বাবা ও বেলিফুলের গন্ধ

আমাদের একটা স্টেশনারি দোকান আছে। পেছনেই দু-ঘরবিশিষ্ট ছোট্ট একটি উঠোন। উঠোনের একপাশে হিমঠান্ডা ছায়ায় একটি বেলিফুলের গাছ, পাশেই আমার ঘর। একটা বিছানা ছাড়া পা ফেলার মতো তেমন জায়গা নেই। এতে কোনো সমস্যা হয় না। আমার চাহিদার কাছে যেটুকু প্রাপ্তিযোগ, তা নিয়ে কখনো কোনোদিন মাথাব্যথা ছিল না। বলতে কী, অনেকটা গা-সওয়া, বর্ণহীন পানির মতো যেখানে যেমন রং, সেখানেই আমূল মিশে যাই।

বাবার বয়স হয়েছে। খুকখুক করে কাশেন। জন্মগত অভ্যাসের কারণেই হয়তো-বা কথা বলেন খুব কম। আমিও অনেকটা এরকম। তবে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি। অনেকটা এরকম, চলমান ঘটনাপ্রবাহে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আনন্দে কখনো-বা আনমনে বিড়বিড় করে কথার পিঠে কথা ভাঙি। কেন যে রুদ্ধশ্বাসে সবার মতো খলখল করে কথা বলতে পারি না, একটা আপনভোলা ভয়ে গলা কেমন বুজে আসে। চারপাশজুড়ে মানুষের পদচারণায় ভয়াল ভীতিকর একটা অনুভব ঘিরে ধরে।

মাকে মনে পড়ে খুব। বাপ-ছেলের নীরবতায় মা ছিলেন পুরো উল্টো। কথা ও কাজের গতিশীল পরম্পরায় সংসারটা পরিপূর্ণ করে তুলতেন। এখন বাবা ও আমার প্রায়ান্ধকার সংসারে মাহারা কেমন একটা মনোপীড়নের নৈঃশব্দ্য! নীরবে কেবল সময় ডিঙিয়ে যাওয়া।

কাজের ছুটা বুয়াটা একদিন আসে তো তিনদিন খবর নেই। তখন হোটেল নয়তো নিজের অপরিণত হাতে কোনোরকম সিদ্ধ ভাত-ভর্তা-ভাজি দিয়ে চলিয়ে দিই। এখন স্টেশনারি দোকান বেড়েছে প্রচুর। বাবা আগের মতো পারেন না। আমিও না। গুরুগম্ভীর বলেই হয়তো আমাদের শ্বাসরুদ্ধ অন্তর্জগতের নীরব দহনে বাঁচার স্বস্তি ক্রমশ প্রকট হয়ে যাচ্ছে।

রাত গভীর হলে প্রকৃতির নৈঃশব্দ্যে মনে মনে কেমন স্বস্তি-তরঙ্গ জাগে। একটা উদাসীনবোধ যেন-বা বোধের বিপরীত, সময় কিংবা বয়সের কাছে উদ্দীপক সুখের নীরব রক্তরাঙা ভোর জেগে ওঠে। আহা, মধ্যরাতে এ যেন নিজের নিশ্বাসের সঙ্গেই নিজের স্বস্তি-স্বস্তি খেলা। বাবা ও-ঘর থেকে কখনো খুকখুক কাশি দিয়ে ছন্দ ভেঙে দিলেও, গাঢ় অন্ধকারে বেলিফুলের পাশে বসে আমার, নয়তো ফুলের সুঘ্রাণে, নয়তো গাঢ় তন্ময়তায় বহু বৈচিত্র্যময় বিমূর্ত একটা পেইন্টিং যেন চোখে ভাসে।

দিনের বেলা আমরা দুটি মানুষ একে অন্যের পাশে থেকেও কেমন নিশ্চুপ। এক-আধটা কথা যদিও হয়, বড়ই কৃত্রিম, অন্তঃকরণে তেমন একটা মায়াটান বোঝা যায় না। ব্যবসা প্রায় লাটে উঠেছে। সারাদিনের ওষুধ খরচা, চা বা টুকিটাকি সরঞ্জামের সীমিত ব্যয়টুকু কমে এলেও, কেন যেন কারো মাঝেই ন্যূনতম চিন্তার ভাঁজ নেই। এরই মধ্যে অকস্মাৎ একদিন গ্রাম থেকে মুক্তা হাজির। মুখটা ফ্যাকাশে শুকনো। মাথাটা ঈষৎ নিচু হয়ে আছে ভরাট কোনো চিন্তায়। ভেতরে যেতে যেতে বেশ কটকটে গলায় বলল, ছোট ভাই ইট্টু হুনেন তো –

বাবা কিছু দেখলেন বলে মনে হলো না। রাস্তায় চলাচলরত মানুষ ও গাড়ির দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। বেলিফুল গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে ওর পাগল বাচ্চাটা কু কু করে কিছু বলতে চাইছে। আমি যাওয়ামাত্র মুক্তা নিচু মাথায় ভরাট চিন্তার বোঝাটা ছরছর করে চোখের জলে গলিয়ে দেয়। একটু নীরব থেকে বলল, এইহানে কয়দিন থাকবার দিবা?

জানি না, তোর চাচাকে বল।

চিন্তাটা ফের প্রকট হলো অনিশ্চয়তায়। বাবার দূরসম্পর্কের ভাতিজি। ওর মা গতবছর মারা যান। সংসারে গ্রাম্যজীবনের স্বস্তিহীন অনিশ্চয়তা নিয়ে কত যে মায়ের কাছে ছুটে এসে হাউমাউ করতো। সেসব পুরনো দিনের ঘটনা আবর্জনার মতো ছুড়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেই বলি, তোর স্বামী কই? উত্তরে ও শরীরের কতগুলো ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বোবা বনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর পাগল ছেলেটি একটি একটি করে বেলিফুল ছিঁড়ছে। মুক্তা ওকে টেনে ধরতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে হাত নাচাতে থাকে। হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে  ঢোকেন বাবা। মুক্তার অনিশ্চিত ভাবনার থইথই জলোমুখে ফ্যাকাসে ছায়া ঘনীভূত হয়। বাচ্চা ছেলেটি দৌড়ে বাবাকে ধাক্কা মেরে খিলখিল করে হাসতে থাকে। পড়ে যেতে যেতে হাতের লাঠি দিয়ে নিজেকে কোনোরকম সামলে নিয়ে বাবাও হেসে ফেলেন। ছেলেকে চপেটাঘাত করার উঁচু হাত প্রবল বিস্ময়ে বুজে আসে মুক্তার। আমিও অবাক হলাম। পরিবেশের মোহময়ী নীরব আনন্দে প্রাণের বেসুমার ধকল যেন শান্ত হলো সবার।

বাসায় ঠাঁই হয়ে গেল মুক্তার। সমস্যায় পড়ে গেলাম আমি। রাতগভীরে আত্মকথনে চির ধরে। সময়-অসময় ছেলেকে ধমকে ওঠে, চড়ও বসিয়ে দেয়। পাগল হলেও অনাথের মতো কু-কু করে কাঁদে ছেলেটি। এদিকে আমি রীতিমতো অসাড় কিংবা অপ্রতুল ঢঙে বেলিফুলের ঝরেপড়া ছোট ছোট পাপড়ি দেখি। অপার আলস্যে বুক ধকধক করে কেঁপে উঠলেও অবাক হই এই ভেবে যে, বাবা পুরো নির্বিকার, যেন তাঁর নিঃসঙ্গতায় হইচই শব্দপুঞ্জের আনন্দ স্বস্তির হাওয়া দিচ্ছে।

এদিকে পাশের বাড়ির লম্পট শাহাজাদা ছেলেটি মুক্তার বাড়ন্ত দেহের দিকে তাকিয়ে নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। প্রথম প্রথম ব্যাপারটি বিষময় তেতো লাগলেও এখন এটা নিত্যনৈমিত্তিক কিংবা পরিবেশভিত্তিক হাস্যরসের মতো। মুক্তাও লাজুক মুখে প্রশ্রয়ের ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা জাগিয়ে, সহনীয় সহ্যের দুষ্টু-দুষ্টু বিনোদন পাচ্ছে যেন।

কয়েকদিন পর বাবার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। একে তো সাংসারিক দৈন্য, তার ওপর চিকিৎসার ব্যয়ভারে চিন্তার সঙ্গে চিন্তার সাংঘর্ষিক টানাপড়েনে, গোটা সংসারে, বৃষ্টিহীন অনাবাদি জমির মতো ফাটল ধরে। মুক্তা একদিন কাতর কণ্ঠে বলে, ছোট ভাই, কাকুরে ডাক্তার দেহাইবা না?

নীরবতা ভেঙে হাঁপাতে হাঁপাতে বাবা বলেন, রাস্তায় নাম, ডানে-বাঁয়ে দেখ কিছু টাকা লোন পাওয়া যায় কি না।

কথা শুনে নিজের যোগ্যতা আকস্মিক বজ্রপাতের মতো ফুঁসে ওঠে। মনের ভেতর  সীমাহীন আক্রোশ প্রলম্বিত হয়ে নিজের রাতজাগা নীরব আত্মদর্শনের উল্টোপীঠটা মেলে যায়। ধেই ধেই করে ধেয়ে আসছে অজস্র ব্যর্থ চিরকুট। তবু সময়ের রাস্তা ধরে বারবার সাফল্যের প্রবঞ্চিত সাঁকোটা কেন যে ধসে গেছে! পারাপারের বৈচিত্র্যে প্রগাঢ় চঞ্চলতা থাকলেও প্রাণের অপার্থিব গন্ধ কখনো পেয়েছি বলে মনে হয় না।

বাবা বলেন, শুনতে পাসনি?

শুনেছি।

বাবা চুপ করে থাকেন। পাঁজরের হাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে, যুক্তি-বুদ্ধির আপেক্ষিক বিশ্লেষণ হয়ে ওঠে নিয়তিনির্ভর। রাস্তায় নেমে নিকট পড়শীদের কাছে সমস্যার কথা বললাম। এমনিতেই পাড়ার অনেকের কাছে আমি অর্ধপাগল, তার ওপর অকস্মাৎ হাত পাতার বিষয়টিকে নিছক পাগলামি বলে হেসে উড়িয়ে দিলো কেউ কেউ। কেমন একটা হাস্যরসের মতো সরল অথচ বাঁকা কিংবা গোটা বাঁকা পথের আমূল বোধে নিয়ে সহসা সচকিত প্রাণের ভেতর নতুন নতুন পথ প্রসারিত হতে থাকে। একজন রস করে বলে, বিকাশ নাম্বার থাকলে দাও, পাঠায়া দিমুনি। অন্য আরেকজন কানের সামনে মুখ এনে বলে, তুমি নিজের ডাক্তার দেহাও, পুরা আউট হয়া যাইতাছ গা।

সময়কে অসময়োচিত ধাঁধায় বিচারবুদ্ধিহীন উজবুকের মতো এতোকাল পর নতুন করে আমি যেন নিজেকেই নিজে দেখতে পাচ্ছি প্রতিবিম্বের মতো। অপরিণামদর্শী নির্বোধ যুবকের ব্যর্থ অভ্যুত্থান –

নানারকম প্রশ্নবাণে জর্জরিত মন দুরন্ত গতির মতো পা ঝটকাতে ঝটকাতে সোজা বাবার বিছানার পাশে এসে হাঁপাতে থাকি।

কি রে, কিছু হলো।

না।

এই প্রথম আড়ষ্টতা ভেঙে গড়গড় করে পুরো ঘটনা এক নিশ্বাসে খুলে বললাম। বাবা দীর্ঘক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যেন নিজের ছেলেকেই চিনতে পারছেন না। এরপর চোখের ক্রোধে কেমন রক্তাভ রেখা, শক্তমত্ত কোনো আগন্তুকের নীরব উন্মত্ততায় মেরুদণ্ড যেন-বা মটমট শব্দ করে উঠল, একটা সূক্ষ্ম প্রতিহিংসা যেন নিকষ কালো উঠোনের সীমানা অতিক্রম করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমি দ্রুত বেলিফুল গাছটার পাশে এসে দাঁড়ালাম। পেছন পেছন মুক্তা এসে বলে, একডা কথা রাখবা ছোটু ভাই?

কী?

তুমি ইট্টু ঘুইরা আহো।

কেন?

আমার কথাডা রাহো না।

মন্দ বলেনি মুক্তা। একটু বাইরের হাওয়া দরকার। বেরিয়ে পড়লাম। আজ আমার কোনো গন্তব্য নেই। নিঃসাড় আমেজে পথ ভেঙে ভেঙে কেমন একটা ইহজাগতিক নেশায় মনে হচ্ছে, প্রকৃতির শূন্যতায় আমার অস্তিত্ব ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছে, একটা ঠিকানা চাচ্ছে, যেখানে মনোজাগতিক দোলায় সময়ের কোনো হিসাব থাকবে না।

ফুটপাতে চা-দোকানের একটা বেঞ্চিতে দীর্ঘসময় বসে থাকার পর মুক্তার মুখটাই মনে পড়ে। বাইরে পাঠানোর জন্য এ কেমন তড়িঘড়ি প্রবণতা। কানে যেন শুনতে পাচ্ছি কথাটির বিকৃত স্বর, তুমি ঘুইরা আহো -, ঘুই-রা-রা আহো-ও-ও, তু-মি! বিকৃত স্বরের দুর্বোধ্য ভার এতো বেশি!

বাসায় ফিরে অবাক হয়ে তাকালাম। সেই লম্পট শাহাজাদা ছেলেটি ডাক্তার এনে বাবাকে দেখাচ্ছে। সাহায্য করছে মুক্তা। আমাকে দেখে শাহাজাদা মোটেও বিচলিত হলো না। তবে মুক্তা একটু লাজুক হেসে বাবার প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়ে। বাবা আধশোয়া, মুক্তার কাঁধে মাথা। আমি আত্মবিস্মৃত উদাস দুপুরে কেমন যেন চমক-ভাঙা স্বপ্নঘোরে টলছি।

ধীরে ধীরে বাবা সেরে ওঠেন। শাহাজাদা ছেলেটির যখন-তখন এ-বাসায় প্রবেশাধিকার বেড়ে যায়। কখনো একা, কখনো বন্ধুদের নিয়ে। বাবা স্টেশনারি দোকানে নিছক দৈন্য কিংবা বলা যায় এক টুকরো শুকনো রুটির মতো জগৎজোড়া অভিজ্ঞতার লাল টকটকে চোখ নিয়ে বসে থাকেন। বিপরীতে, দিনে দিনে মুক্তার বাড়ন্ত দেহ স্তরে স্তরে চর্বির বাহুল্য নিয়ে, সুখের লালিত্য নয়তো প্রীতিমুগ্ধ সলাজ আনন্দে চমকাতে থাকে। পাগল ছেলেটির প্রতি অযত্ন বহুগুণ বেড়ে যায়।

কখনো বিছানায় পড়ে আনমনাভাবে টের পাই, মধ্যরাতে বেলিফুল গাছের পাশে মুক্তা আর শাহাজাদার ফিসফিস শব্দ, খিলখিল হাসি। দু-কান চেপে ভাবি, বেলিফুল গাছের শুকনো শেকড়গুলোর হয়তো জলতেষ্টা চেপেছে। মসৃণ ত্বকে আঁচড় কাটার মতো একটা দাগ একটা সুঁচবিদ্ধ দগ্ধবোধ নিয়ে নিজের সামর্থ্যরে কথা ভাবি, মেলাতে পারি না কিছুই। কূলহীন নদীর মোহনায় দুলতে দুলতে কত কী যে ভেসে যায়!

পরদিন শাহাজাদা কয়েকজন বন্ধু নিয়ে বাবার বিছানায় বসে তাস পিটাচ্ছে। মুক্তা রান্নাঘরে। পোলাও চাউলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। বাবাকে দেখা যাচ্ছে না। নিজের ঘরে আসতেই অবাক হলাম। বাবা বিছানায় নির্লিপ্ত মনে শুয়ে মুক্তার ছেলেটির সঙ্গে দুষ্টুমি করছেন। এমন হাসিখুশিভরা মুখটি সুখের ভেতর থেকে যেন টেনে ছিঁড়ে আনছে মোহময়ী সুখের ভিন্ন বিলাস।

বেরিয়ে পড়তে গিয়ে চমকে যাই। বাসার সামনে বেশকিছু লোক। উল্টোদিকের বাসার এক মুরুব্বি রাগত স্বরে বলে, তর বাপরে ডাক।

হইচই শুনে বাবা এসে বেশ নির্বিকারভাবে বসে পড়েন। অন্য একজন গলা চড়িয়ে বলে, কী পাইছো মিয়া, পাড়ার কি ইজ্জত নাই। বুইড়া বয়সে মাইয়া লয়া ব্যবসা, ছিঃ ছিঃ!

শাহাজাদা বন্ধুসহ ঘাড় চুলকাতে-চুলকাতে বেরিয়ে পড়ে। বাবা ক্ষ্যাপাটে গলায় ডাকেন, শাহাজাদা!

জি আঙ্কেল!

কই যাও, ভেতরে ঢুকো, ফুর্তি করো।

আমার শরীর নিসপিস করছে। বাবা যেন ওদের হট্টগোলের ভেতর চড়া সুদ কিংবা ঘুষের বাণিজ্যভিত্তিক স্বার্থপর গন্ধ পাচ্ছেন। কাঁচুমাঁচু শাহাজাদাকে ফের বলেন, যাও, তাসে ঠিকমতো শাবল দাও। ফুর্তি করো।

বুইড়ার মাথা ঠিক আছে তো – বলেই কেউ কেউ ভেতরে যেতে চায়। বাবা তাঁর লাঠির সীমিত বাধায় বেশ নম্র কণ্ঠে বলেন, খবরদার, আমি ফুর্তিবাজ। ফুর্তির ব্যবসা করি। কোনো শয়তানের ধার ধারি না।

তবু হুড়মুড় করে কেউ কেউ ভেতরে যাওয়ার পথে আচমকা ধাক্কা খেয়ে বাবা ছিটকে পড়ে যান। দেয়ালে মাথায় ভীষণ চোট খেয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে থাকে। হাঁপাতে হাঁপাতে চিৎকার করে বলেন, কোনো শয়তানের ধার ধারি না, আমি ফুর্তিবাজ, আমি ফুর্তি – ঝরেপড়া রক্ত বাবার ক্রোধকে দমাতে পারছে না। যেন অনাকাক্সিক্ষত দৃশ্যের গভীর ও অর্থপূর্ণ সাহসী চিৎকার! বাবাকে বুকে জড়িয়ে বলি, আমি গর্বিত, কারণ তুমি মহৎ! বাবার কথা শোনা যাচ্ছে না। ক্রোধান্বিত ঠোঁট জোড়া নড়ছে তো নড়ছেই। কে যেন পেছনে আঙুল দিয়ে একটু একটু ঠেলছে। দ্রুত তাকাতেই মুক্তার পাগল ছেলেটি মুখ বাঁকিয়ে  খলখল করে হেসে ফেলে।