও তার সঙ্গীকে নিয়ে যায় থানার দিকে। উদ্ভাবনক্ষম যুবক আবদুল বাতেন এবং তার ক্যামেরাবন্ধু তখন মনে-মনে বুদ্ধি আঁটতে শুরু করেছে, কী করে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া যায়। যদিও তাদের উভয়ের বুদ্ধি তাদের মাথার মধ্যেই নিহিত থাকে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের পৃথক-পৃথক বুদ্ধির মেলবন্ধন ঘটতে পারে না। তবে পুলিশ কী আর সারাক্ষণ পাহারা দেবে তাদের? একবার না একবার নিশ্চয়ই তারা তাদের একা রেখে যাবে। আবদুল বাতেন ভাবে, আরেকটু হলে সে ইউরোপের যে-কোনো একটি দেশে যাওয়া এবং গিয়ে স্থায়ীভাবে থাকাটা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। সে-তুলনায় থানা থেকে বেরোনো তো ডালভাত!