কন্যাকাটা ভিটা

‘শীতের দিনেও এখানে হাঁটুজল থাকতো। ভাই-বেরাদাররা মাছ ধইরা আনতো। কত পদের মাছ। আর ওই মাছের স্বাদও আছিল অনেক। আর শ্রাবণ মাসে তো থইথই জল। ডিঙি নিয়া লোকজন ফসল তুলতো। পাট কাটতো। ওরে আল্লাহ, সাপের কথা আর কী কমু! কতজনরে যে সাপে কাটলো, তা ওঝার বাপেও জানে না।

‘এখন এ জায়গা চেনা যায় না। চেনার কোনো কারণও নাই। এখন জলাক্ষেত নাই। বালু ভরাট হইছে। আস্তে আস্তে কত কিছু যে হবে। হাটবাজার হবে। গাছগাছালি হবে। লোকে লোকে সয়লাব হবে। তখন এ-জায়গার নাম কী হবে, কবে কেডা! মাইনষের মুহে কহন যে কী ভালো লাইগ্যা যায়, তা কি কওয়া যায়?  মুহে মুহেই তো নাম ছড়ায়। কী কন? সময়ে বেবাকই জানা যাবে। তহন এ-জায়গার নাম বদলাইয়াও যাইতে পারে। সুন্দর আরেকখান নাম হইতেও পারে। খাল পার হইয়া হগলেই যাওয়া-আসা করবে, এই জায়গায়। সেই দিনের জন্য কেউ কেউ অপেক্ষাও করে। অপেক্ষার ঘরে সবাইরে বসাইয়া রাইখ্যা বালিয়াডাঙ্গার আলেয়ারে নিয়া উইঠ্যাপইড়্যা লাগছিল সবাই।’

‘কেন, কী হয়েছে আলেয়ার?’

‘আলেয়ার বাপ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হইছে। এ-নির্বাচনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হাবীবুর চেয়ারম্যান। হাবীবুর চেয়ারম্যানরে ঠেকাইয়াও দিতে পারে জুলহাস মাতুব্বর – এই ধরনের জোর কথা ভাসতাছে বাতাসে। এবার নয়নডোবার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হবে বালিয়াডাঙ্গার শেখ জুলহাস আলী। গ্রামের মানুষ কানাঘুষা করে।’

‘কী কয়?’

‘হাবীবুর পরপর তিনবার নয়নডোবার চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে এতো সহজে বুদ্ধির খেলায় কি জুলহাস মাতুব্বর পাইরা উঠবে? কিন্তু লোকজন তো পরিবর্তন চায়। আর কত কন দি, পাটক্ষেতে মা-বোনের ইজ্জত লুট হইছে, এর-ওর সম্পত্তি বেহাত হইছে, প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা হইছে, মিথ্যা মামলা হইছে – আরো কত কী! রাস্তায় বাইর হতে পারে না বউ-ঝিরা। বিচার বিচার বিচার। কে করে, কার বিচার। ওরা হইতাছে লুটেরা। খালি লুট করবে। মানুষের তো উপকার করে না। পারলে আরো পেছন দিয়ে বাঁশ দেয়। আট, গম, চাইল, ডাইল, কামকাইজ, তথ্য – সব সব লুট করে। কাউরে কিছু দেয় না। লুট কইরা যদি ভোট ডাকাতি কইরা বসে, তাইলে কার কী করার আছে! তাই বাতাসে ভাইস্যা বেড়ানো কথার কোনো দাম নাই। এমুন কথাও মাইনষ্যে বিশ্বাস করে।’

দুই

ভোটের কোনো মা-বাপ নাই। সবাই ক্ষমতা চায়। নামের শেষে মেম্বার-চেয়ারম্যান লাগিয়ে নামকে ভারি করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। যে-কোনো কৌশলেই হোক শুধু ভোট চায়। টাকা আছে যার, ভোট তার। কে যে কোন দিক দিয়ে ফায়দা নেয়, তা আর বলা যায় না। বালিয়াডাঙ্গার বাজার প্রার্থীদের পদভারে কম্পিত। চায়ের দোকানে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। চা-নাস্তা-পানি খেতে খেতে মুখে তুবড়ি ফোটাচ্ছে কয়েকজন। এদের দলে গলা যার সবার ওপরে তার নাম পবন। পবন যে কোন পক্ষের – তা লোকজন সঠিক জানে না।

তবে দবির মুনশি বলে, ‘এদ্দে ওই চাডামখোরের কতা কি বিশ্বাস যাও? ওই তো বেক কোনায়গোনে খাবা নাগছে, আর খাইয়া খাইয়া জিবলার খাওজানি দূর করবার নাগছে।’

‘হাডে-বাজারে-মাডে হগলেই খায়রে। নাম হয় খালি গাইরগা টাহির, বুঝছো!’ কথাগুলো বললো আয়নাল খাঁ। আয়নাল খাঁর কথা যে দবির মুনশির প্রতি ইঙ্গিত করে, তা সকলেই বোঝে। তাই উপস্থিত সকলের মুখে একটু বাঁকা হাসি খেলে যায়। তবে দবির মুনশি এ নিয়ে কথা বাড়ায় না। যার ফলে আয়নাল খাঁর খোঁচায় আসর তেমন জমে না।

মাইকের ক্যানভাসের কাছে পরাজয় শিকার করলো দবির মুনশির কণ্ঠ। সে এখন চতুর্থ কাপ চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কিন্তু মুখে কথার খই ফুটছে। তবে তার কথা কিছুই বোঝা গেল না। কারণ হঠাৎ করে মাইকের শব্দ বিকট হতে হতে নিকটে চলে এলো। মনে হচ্ছে, উত্তর দিক থেকে একটা ভ্যানমিছিল আসছে। আসলেই ভ্যানমিছিল। শয়ে শয়ে ভ্যান।

‘কার মিছিল? কার মিছিল?’

বোঝা গেল – আরেকটু পর। এটা হাবীবুর চেয়ারম্যানের মিছিল। দবির শেখ মিছিল দেখে আর বকবক করে। দবির শেখের পেয়ারের লোক এই হাবীবুর চেয়ারম্যান। সে বাজারে বাজারে আর দোকানে স্পাইং করে। লোকজনের কাছে কথা কেনাবেচা করে। সুযোগ পেলেই মানুষের কাছে হাবীবুরের গুণকীর্তন করে। হাটে-পথে যেখানেই পায় সেখানেই গুণকীর্তন। আর যে বেশি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধাচরণ করে তাকে ধরিয়ে দেয়। চেয়ারম্যান ভেতরে ভেতরে তার বারোটা বাজায়।

ভ্যানমিছিল বাজারে পৌঁছে যায়। মিছিলের নাচনকুদনে বাজার ফেটে পড়ে। মুহূর্তেই বাজার সরগরম। হাবীবুরের কীর্তিকলাপ নেচে-গেয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। দৃষ্টি আকর্ষণের সকল রকম চেষ্টা করা হয়েছে। হাবীবুর চেয়ারম্যান মিছিলের মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন।

কিন্তু বিপত্তিটা বাধে একটু পরেই। আরেকটি মাইকে যখন জুলহাস মাতুব্বরের ক্যানভাস শোনা যায় তখন হাবীবুরের তেলবাজ ছেলেপেলে এসে মারপিট শুরু করে। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে বালিয়াডাঙ্গার বাজারে হাবীবুরের মিছিল আসছে, এখন ওরাই ক্যানভাস করবে। এখন আর অন্য কারো ক্যানভাস চলবে না। তাই এসময় অন্য কারো ক্যানভাস করে জটটা যে লগিয়েছে, সে ইচ্ছে করেই কাজটা করেছে। আর যে-ই এ-কাজ করুক না কেন, সে-ই দোষী।

লেগে গেল ধুন্ধুমার মারপিট। লোকজন বাজারের এই হট্টগোল সহজে থামাতে পারছিল না। হট্টগোলকারীরা দোকানপাট নিয়েও পড়ছিল। দোকানের ঝাঁপটাপ ধরে টানাটানি। টুল-বেঞ্চ নিয়ে মারামারি। কেউ একজন এসে হাবীবুরকে বলতে লাগল, ‘মিয়া তোমার পোলাপান কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে, তাড়াতাড়ি হেগো সামাল দাও নইলে কিন্তু হিতে বিপরীত হইয়া যাইব।’

হাবীবুর এসব কথা শুনে রাগ দেখায় – ‘কিসের কী, নলা ভাইঙ্গা দেওন দরকার। হারামিরা নিমক খাবি আবার বদমাইশি করবি। কোন হালায় কইতে পারবোনি আমার টেহা খায় নাই? সব নিমকহারামের জাত।’

বাজারের লোকজন চেয়ারম্যানের কথা শুনে বোকা বনে যায়। চুপচাপ তারা চেয়ারম্যানের তেজ দেখে।

জুলহাস মাতুব্বর খবর পেয়েই তার ছেলেপেলেকে শান্ত করতে ছুটে আসে। গরুকে জাবনা কেটে খাওয়াচ্ছিল সে। বাজারে মারপিট লেগেছে এবং তার পক্ষের ছেলেকে গরুপেটা করেছে। এ-খবর পেয়েই সে মাথা থেকে গামছাটা কোমরে বেঁধে চলে এসেছে বাজারে। এসে দেখে সত্যি হাবীবুরের ছেলেরা তার নিরীহ ছেলে জামিরের মাথা ফটিয়ে গা-হাত-পা রক্তাক্ত করে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি একটা ভ্যান দিয়ে ওকে সদরে পাঠিয়ে দিলো চিকিৎসার জন্য। আর যতটুকু পারে এই কেওয়াজ থামানোর জোর চেষ্টা চালাতে থাকল। সে চেয়ারম্যান পক্ষের লোকেদের কাছে জোর হাত করে ক্ষমা চাইল। বলল, যদি তার ছেলে ভুল করে থাকে, তাহলে এবারের মতো যেন মাফ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এমন ভুল আর হবে না – বলে কথা দিলো।

সাধারণ মানুষ জুলহাস মাতুব্বরের আচার-আচরণ দেখল। তারা এটা নিয়েও কানাঘুষা করে। বাহবা দেয়। তারিফ করে বুদ্ধির। ওদিকে লোকেরা আবাল বলে অভিহিত করে হাবীবুরকে। কেউ কেউ বলে, ‘আবালটা এতোদিন গ্রামের অনেক ক্ষতি করছে। এইবার যদি গ্রামের মানুষের হুঁশ হয়।’ কিন্তু এক শ্রেণির লোক তবু হাবীবুরের দল ভারি করে। তার পিছে লম্বা লাইন দেয়। আসলে টাকার গন্ধ কে না ভালোবাসে?

দবির মুনশি বলে, ‘ওরা নাইডাল বংশ তো অতো সহজে কারোরে ছাইড়া দেয় না।’

আয়নাল বলে, ‘তো নাইডাল বংশের ভোডের দরকার কি মিয়া। নাডানাডি করুক। চেয়ারম্যান হইয়া বেবাকের মাথা ভাঙতে চায়নি?’

‘তুমি বুঝো মিয়া খালি আইট্টা কলা। বেডা নাইডাল হইলে কি হবে, গেল তিনবার কি হে চালায় নাই ইউনিয়ন? বেবাকরেই তো খুশি করছে। তুমি, আমি এক কথায় হগলেই তো কিছু না কিছু পাইছি। তারপরেও মিয়া তোমাগো মতোন পাবলিক খালি ফাল পারে। কিছু বুঝে না সুঝে না, খালি ফাল পারে।’

‘যাও যাও, তুমি ফোঁপর দালালি কইরো না। ওই নাইডাল-ফাইডাল আমরা চাই না। আমরা পরিবর্তন চাই।’

‘তুমি কইলেই কি পরিবর্তন হবে নি? বেডাগো নাডির একটা জোর আছে না! এই নাডি আছে যার, হেই তো মিয়া রাজত্ব করবে। কী কও?’

‘যহন গণেশ উল্টাইয়া যাবে, তহন নাডির জোরে আর কাম হবে না, বুঝছো মিয়া?’

‘আরে যাও দি মিয়া, এহানে বইসা ফাও প্যাঁচাল পাইরো না। হগলেই কি কাম পারে? কাম করতে হয় মিয়া কৌশলে। তোমার মতোন তো মাইনষে আর ঘাস চিবায় না। বেডারা ঘডে কিছু বুদ্ধিসুদ্ধিও রাহে কইলাম।’

‘হ হ, রাহে বুদ্ধি। চোরা বুদ্ধি। চোরের কাছে তো চোরা বুদ্ধিই থাহে, কী কও মিয়ারা?’

‘আরে মিয়া রাগ করো ক্যা? টেহা কম হইছে? আমি কইলে টেহা বাড়াইয়া দিবেনে। ভোটটা ঠিকমতো দিও কইলাম।’

‘ওই হারামখোরের টেহা আমরা খাই না, ভোটও দেই না।’

‘টেহা তো টেহাই। টেহার গায়ে কি হারামখোর লেহা থাহে?’

‘চা’র দোহানে বইসা চোপাডা বন্ধ রাখতে পারো না? টাহা খাইয়া খালি গীত গাও। গীত বন্ধ হইয়া যাবে, বুঝছো মিয়া।’

‘টাহা কে না খায়, খালি খালি তুমি আমারে দোষারোপ করো মিয়া? হুনলাম তো ঘরগুষ্টি লইয়া টাহার কারবার করতাছো।’

‘ধরদি হালার পো’রে, কী কবার চায়? বুইড়া ভাম তোরে আইজকা মাইরাই হালামু।’

আয়নাল খাঁ আর দবির মুনশি আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মুখে যা আসে বলে যায়। হাতাহাতি লেগে যায়; কিন্তু লোকজন তাদের থামিয়ে দেয়। যার ফলে এ-ঝগড়া বেশিদূর এগোতে পারে না। তবে দবির মুনশি হুমকি ছাড়ে, ভোটের পরে চেয়ারম্যানকে দিয়ে আয়নাল খাঁর বারোটা বাজিয়ে দেবে।

তিন

ভোটের চরকা এভাবে যে ঘুরে যাবে, কে জানতো! জুলহাস মাতুব্বর যখন ভোটেই নেমেছে তখন তার সামর্থ্যবান ছেলেমেয়ে তো আর চুপ করে বসে থাকবে না। ছেলেরা রাতদিন কাজ করছিল – এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। কিন্তু দিন দিন জুলহাস মাতুব্বরের মিছিল জনশূন্য হয়ে উঠছিল। বাবার শোচনীয় হার হবে – এ-দৃশ্য দেখে মেয়ে আলেয়া আর সহ্য করতে পারল না।

এক বিকেলে কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে ক্যানভাস করতে নেমে গেল আলেয়া। তখন এক আশ্চর্যরকমের ঘটনা ঘটল। মরা মিছিলে প্রাণ ফিরে এলো। সবার আগে আগে আলেয়া গানের সুর ধরলো। আর ছেলে-বুড়োরা সবাই পেছন পেছন ছুটল। গানের সুরে সুরে মেয়ে নাচে। মেয়ের অঙ্গভঙ্গি ঠাকঠমক দেখতেই বুঝি লোকের ভিড় লেগে গেল। আলেয়ার গান শুনতে নাকি আলেয়াকে দেখতে তার পেছনে মানুষর ঢল নামল, তার হিসাব-নিকাশ চলতে লাগল চায়ের দোকানে। কেউ বলল, ‘মাইয়াডা এমুন কইরা লাজ-লইজ্জার মাথা খাইয়া গেরামে গেরামে ঘুইরা বেড়াইতেছে, এই কামডা ভালা অয় নাই।’

খবির শেখের কথার পিঠে আয়নাল খাঁ বলে, ‘ক্যা, ভালো হবে না ক্যা? তুমি কী কও খবিরের পো?’

‘আমি কিছুই কবার চাই না। তুমি আমারে নিটান্টা থাকবার দাও দি।’

‘ক্যা, আমি কথা কইলেই তুমি জোঁহের মতো মুখ লুকাও ক্যা, আমি কি নুন?’

‘এদ্দে আয়নাল খাঁ, তোর পায়ে ধরি, তুই এহনে একটা হাঙ্গামা লাগাবার

চাস, না?’

‘আমি কই লাগাবার চাই। তুমিই তো মিয়া আউলফাউল কথা কও। জুলহাস মাতুব্বরে টেহা খরচ কইরা ভোডে দাঁড়াইছে না?  হেই বেডার বউ ক্যানভাস করুক, মেয়া করুক, তাতে তোমার কী? তোমার খালি মুখ চুলকায় না? বইসা বইসা আর কাম পাও না। বেডার সমালোচনা করো। এদ্দো তুমারে কয় টাহা দিছে? টাহা তো মনে হয় বেবাক দিকের তুনই খাইতাছো? খাইয়া খাইয়া চা’র দোহানে বইসা চোপা করো।’

দবির মুনশির মুখটা শুকিয়ে আমসির মতো হয়ে যায়। তারপরেও সে কথার জবাব না দিয়ে পারে না।

‘খাইলে খাইলাম, তোমারডা তো আর খাবা নাগছি না। এ্যাঁ জালাল, আরেক কাপ চা দিস কইলাম।’

‘হ, ফাও পাইলে আরো কত কী যে খাবা!’

‘কী কইলা?’

‘না, কিছু কই নাই।’

এভাবেই দোকানে বসে বসে অনেকেই ইতিহাস গড়ে ফেলে। নতুন দিনের নতুন ভবিষ্যতের ইতিহাস তারা মুখে মুখে গড়ে। কার সঙ্গে কার সম্পর্ক, কার মিছিলে কত লোক হয়েছে। কে, কত টাকা বিলিয়েছে – এসব চায়ের দোকানের ঝড়। এখান থেকেই সে খবর পৌঁছে যায় সবার ঘরে ঘরে। জুলহাস মাতুব্বর মেয়েকে বোঝায় যেন সে ক্যানভাস করতে না যায়। মেয়ে কোনো কথা শোনে না। সে বলে, ‘বাদ দাও বাপজান, তুমি জিতলে দেইখো সবকিছু চাপা পইড়া যাইব।’

চার

‘আলেয়ার মা খুব দিলদরিয়া মানুষ আছিল। সে আবার ভালো কিছু রান্না করলে কাউরে না দিয়া খাইতে পারতো না। তাগো বাড়ির আশেপাশে দুই-একটা অসচ্ছল পরিবারও ছিল। তারা মাঝেমধ্যে আইসা এইটা-ওইটা নিয়া যাইতো। আলেয়ার মা কাউরে কোনোদিন খালি হাতে ফিরায় নাই। কিছু না কিছু দিছেই হগলরে। গ্রামের বউ-ঝিরা তারে খুব ভালোবাসতো।

তখন চারপাশের মানুষের শুধু অভাব আর অভাব। হেদিন রাইতের বেলা অনেকেরেই আলেয়ার মা খাওন দিছে কিন্তু যে সবসময় খাওন নেয়, হেই সবুরের বউ আসে নাইকা। মার খানিক চিন্তা হইল। কিরে হগলেই তো আইল কিন্তু সুফিয়া ক্যান আইল না। এই চিন্তা লইয়া আলেয়ার মা রাইতের কালে ঘুমাইতে গেছে। কিন্তু অনেক রাইত পর্যন্ত মার ঘুম আইল না। মনডা খানিক খচখচ করছিল মা’র, ক্যান কইতে পারবে না। ধলপহরের দিকে মা’র ঘুমডা গেল ভাইঙ্গা। মা হুনলো, কে জানি কানতেছে। ঘুমঘুম চোখে মা উইঠা আইল। দেখল, সবুরের বউ। মা ভাবল, কাইল রাইতে বুঝি সুফিয়া কোনো কিছু খায় নাই, খিদায় বুঝি কানতাছে। মা ডাক দিলেন, এ্যাঁ সুফিয়া কানদোছ ক্যা?

সুফিয়া কথা বলে না। মা আবারো জিজ্ঞেস করেন, ‘এ্যাঁ সুফি কথা কছ না ক্যা?’

সুফিয়া কোনো কথা না বলে বাইরের দিকে হাঁটতে থাকে। মা’র সন্দেহ হয়, কিরে, সুফিয়া কোনো কথা না কইয়া চইলা যায় ক্যা? উনিও সুফিয়ার পিছে পিছে হাঁডেন। সুফিয়া একসময় রাস্তা ছাইড়া খাদের দিকে নামে। মা’ও নামেন। হঠাৎ সুফিয়া মা’র দিকে ঘুইরা মা’রে জাপটাইয়া ধরে। মা’রে টাইন্যা কাদাপানির মইদ্যে নিয়া যায়। মা সুফিয়ার উদ্দেশ্য বুইজ্যা যায়। মা বুঝতে পারেন, এইডা আসলে সুফিয়া না। সুফিয়ার ভেশ ধইরা খারাপ আত্মা। চলতে থাহে মা আর খারাপ আত্মার অসম লড়াই। মা’রে বারবার খাদের পানিতে চুবাইয়া ধরতে চায় ওই খারাপ আত্মা। মা কিছুতেই তা হইতে দিতে চান না। কিন্তু এই অসম যুদ্ধে যখন মায় আর পারতাছিলেন না, তখনই পোলাগো নাম ধইরা চিক্কুর দেয়।

আশেপাশে কারো কানে হয়তো হেই চিক্কুর গেছে। চারদিকে একটা শোরগোল হোনা গেল। এমনকি তহন মুয়াজ্জিনও আজান দিতে শুরু করছে। হেই আত্মা শেষমেশ মা’রে কান্ধের ওপর ধইরা একটা চাপ দেয়। মা’র মেরুদণ্ডের হাড় ভাইঙ্গা যায়। ওরে ব্যথা! ব্যথার চোডে মা অজ্ঞান হইয়া যায়। বেবাকে ধরাধরি কইরা মা’রে নিয়া আসে বাড়িতে। তারপর কত চিকিৎসা, মা আর ভালো হইলো না। বেবাকে কইল, মা আর বাঁচপে না।

তয় এক রাইতে ঘটল আচানক কাণ্ড। আষাঢ়ের রাইত। কয়েকদিন ধইরা বৃষ্টি আর বৃষ্টি। খাল-বিল থইথই করতাছে পানিতে। আপনি শুনতাছেন তো?’

‘হুম, শুনছি।’

‘চারদিকে পানি আর পানি। গ্রামের বাড়ি তো খাইয়া হগলেই ঘুমাইয়া গেছে। আলেয়াগো পাডাতন করা ঘর। নিচে পানির খলবল শব্দ। মা’র কাতরানি। থমথমে পরিবেশ। হের মইধ্যে বাইরে কারো শোরগোল হোনা গেল। কারো কারো ঘুম ভাঙল।

বাড়ির পুরুষ মানুষেরা জিগাইলো, ‘এতো রাইতে কারা আইছে?’

ওপার থাইকা আওয়াজ আইল, ওরা পথ হারাইছে। বর্ষাকালে রাতের অন্ধকারে পথ চিনা দুষ্কর। তার উপরে যদি কিছু আছর করে। ওরা কইলো, এ জায়গা ছাইড়া নৌকা কিছুতেই অন্যদিকে যাইতাছে না। বাড়ির রেওয়াজ অনুযায়ী তাগোরে ঘরে আনা হইলো। প্রায় পাঁচ-ছয়জন লোক। তাগো মইদ্যে একজন বয়স্কও আছেন। হেই রাতে আলেয়ার আবার চুলা জ¦ালাইতে হইল। মেহমান গো রাইনদা খাওয়াইতে হইল। তারপর খাইতে বইস্যা তারা মা’র কাতরানি হুনলো। বয়স্ক মানুষটা জিগাইলো, ‘এমুন কইরা কাতরায় কিডা?’

আস্তে আস্তে মেহমান গো কাছে মা’র সব কথা খুইলা কওয়া হইল। বয়স্ক লোকটা হেই রাইতে গাছের লতাপাতা দিয়ে একটা চিকিৎসা দিলো আলেয়ার মায়রে। আর কইয়া গেল, কেমনে ওনার পথ্য জোগাইতে হবে। হেই রাইতে আলেয়াই হেই মেহমানগো নৌকায় কইরা দিয়া আইল। আলেয়া দুর্দান্ত নৌকা চালাইতে পারতো। মেয়াও একখান আছিল। বেবাকে চিনতো। গ্রামে আলেয়ার নামডাক আছিল। কতজন যে বিয়ার পয়গাম আনছে। কিন্তু আলেয়া বিয়েশাদিতে মত দিত না। মায়ের এমন অবস্থায় তো আলেয়া আরো পাইয়া বসল। বিয়ার কথা কেউ মুহেই আনতে পারত না। তবে কেউ কেউ কইতো ভিন্ন কথা। ওরা কইতো, আলেয়ার নাহি পিরিত আছে। আর হেই পিরিত হইল, হাবীবুর চেয়ারম্যানের পোলা আলকাছের হাতে।

এরপর কয়েক মাস গেল। আলেয়ার মা উইঠা খাড়াইলেন। গুজা হইয়া চলাফেরা শুরু করলেন। হগলেই তাজ্জব বনে। কিন্তু গুজা হইয়া আলেয়ার মা’য় ম্যালা কাম করতে পারতেন। হগলেই তারে গুজা চাচি, গুজা নানি, গুজা দাদি কইয়া ডাকতো।’

‘তার মানে তিনি বেঁচে ছিলেন। সমস্যা হয়নি আর!’

‘না। বেশিদিন বাঁচেন নাই। বছর না ঘুরতেই তিনি চাইলা গেলেন। তয় মনে হয় না, তিনি ওই সমস্যায় মারা গেছেন। মনে হয়, তিনি অন্য কোনো সমস্যায় মারা গেছেন। এরপর আলেয়াই ওগো সংসারডারে আগলাইয়া রাখলো।’

পাঁচ

নির্বাচনের ডামাডোল শান্ত হয়েছে। চুপসে গেছে হাবীবুরের লোকজন। কারণ গ্রামবাসী জুলহাস মাতুব্বরকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছে। গ্রামের মানুষই রাত জেগে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়েছে। এতো টাকা ছিটিয়েও কাজ হয়নি হাবীবুরের।

‘গ্রামের মানুষ এতো বড় নিমকহারাম! তারা ভিতরে ভিতরে এমন কাজ করবে, কে জানতো!’

হাবীবুর মহিষের মতো কাদাপানিতে গড়াগড়ি দিতে চায়, তাতে যদি শরীরের জ¦ালাতন কমে। কিন্তু এ জ¦লুনি কমার মতো নয়। শত্রুর বিনাশ না দেখে তিনি ছাড়বেন না। ভোটে জিতে গ্রামে আনন্দ করছে জুলহাস মাতুব্বর। তার বাড়িতে আজ খানাপিনা গানের আসর। সব মিলিয়ে আনন্দের নহর বয়ে যাবে। তার নগদ টাকা খাওয়া মানুষগুলো গরুর হাড়হাড্ডি চিবাতে চিবাতে তার বিরুদ্ধেই কথা বলবে। লোকেদের স্বভাবই এমন, খেয়েদেয়ে পেছনে কুৎসা গাওয়া। রাগে গজগজ করতে থাকে হাবীবুর। মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য কত কী যে ভাবে। তবে ভাবনাগুলো বেশিক্ষণ ঠাঁই পায় না।

লোকজনের আনন্দ-উল্লাসের খবর বুঝি বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু তার ভেতরেই হঠাৎ আলেয়ার নিখোঁজ হওয়ার খবরটি গ্রাম তোলপাড় করে। লোকজন তখন আলেয়ার ভোটের ক্যানভাসের দৃশ্যের কথা স্মরণ করে।

আলেয়ার সুরেলা কণ্ঠ লোকজনের মরমে পশে গিয়ে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করেছিল। সে-গল্প গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু লোকজন বলে অন্তরালের গল্প আরেকটি। যেটি লোকজনের মুখে মুখে ডালপালা গজাতে থাকে। সবাই বলাবলি করতে থাকে। সুন্দরী আলেয়ার সঙ্গে ভাব ছিল আলকাছের। আলকাছ হলো চেয়ারম্যান হাবীবুরের ছেলে। ভোটে নেচে নেচে ক্যানভাস করায় আলকাছের সঙ্গে আলেয়ার কথাকাটাকাটি হয়। এমনকি তাদের সম্পর্ক পর্যন্ত ভাঙনের কথা শোনা যায়। আলেয়া সে-রাতে আলকাছকে খুব অপমান করেছিল। আর এই অপমানের শোধ নিতে হয়তো আলকাছ কিছু করলেও করতে পারে! গ্রামের মানুষের সাহস হয় না গল্পের বাকিটুকু রস দিয়ে বলতে। কারণ যদি ঘটনা প্যাঁচ খেয়ে যায়, তাহলে কে, কোন দিক দিয়ে কোন ঝামেলায় পড়ে যাবে, তা বলা যায় না। তাই গল্পটা লোকজনের মুখেই চাপা পড়ে থাকে।

ছয়

‘তারপর?’

‘তারপর আর কী, সব শেষ।’

‘সব শেষ মানে?’

‘হ সব শেষ। আলেয়াকে আর পাওয়া যায় না।’

‘একেবারেই পাওয়া যায় না?’

‘একেবারে না। আলেয়ারে পাওয়া যায় ওই নতুন ভিটায়।’

‘সেখানে আলেয়া কী করছে? নাকি নিরিবিলি ভিটায় আলেয়া পায়ে ঘুঙুর বেঁধে নাচের মহড়া দিচ্ছে?’

‘না, আলেয়া আর কোনোদিন পায়ে ঘুঙুর বাঁধবে না। আর কোনোদিন নাচবেও না।’

‘কেন কেন? বাবাকে জয় এনে দিয়েছে, তার তো এখন গ্রামের মধ্যমণি হয়ে থাকার কথা।’

‘তা থাকার কথা। তা সে থাকতেও পারতো। কিন্তু সমস্যা তো সেই রাতে শুরু হইয়া গেছে।’

‘কোন রাতে?’

‘সেই যে আনন্দগানে মুখর সেই রাত। যেই রাতে আলেয়া নিখোঁজ হইলো।’

‘কেউ কি আলকাছরে সন্দেহ করে নাই?’

‘করছে না, মাইনষে পারলে তো হাবীবুর চেয়ারম্যানরে চিতায় তুইল্যা দেয়।’

‘আলকাছকে আর পাওয়াই গেল না, এইটা কেমন করে হয়!’

‘একেবারে পাওয়া যাবে না কেন? আলকাছ ফিরা আসছিল।’

‘তারপর?’

‘জুলহাস মাতুব্বর গিয়া পরের দিন ওই ভিটায় আলেয়ার লাশ উদ্ধার করলেন। আলেয়ার মাথা আলাদা ছিল। ধড়টুকু পড়েছিল ভিটায়।’

‘আর মাথা কি খুঁজে পাওয়া যায়নি?’

‘না পরে পাওয়া গেছে।’

‘কোথায় পাওয়া গেছে?’

‘ওই যে ভিটার নামার দিকে যেখানে একটা হিজল আর জিক্কা গাছ আছে,  সেইখানে।’

‘এখন তাই বুঝি এই ভিটার নাম …?’

‘হ ভাইজান, এইটারে এখন সকলেই কন্যাকাটা ভিটা বলে। হি হি হি।’

‘আরে আপনি ওভাবে হাসছেন কেন?’

‘ক্যান, হাসলে দোষ কিসের?’

‘না রাতের বেলা ওভাবে হাসতে নেই। তাছাড়া লোকজন শুনলে কী বলবে?’

‘কিচ্ছু বলবে না। এখানে রাতে কোনো লোকজন আসে না।’

‘তাহলে আমাকে কেন এনেছেন এখানে?’

‘কেন আনছি, তা তো দেখলেন। হি হি হি।’

‘আবার হাসছেন?

‘হাইস তো আইসা গেল ভাইজান, কিছু মনে কইরেন না। তয় ভাইজান একখান কথা আছে, এ-ভিটায় কিন্তু আলেয়া আসে। অনেকেই তারে নাচতে গাইতে দেখে। ওই যে ভোটের সময় ও যেমন কইরা নাইচা নাইচা ক্যানভাস করছিল, সেরকম কইরা। আমি একটু আপনারে নাইচা দেখাই আলেয়া কেমন কইরা নাচে?’

‘দেখাবেন? আচ্ছা, দেখান।’

তারপর মেয়েটি নাচতে শুরু করে। আকাশে অর্ধেক চাঁদ। ভিটার ওপর মেয়েটি নাচছে। রাস্তা থেকে ভ্যান যাওয়ার শব্দ আসছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা পিকআপ-লরি ছুটছে। কুয়াশার চাদর চারপাশে। বেশিদূর চোখ যায় না।

‘খালি পায়েও নাচেন ভালো, দেখায় ভালো। আমার চোখের সামনে এমন নাচ আমি আর দেখি নাই।’

‘সেই এক নাচ নাচছিলাম। তা কওনের মতো না।’

‘তাই নাকি! কখন?’

‘কমু এমন করেন ক্যা, আলেয়ার সব কাহিনি আপনারে খুইল্যা কমু।’

‘আচ্ছা, সেই ঘাট থেকে এ পর্যন্ত আমরা অনেক কথাই বলে গেলাম। কিন্তু আপনার পরিচয় তো পেলাম না। রাত হয়ে গেছে। আমাকে চলে যেতে হবে।’

‘সে তো যাইবেনই। আসলে সবাই গাড়িতে ‘কন্যাকাটা ভিটা’র গল্প করছিল, আপনিও বেশ আগ্রহ ভরে শুনছিলেন। বললেন, আপনি এদিকেই যাইবেন। তাই আপনারে নিয়া আসলাম ভিটাটা দেখাইতে।’

‘হ্যাঁ, নিয়া আসছেন, আপনারে ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার পরিচয় তো দিলেন না। রাত হয়ে গেল, আপনার বাড়িতে ফেরার তাড়াও তো দেখি না। আপনি না বলছেন, এর পরেই আপনার গ্রাম। আর তাছাড়া আলকাছের কথাও তো বললেন না।’

‘হুম, আলকাছের কথা তো কওন লাগে। আলকাছ ফিরা আইছিল, মাস দুয়েক পরে। তয় ওরে কেউ জিন্দা দেখে নাই।’

‘কেন কেন? আলকাছের কী হলো আবার?’

‘আলকাছের লাশটা সবাই উদ্ধার করছিল এই ভিটা থাইকা।’

‘আলকাছের এই দশা কে করেছে?’

‘তা কইতে পারুম না মিয়া ভাই। তয় হগলে কয় নিজের পতিশোধ নিজেই লইছে আলেয়া। হি হি হি।’

‘রাত হয়ে যাচ্ছে, চলেন বাড়ি ফিরি। জায়গাটা ভালো মনে হচ্ছে না।’

‘আমার আর বাড়ি ফেরা। একসময় বালিয়াডাঙ্গা আমার গ্রাম আছিল। এহন আমার ভিটাই তো এইটা। আমি এইহানেই থাহি এহন। জায়গা ভালো হবে না ক্যান মিয়া? জায়গার দোষ নাই। হি হি হি।’

গরুকে জবাই করলে যেমন শব্দ বের হয়, তেমন একটা শব্দ হয়। ছিন্ন মস্তক যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায়! আগন্তুকের চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠল। সেই মস্তক হিজলের গাছের দিকে উড়ে যায়। নিশ্চয়ই ওটা জিক্কা গাছের ডালে চড়বে। সরসর করে বাতাস বয়ে যায়। কিন্তু একটানা সে হাসি হাসতে থাকে। আকাশ-বাতাস চরাচরে। শূন্য ভিটায় আঁশ শ্যাওড়ার ঝোপ কাঁপিয়ে হাসির রোল ওঠে। খাল পেরিয়ে সে হাসি ছুটতে থাকে বালিয়াডাঙ্গার লোকালয়ের দিকে। কিন্তু আগন্তুকের মনে হয়, সেই হাসি, সে ছাড়া আর কেউ শুনতে পাচ্ছে না। আগন্তুক মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। পড়ে থাকে তার নিথর দেহ। আকাশে তখন আধখানি চাঁদ। মøান আলো চারদিকে। সেই আলোয় হিম ঝরতে থাকে।