মৃত্তিকার মায়া

প্রণব মজুমদার

সাবিত্রীরা কেউ যেতে চায়নি। নিজেদের জমিজিরাত ও ভিটেমাটি ছেড়ে দেশান্তর কেন? প্রশ্নটা সাবিত্রীরও। মাটি কামড়ে থাকতে চেয়েছিল ওরা। পিতার মতো অতিশয় মাটির মায়া সাবিত্রীরও ছিল। দেশ ছেড়ে যেতে সেদিন একটুও মন সায় দেয়নি তার। বারবার বাবাকে বলেছে, ‘নতুন অচেনা জায়গা! তোমাদের ছেড়ে কীভাবে সেখানে থাকবো?’ উত্তরে বাবা বলেছেন, ‘দিনকাল খারাপ! কখন কী হয়ে যায় রে মা! বাবা-মা হলে বুঝতি! বাবা হয়ে তোর অমঙ্গল আমি কী করে চাই? কয়েক মাসের জন্য পিসির কাছে বেড়াতে যাবি। ভালো না লাগলে কিছুদিন পর আমিই গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো।’  নিকট প্রতিবেশীদের দিনের পর দিন নানা অত্যাচার সাবিত্রীদের শেষ পর্যন্ত বাধ্য করেছিল দেশত্যাগে। সম্মানটাকে অধিক মূল্যবান মনে করতেন সাবিত্রীর বাবা সত্যবান। বাবাকে মা প্রায়ই বলতেন, ‘মরতে হয় নিজ দেশেই মরবো। তবু ধর্ম বিসর্জন দেব না। হার মানবো না ওদের কাছে।’ মায়ের এমন মন্তব্যে সমর্থন দিত সাবিত্রী। চলে যেতে হবে – এই ভাবনায় দেশত্যাগের আগে প্রায়ই মূর্ছা যেত সাবিত্রী। চলে যাওয়া ও বিবেকের কাছে আত্মসমর্পণের চিন্তায় কত বিনিদ্র রাত কেটেছে তার।  

কি না ছিল ওদের সুখের সংসারে – দিঘি, পুকুরের মাছ, দুই একর ফসলি জমি, গোলাভরা ফসল, প্রায় দেড় বিঘা জমিতে বসতঘর, গাভির দুধ ও বাগানের ফল – সবই পরিপূর্ণ ছিল সত্যবান আচার্য পরিবারের। মাধ্যমিকের গণিতের শিক্ষক সত্যবানের চার সন্তান। দুই কন্যা-দুই পুত্রের মধ্যে সাবিত্রী রূপে-গুণে অদ্বিতীয়। পড়াশোনায়ও সবার চেয়ে ভালো। বড় মেয়ে শিবানী এসএসসি পাশ করেছে। তাকে আরো পড়ানো বাবা নিরাপদ মনে করলেন না। এসএসসি পাশের পরই বিয়ে দিয়ে দিলেন পাশের গ্রামে। পাত্র নিবারণ কাঠ ব্যবসায়ী। এইচএসসি পাশ। ব্রাহ্মণের ছেলে। দেখতেও সুন্দর। তাদের একটি ছেলে।

সত্যবানের ছেলে সুধাংশু ও সত্যব্রত মাধ্যমিক বিদ্যালয় পেরোয়নি। ক্ষীণকায়া সাবিত্রীর গায়ের রং দুধে-আলতা। গ্রামের স্কুল থেকে সে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিশু শ্রেণি থেকে কলেজ পর্যন্ত বরাবরই প্রথম সে। নিশ্চিন্তপুর গ্রামে আচার্য পরিবারের মতো ভদ্র, শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবার আর নেই। স্বাবলম্বী থাকার কারণে আচার্য পরিবারের প্রতি বিশেষ নজর ছিল গ্রামবাসীর। লোভ ছিল ওদের সম্পদের ওপরও। বেশির ভাগ লোকই ওদের সুনজরে দেখতো না। শান্তিপ্রিয় পরিবারটির প্রতি ওপরে ওপরে মিষ্টি ব্যবহার দেখালেও ভেতরে অনেকেই হিংসায় জ¦লে যেত। সম্পত্তি দখলসহ অনেক অন্যায়-অবিচার নীরবে সহ্য করছেন সত্যবান। বর্গাচাষের জমির ফসলের ন্যায্য ভাগ না পেলেও কষ্ট পেত না সাবিত্রীরা। হাসিমুখে মেনে নিত। বেড়া কেটে গরু চুরি, পূজার কাজে বাধা দেওয়া, মাছ নিয়ে যাওয়া, দিঘি ও পুকুরে বিষ দিয়ে জল নষ্ট এবং সম্পত্তি বেদখল – এসব অন্যায় মেনেও সত্যবান থাকতে চেয়েছেন নিজ ভিটায়। কিন্তু যুবতী কন্যাদের ওপর কুদৃষ্টি ও তাদের প্রতি অশোভন আচরণ পিতা গ্রহণ করতে পারেননি। নিশ্চিন্তপুরে আচার্য পরিবারের শান্তিতে বসবাস অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সত্যবান পরোপকারী এবং অত্যন্ত সামাজিক হলেও পরিবারটিকে দশ বছরের মধ্যে একে একে সব ছেড়ে চলে যেতে হয় ভারতের চব্বিশ পরগনার মধ্যম গ্রামে।

সত্যবানের পরিবারের প্রথম দেশান্তরি সদস্য সাবিত্রী রানী আচার্য। মাঘ মাসের কুয়াশাছন্ন ঘটনাবহুল সেই দিন। স্মৃতিময় ১৯৮৯। অষ্টাদশী উচ্ছল সাবিত্রী। যাওয়ার সময় চোখ ছলছল করছিল তার। রাতভর কান্নায় চোখে তখন আর জল আসছিল না। চোখের নিচটা সাবিত্রীর কালো হয়ে গেছে। বেশ ফর্সা বলে দূর থেকেই তা বোঝা যায়। সাবিত্রী চলে যাবে – এজন্য শিবানী ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছে। যাওয়ার আগের রাতে মা ও দিদিকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল সাবিত্রী। অনেকক্ষণ। মাকে অনুরোধ করছিল বাবাকে বলতে, তিনি যেন ওপারে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত পাল্টান। কিন্তু পিতা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। চটপটে রূপসী কন্যা তাঁর। তিন মাইল হেঁটে তিনি ভোরে তাঁর কর্মস্থল বিদ্যালয়ে যান। ফেরেন সন্ধ্যায়। সাবিত্রীকে চোখে চোখে রাখতে পারেন না। গ্রামের বখাটে ছেলেদের উৎপাত বেড়েছে। নিজ কন্যার নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক সত্যবান। কাজের চাপ এ-সময়টায় কম। মধ্যমগ্রামে বোনের কাছে রেখে আসবেন – এই সিদ্ধান্ত সত্যবান কয়েক মাস আগেই নিয়ে রেখেছেন। পিসির গল্প অনেক শুনেছে সাবিত্রী। ছোটবেলায় কল্যাণী পিসির কাছেই নাকি বড় হয়েছে সে। শিবানীর সঙ্গে সাবিত্রীর সামান্য বয়সের ব্যবধান। বাল্যবেলায় মা সুলেখা সামাল দিতে পারতেন না পিঠাপিঠি দুজনকে। তাই অবিবাহিত পিসিই সাবিত্রীকে শিশুকালে দেখাশোনা করেছেন।

দেশত্যাগের বিষয়টা সাবিত্রী নিশ্চিন্তপুর থাকতে বুঝতে পারেনি। ভিটেমাটি ছেড়ে আসার কদিন আগে নুসরাত আপা ও সরস্বতীকে বলেছিল, ‘কয়েকদিনের জন্য পিসির বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি।’ সে ভেবে নিয়েছিল প্রায় মাইলখানেক পথের মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির ক্লাস এ-সময়টায় বন্ধ। চাপ নেই পড়াশোনার। তাই পিসির কাছে বেড়িয়ে আসাই যায়। ও কি জানতো এটাই ওর দেশান্তর হয়ে যাওয়া? প্রিয় নুসরাত আপা, বান্ধবী জুলেখা, সরস্বতী এবং শাহীন ও নেপাল স্যার – এদের ছেড়ে যাওয়া সত্যি কষ্টকর ছিল তার  জন্য। প্রতিদিনের হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়ে খাবার দেওয়া, হাঁসগুলোকে দিঘি বা পুকুরের জলে ছেড়ে দেওয়া, নিজেদের গাছের বরই, তেঁতুল, আম ও জাম পেড়ে খাওয়া – এসব ভোলা কী করে সম্ভব ছিল সাবিত্রীর? তবু বাবার সঙ্গে যেতে হয়েছিল তাকে।

তিরিশ বছর পর নিশ্চিন্তপুরে মাটির ঘ্রাণ এবং বন্ধুত্বের মায়ায় অন্য দেশ থেকে চলে এসেছে পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের সাবিত্রী। এসে সে যা দেখছে তা বিস্ময়কর। এমন চাক্ষুষ বাস্তবতা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। বারবার মনকে শান্ত করতে চাইছে সাবিত্রী। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের প্রায় সব বদলে গেছে। নিশ্চিন্তপুর নাম পাল্টে দেওয়া হয়েছে। নগরের ছোঁয়া লেগেছে বর্তমান ইসলামপুরে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, একাধিক ব্যাংকের শাখা, রাস্তার দুধারে একের পর এক মসজিদ ও মাদ্রাসা, রকমারি দোকান, রাস্তাঘাট এবং বড় বড় দালানশোভিত ইসলামপুর, মানে সাবেক নিশ্চিন্তপুর, যেন এক মডেল শহর। এসব  এক বিস্ময়কর বাস্তবতা সাবিত্রীর কাছে।

বয়সে সাবিত্রীর চেয়ে চার বছরর বড় নুসরাত সুলতানা। শৈল্পিকভাবে ঘর গোছাতে সাবিত্রী যেমন সিদ্ধহস্ত, তেমনি মেয়েদের সাজাতে বেশ দক্ষ সে। জ্যেষ্ঠ বান্ধবী নুসরাত প্রায়ই বলতো, ‘আমার বিয়ের সময় তুই আমাকে সাজিয়ে দিবি সাবু।’ কথাটা শুনে মুচকি হাসতো সাবিত্রী আর মাথা নাড়াতো, বলতো, ‘যদি বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই সাজিয়ে দেব আপনাকে। আপনার বিয়েতে না হলেও আপনার সন্তানের কারো বিয়েতে আমি সশরীরে থেকে সাজিয়ে দেব তাকে।’ নুসরাত আপার বিয়েতে থাকা হয়নি তার। সাবিত্রীর চলে যাওয়ার দেড় বছর পর মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে নুসরাতের বিয়ে হয়ে যায়। অন্য জায়গায় পারিবারিকভাবে নুসরাত আপার বিয়ের কথা চলছিল সাবিত্রী নিশ্চিন্তপুরে থাকতেই। মামাতো ভাই সুলতানের সঙ্গে নুসরাতের সম্পর্কের বিষয়টি শুধু সাবিত্রীই জানতো। নুসরাতদের পরিবারের সঙ্গে সাবিত্রীদের ছিল সুসম্পর্ক। বয়সে বড় হলেও নুসরাত আপা ছিল ওর প্রিয় মানুষ। সবচেয়ে আপন। ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তারপর বান্ধবী জুলেখা ও সরস্বতী। তবে জুলেখার কয়েকটি আপত্তিজনক আচরণে ওর সঙ্গে সম্পর্ক শেষদিকে নষ্ট হয়ে যায় সাবিত্রীর!

দেড় কুড়ি বছর পর মাঘ মাসেই নুসরাত সুলতানার সঙ্গে ওর পুনর্মিলন। কথা রেখেছে সাবিত্রী। নুসরাত আপার মেয়ের বিয়েতে অংশ নিতে সাবিত্রী প্রতিবেশী দেশ থেকে এসেছে। সঙ্গে এদেশে এসেছে স্বামী অনির্বাণ বোস। স্বামী অ্যারোনটিক্যাল প্রকৌশলী। ১৮ বছর সরকারি চাকরি করার পর দু-বছর আগে স্বেচ্ছায় তিনি তা ছেড়ে দেন। এখন প্রকৌশল ব্যবসা করেন টালিগঞ্জে। ছেলে অনিরুদ্ধ বোস জার্মানিতে সরকারি বৃত্তি নিয়ে যন্ত্রপ্রকৌশল বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে ফ্রাঙ্কফুর্টে বর্তমানে একটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অনিরুদ্ধকে মেম বিয়ে করাতে এ-বছরই সাবিত্রী ও অনির্বাণ জার্মানি যাবে।

ওপারে চলে গেলেও সাবিত্রীর মনপ্রাণ জুড়ে থাকতো আচার্য বাড়ির ভিটেমাটি ও গ্রামবাংলা। পরিণত বয়সে এসেও ভুলতে পারেনি মাটির টান। যাওয়ার পর থেকেই সাবিত্রী মনে মনে খুঁজছিল নিশ্চিন্তপুর গ্রাম, তার শৈশব ও কৈশোর এবং গ্রামের চেনা মানুষগুলোকে। দেশত্যাগের পর ওখানে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি তার। যাওয়ার পাঁচ বছর পর কল্যাণী পিসি সাবিত্রীকে বিয়ে দিয়ে দেন। টালিগঞ্জে সংসার, স্বামী, শ^শুর-শাশুড়ি ও ননদ-দেবর নিয়ে ভালোই দিন কাটে তার। বিয়ের ছয় বছর পর কোলজুড়ে আসে অনিরুদ্ধ।

নাটকীয়ভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এগারো মাস আগে যোগাযোগ হয় নুসরাত ও সাবিত্রীর। ফেসবুক প্রোফাইলে বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় নিশ্চিন্তপুর গ্রামের স্টুডিওতে তোলা ছবিটি সাবিত্রী ব্যবহার করেছে। ফলে সাবিত্রীকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি নুসরাতের। সঙ্গে সঙ্গে মেসেঞ্জারে নুসরাতের ফোন। ছবিবিহীন প্রোফাইল থেকে নুসরাত নামের সংযোগের কলটা সাবিত্রী সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলে।

– কে বলছেন?

– আমি নুসরাত। আপনি কি ইসলামপুরের সাবিত্রী?

– ইসলামপুর কোথায় চিনি না!

– আচ্ছা! নিশ্চিন্তপুর চেনেন?

– ও! আপনি কি নুসরাত আপা?

– জি। তুমি আমাদর সাবিত্রী না?

– আরে নুসরাত আপা! কী খবর বলেন? কতোদিন পর! গ্রামের সবাই কেমন আছে? স্বপ্ন দেখছি না  তো?

– সাবিত্রী তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা দাও  মেসেঞ্জারে লিখে।

– +৯১৯২৩১ …

– আপনারটা?

– দিচ্ছি। শুনে নাও লাইন কেটে যেতে পারে। আমার বিয়ের সময় তো তোমাকে পেলাম না। সুলেখা কাকিকে বলেছিলাম, তোমার যোগাযোগ ফোন নাম্বারটা দিতে। কাকি দিতে পারেননি। সে যাই হোক, আমার বিয়েতে না পাই; মেয়ের বিয়েতে তো তোমায় পাবো? নাজিয়ার আব্বু, তোমার সুলতান ভাই, তোমাদের কথা প্রায়ই বলেন। আমি নাজিয়াকে তোমার গল্প করি। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে বিদেশে থাকে। ঢাকার মিরপুরে পাত্রদের দুটি ছয়তলা বাড়ি। ওর বিয়েতে তোমাকে চাই। তুলে নাও আমারটা +৮৮০১৯১ …

নুসরাত আপার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগটা যেন সাবিত্রীর প্রত্যাশিত ছিল। কতদিন দেখা হয়নি নিজ জন্মস্থান! অকস্মাৎ যোগাযোগটায় ওর মনে হলো, এ যেন সামাজিক দায়। অতলান্তিক হৃদয়ের বন্ধন। আমৃত্যু ভালোবাসা। মৃত্তিকার মায়া। নুসরাত আপার সঙ্গে বিস্ময়কর ও নাটকীয় যোগাযোগের পর সাবিত্রী ভাবলো, স্বার্থহীন ভালোবাসা চিরস্থায়ী হয়, তা ভঙ্গুর নয়। মাটি ও হৃদয়ের টান গভীরে প্রোথিত থাকে।

দুদিন পর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় মেসেঞ্জারে নুসরাত মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দিয়ে সাবিত্রীকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেয়।

– সাবু বলছো? শোনো, কাকিকে দেওয়া যাবে সাবু?

– আপনারা কেমন আছেন নুসরাত আপা?

– আলহামদুলিল্লাহ্!

– মা তো সুধাংশুর কাছে বিরাটীতে।

– কাকিকেও নিয়ে এসো।

– বাবার মৃত্যুর পর মায়ের একটা ব্রেইনস্ট্রোক হয়েছিল। তারপর থেকে ডান পায়ে সমস্যা! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলেন মা। বাড়ির কাছের মন্দির ও উপাসনালয় ছাড়া মা কোথাও যান না। তবে দু-বছর আগে সত্যব্রতের অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে রানাঘাট গিয়েছিলেন।

সাবিত্রীর বোন শিবানী ছেলে, স্বামী ও অসুস্থ শাশুড়ি নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার নূরজাহান রোড এলাকায় থাকেন। শিবানীর স্বামী নিবারণ চক্রবর্তী আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী। পান্থপথে তার সুসজ্জিত দোকান। নাজিয়ার বিয়ে উপলক্ষে স্বামীকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে প্রথমে দিদির বাসায় ওঠে সাবিত্রী। নয়দিন থাকার ইচ্ছা। অনির্বাণ কুর্মিটোলা সিভিল অ্যাভিয়েশন কোয়ার্টারে বন্ধু শাহেদ রহমানের সঙ্গে কাজ করবেন বলে ঢাকায় থাকছেন। দিদি আর ও নিশ্চিন্তপুরে এসেছে। বিয়ের আগের দিন পাশের গ্রাম রামায়েতকান্দিতে দূরসম্পর্কের পিসির বাড়িতে থেকেছে ওরা। সারাদিন বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যায় ওরা রামায়েতকান্দিতে ফিরে যায়। আজ নিয়ে মোট তিনদিন নিশ্চিন্তপুরের চেনা এলাকাগুলোতে সময় কাটিয়েছে সাবিত্রী। তাকে সঙ্গ দিয়েছে নুসরাত আপা। অনেক কৌতূহল তার। নুসরাত আপার কাছে নিশ্চিন্তপুর গ্রামের অনেক কিছুই জেনেছে সে। গ্রামটাকে সাবিত্রীর অচেনা মনে হয়েছে। প্রায় সব জায়গায় আমূল পরিবর্তন! গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, খাল, বিল, সবুজ দৃশ্য এবং মানুষের আন্তরিকতাশূন্য ব্যবহার দেখে বিস্মিত সাবিত্রী। এ-পরিবর্তন যেন অনেকটা অপ্রত্যাশিত ও হতাশার। সাবিত্রীর কাছে এ-দৃশ্যান্তর বড়ই বেদনার, কষ্টের। অনেক কথাই মনে পড়ছে সাবিত্রীর।

হেঁটে সকালে জুলেখা ও সরস্বতীর সঙ্গে স্কুলে যেত সাবিত্রী। পথে পড়তো গ্রামের বড় বাঁধের রাস্তা। সারি সারি গাছ। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে সাবিত্রীর পিছু নেয় গ্রামের কিছু বখাটে। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে সাবিত্রীকে প্রায়ই ওরা বিরক্ত করতো। এর মধ্যে জুলেখার আপন বড়ভাই জয়নাল অন্যতম। তার বন্ধু হারিস, আবুল, শরীফ, মফিজ বাজে মন্তব্য ছুড়ে দিত সাবিত্রীকে লক্ষ্য করে। বাড়ি ফেরার পর তা শিবানী দিদি ও মাকে জানাতো সাবিত্রী। কিন্তু ভয়ে বাবাকে সে কিছু বলতো না। যদি বাবা বকা দেন!

বিয়ের পরদিন নাজিয়া বরের বাড়ি চলে গেছে। নুসরাত আপা একমাত্র মেয়ের বিদায়ের কষ্ট ভুলতে পারছেন না। যে-সন্তানকে গর্ভে রেখে একজন নারী নানা প্রতিবন্ধকতায় কষ্টের মধ্যে স্নেহ-ভালোবাসায় লালন করেন, তার মায়া কী ছেড়ে থাকা যায়? তাও আবার একমাত্র সন্তান। নাজিয়া শ^শুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর নুসরাত সুলতানার বুকের শূন্যতা তেমন তীব্র হয়নি সাবিত্রীর উপস্থিতির কারণে। মেয়ের বিয়েতে ভিনদেশ থেকে অন্তরঙ্গ বান্ধবী সাবিত্রীর আগমন যেন তার পরম প্রাপ্তি। দীর্ঘদিনের না পাওয়া আনন্দের রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

আসার আগে নুসরাত মেসেঞ্জারে সাবিত্রীকে বলেছিল ইসলামপুরে তাদের বাড়িতে উঠতে। কিন্তু অনির্বাণ তাতে সায় দেননি। দিদিকে নিয়ে এসময় রামায়েতকান্দি পিসির বাড়িতে থাকবেন। তাছাড়া নিবারণের গাড়ি সুবিধা রয়েছে বলে স্ত্রীর নিশ্চিন্তপুর যাওয়াতে অমত করেননি। নিশ্চিন্ত থেকেছেন অনির্বাণ। বিয়েবাড়ির ঝামেলা থাকার পরও নুসরাত আপা সাবিত্রীকে ওর পছন্দের চিতই পিঠা, খেজুরগুড় এবং ক্ষিরের পাটিশাপটা খাইয়েছেন। সাবিত্রীও সানন্দে সব গোগ্রাসে খেয়েছে।

স্কুলজীবনে ফিরে যায় সাবিত্রী। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যে-আমগাছটার নিচে সাবিত্রী বিশ্রাম নিত, তা এখনো দণ্ডায়মান। ও লক্ষ করলো, গাছটা আগের মতোই আছে, কোনো পরিবর্তন তার চোখে পড়লো না। গাছটার নিচে বখাটে জয়নাল একদিন দুপুরে ওর ওড়না টেনে ধরেছিল। কিছুক্ষণ পর নুসরাত আপা চলে আসায় ওকে ছেড়ে জয়নাল তার দলবল নিয়ে সটকে পড়ে। তখন সাবিত্রী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এমন বাজে আচরণ পরে একাধিকবার হয়েছে। তবে অন্য জায়গায়, ঠিক ওদের বাড়ির কাছাকাছি। ঘর থেকে বের হলেই আজেবাজে কথা বলত জয়নাল। সাবিত্রীর ধর্ম তুলে জুলেখার ভাই ও বন্ধুরা টিটকারী মারত। সাবিত্রী তাতে কর্ণপাত করত না। বিষয়গুলো একটু-আধটু জানতেন সত্যবান। বাজারে নিকটজনের কাছ থেকে শুনে তিনি মেয়েকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।

অনেক ঘটনাই সাবিত্রীর মনে পড়ছে। তবে সুখের স্মৃতি খুব একটা মনে করতে পারছে না সে। একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়কার ঘটনা। বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ আটকে রেখেছে জয়নাল, হারিস, শরীফ ও মফিজ।

– মালটা তো দিন দিন খাসা অইতাছে দোস। জয়নালের উদ্দেশে হারিসের মন্তব্য। রক্তবর্ণ চোখে আক্রোশের ভঙ্গিতে জয়নালের উত্তর – মালা … বাচ্চারে না খাওয়া পর্যন্ত আমার শরীলডার জ¦ালা কমবো না!

শরীফ এ-কথায় সায় দিয়ে বলে, বিয়া কইরা লও দোস্ত! দল ভারি অইব।

সাবিত্রী ভয় পেয়ে যায়! জুলেখাও স্কুলমুখী। দূর থেকে জটলা দেখে দৌড়ে আসে সে। ছোট বোনকে দেখে জয়নাল সরে পড়ে। জুলেখা সাবিত্রীকে সান্ত্বনা দেয়। বখাটে ভাইয়ের জন্য তার গোটা পরিবার চিন্তিত – সে-কথাও বলে। ওই ঘটনার কদিন পর জুলেখা এক দুপুরে সাবিত্রী, সরস্বতী ও নুসরাতকে ওদের বাড়িতে দাওয়াত করে। জুলেখাদের বাড়িটা সাবিত্রীদের বাড়ির কাছেই। নুসরাত আপাদের বাড়ি দূরে। আর সরস্বতীদের আরো দূরে। জুলেখা ও তার বোন আয়েশা সাবিত্রীকে ওদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে। আলুমিশ্রিত খাসির মাংস এবং শিম দিয়ে কই মাছের ঝোল সাবিত্রীর প্রিয় খাবার। জুলেখা জানায়, ওদের বাড়িতে এসব খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নুসরাত আপা আসবে – জুলেখা সাবিত্রীকে তাও বলে। অনেক পীড়াপীড়িতে সাবিত্রী জুলেখাদের বাড়ি যেতে রাজি হয়। দুপুরে খাওয়ার পর জুলেখা ও আয়েশার কানাকানির দৃশ্য দেখে সাবিত্রী খানিকটা ভাবনায় পড়ে যায়। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। ওদের মুচকি হাসির রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করে সে। সাবিত্রীকে জুলেখা প্রশ্ন করেই বসে।

– কী মাংস খাইলি সাবিত্রী?

– ক্যান, খাসির।

জুলেখা ঠোঁট নিচু করে মাথা দোলায়।

– না না না!

– তাইলে?

– তোর তো ধর্ম চলে গেল।

– মানে?

– তোদের ধর্মে গরুর গোস্ত খাওয়া তো পাপ! তোর ধর্ম তো শেষ!

সাবিত্রীর সামনে রহস্যের জানালা খুলে গেল মুহূর্তে। রাগে উত্তপ্ত হচ্ছিল ওর শরীর। বারবার মাটিতে থুথু ফেলতে লাগলো সে। নিজেকে সামলে নিয়ে সাবিত্রী একটি দীর্ঘশ^াস ছাড়ে। জুলেখার উদ্দেশে কথার তীর ছোড়ে সে।

– খাওয়া দিয়ে ধর্ম যায় না। আমি তা বিশ^াস করি না। যেটা শেষ হয়ে গেছে তা হলো তোদের ওপর বিশ^াস!

আমগাছের তলায় অনেকক্ষণ বসে থেকে সাবিত্রীর পা ধরে গিয়েছিল। নুসরাত আপা রাস্তার নিচে সরিষা ক্ষেতে নেমে কী যেন খুঁজছিলেন। নুসরাত আপাকে ডাক দিলো সাবিত্রী।

– শাহীন স্যারের কী খবর নুসরাত আপা? কী করেন তিনি এখন?

– শুনেছি ঢাকায় তিনি একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।

– কোন বিষয়ে?

– তা জানি না। সম্ভবত ইংরেজি। শাহীন স্যারের কথাগুলো মনে পড়ে যায় সাবিত্রীর। বাবার একসময়কার প্রিয় ছাত্র শাহীন রেজা। এসএসসির আগে তিনি বাড়িতে এসে ওকে ইংরেজি ও অংক পড়াতেন। শাহীন স্যার প্রায়ই বলতেন, তোমার বিয়ের সময় কলকাতায় যাব। দেখে আসব তোমাকে। কলকাতায় তোমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাব।

এমন কথা শুনে স্যারের ওপর রাগ হতো তার! সাবিত্রী বলতো, আমাদের বাড়ি কলকাতা হতে যাবে কেন? আমাদের দেশ তো বাংলাদেশ। নিশ্চিন্তপুর আমাদের বাড়ি। কী যে বলেন না স্যার!

শাহীন স্যারের মানসিকতা দেখে অবাক হতো সাবিত্রী! স্যারের এমন মন্তব্যে মনে হতো ওর ধর্মের মানুষগুলোর ঠিকানা বুঝি ওপারে।

তিরিশ বছর আগে যেদিন বিকেলে সাবিত্রী বাবার সঙ্গে দেশত্যাগ করে সে মুহূর্তের স্মৃতিগুলো সামনে চলে এলো তার। বেনাপোল সীমান্তের কাছাকাছি যেতেই ওর ঘনঘন দীর্ঘশ^াস। হেঁটে বাংলাদেশের সীমান্তের শেষ এলাকায় এসে মাটিতে বসে পড়ে সে। কাঁদতে কাঁদতে মাটি স্পর্শ করে। মনে মনে ভাবে, যে-দেশে জন্ম তার, সেটা কী তার আসল ঠিকানা নয়? জয়নাল, জুলেখা এবং শাহীন স্যার কি তাই ভেবেছে?

সাবিত্রীর ভাবনায় ছেদ পড়ে যখন নুসরাত আপা ওপরে উঠে আসেন।

– চলো বাজারে যাই সাবু! তারপর তোমাদের বাড়ি হয়ে আমাদের বাড়ি। শিবানী দিদির মোবাইলে চার্জ নেই! চিন্তা করবেন তোমাকে নিয়ে!

– জয়নাল ভাই বেঁচে আছেন তো! জুলেখাদের খবর?

– জয়নাল খুনের আসামি ছিল। ক্রসফায়ারে মারা গেছে। বরিশাল বিয়ে হয়েছিল জুলেখার। ওর তিন মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে বরিশাল থেকে ভোলা যাওয়ার পথে জুলেখা লঞ্চডুবিতে মারা যায়। স্বামী মারা যায় সে-দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর। আয়েশা স্বামীপরিত্যক্তা। পাগল হয়ে গেছে। দুই বছর আগে দেখেছিলাম ভিক্ষা করতে।

– আর ওদের আব্বা?

– আয়নাল মাতব্বর বেঁচে নেই। গত বছর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘরে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আর জুলেখার শয়তান মা-টা অন্ধ নাকি। আয়নাল মাতব্বর তোমগো কম জ¦ালাইছে? তুমি চলে যাওয়ার পর সত্য কাকা ভেঙে পড়েন। আয়নাল মাতব্বরের অত্যাচার বেড়ে যায়। বিদ্যালয়ের তহবিল চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয় কাকাকে। এ-ঘটনার ইন্ধনদাতা ছিল আয়নাল মাতব্বর। তোমগো জমি ও বাড়ি হে-ই দখল করে নিয়েছে। বাড়ি কেনার নামে সরস্বতীদের ঠকিয়েছে জুলেখার আব্বাই।

– সরস্বতীরা এখন কই?

– সঠিক বলতে পারি না। মনে হয় দেশে নাই। আরেকটু থাকবা?

– না, অনেক বেলা হলো। চলেন সামনে হাঁটি।

সাবিত্রী আজো কমলা রঙের শাড়ি পরেছে। যেদিন ওপারে যায়, সেদিনও তাই পরে ছিল। তবে আজকের শাড়িটা সেদিনের মতো মলিন নয়, বেশ উজ্জ্বল।

– নেপাল স্যারের কথা তোমার মনে আছে?

– মনে থাকবে না কেন?

– তোমায় উনি বেশ পছন্দ করতেন। স্যারের সঙ্গে দেখা হলেই তোমার খবরাখবর নিতেন।

– তাই বুঝি?

– তুমি বুঝতে না?

– স্যার এখন কোথায়? কী করেন?

– ঢাকায় একটি সরকারি ব্যাংকে বড় পদে চাকরি করেন। তোমরা সবাই চলে যাওয়ার পর নেপাল স্যারও গ্রাম ছেড়ে চলে যান। শুনেছি বিয়েথা করেননি।

– স্যারের যোগাযোগ নম্বর জানেন?

– আমার সঙ্গে এতোদিন ফেসবুকে অ্যাড ছিলেন। সার্চ দিয়ে দেখতে পারো! নেপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। একটা ক্যাপওয়ালা ছবির প্রোফাইল পিক আছে।

নেপাল স্যারের বৃত্তান্ত শুনে সাবিত্রীর দীর্ঘশ^াস পড়ে আর ভাবে, তিনি তার ভালোলাগার বিষয়টা সরাসরি বললেই পারতেন। তাহলে জীবনের গতিপথটা অন্যরকম হতো তার। সম্পর্কটা চূড়ান্ত পথে গেলে আর যাই হোক দেশত্যাগের চিন্তা হয়তো পরিবারের মাথায় আসতো না। নিশ্চিন্তপুরে থাকা নিশ্চিত হয়ে যেত সাবিত্রীর।

নুসরাত সাবিত্রীর কাছে জানতে চাইলো ইজিবাইক থামাবে কি না।

– না হেঁটেই চলুন। সাবিত্রীর উত্তর।

ওদের বাড়ির উদ্দেশে যেতে যেতে লক্ষ করলো, গ্রাম আর গ্রাম নেই। উন্নত শহরে রূপ নিয়েছে নিশ্চিন্তপুর। যতই এগোচ্ছে ততই অবাক হচ্ছে সাবিত্রী।

নিজেকে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি করে সে। বাড়ির সীমানা খুঁজে পায় না। আচার্য বাড়ির চিহ্ন দেখতে পেয়ে ওর পায়ের গতি থেমে যায়।

– কোথায় নুসরাত আপা, সত্যবান আচার্যর বাড়ি?

– যেখানে দাঁড়িয়ে আছো এটাই  তো তোমাদের সীমানার শুরু।

– এ তো ক্লাবঘর? কই দাদুর শ্মশান?

– তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইব্রাহিম মেম্বার ও আয়নাল মাতব্বরের লোকজন তা করেছে বহু আগে। আব্বা বাধা দিছিলো। শুনে নাই।

সাবিত্রীর গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে আসে। অস্পষ্টকণ্ঠে দীর্ঘশ^াস ছেড়ে বলে

– সিকদার জেঠা ভালো মানুষ। ভালো মানুষের দাম কোথাও নাই!

ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে প্লাস্টিকের বোতল বের করে সাবিত্রী জল পান করে।

বাড়ি খুঁজে না পেয়ে আঁতকে উঠে সাবিত্রী।  নুসরাত আপা ওর হাত ধরে জানায়, এই যে এতিমখানা দেখছ এটাই তোমাগো বাড়ি।

নির্বাক সাবিত্রী। পাশে ছোট একটি বরইগাছ। তা ধরে মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে সে। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ-নাক  মোছে। সিঁথির হালকা সিঁদুরও লেপ্টে যায়! মাটিতে হাত রেখে সাবিত্রী মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে। – এ মাটি কি আমাদের নয় নুসরাত আপা? জন্মভিটা কি তাহলে মিথ্যে?