কবিতা

  • শিল্প ও বাস্তবতা

    মা যখন হাসপাতালে যেত তখনো প্রতিবারই আমাকে বলে যেত অথচ যখন ও একেবারেই গেল তখন আমাকে যে কিছুই বলে গেল না! বলে কী করে – এ-কথা তাকে কী করে বোঝাই ব্যবচ্ছেদে তার বাকযন্ত্র কী করে সামর্থ্য হারায় এরপর ও এও জানতে চায় আমাকে ছাড়া মা একা ওপারে থাকেইবা কী করে! চলো, যে-গর্তে তাকে মাটি চাপা…

  • বেহুলা বাংলা : সনেট

    অকূলের কূল বেহুলা তুমি ভাষাহীনদের প্রতিবাদের ভাষা তোমায় দেখে গাঙ্গুরপারে জেগে ওঠে নতুন দিনের আশা ঝড়ের রাতে শিখিয়েছিলে কেমন করে নৌকা বাইতে হয় কেমন করে কামট-কুমির-ভেড়ুয়াদের ঘটাতে হয় পরাজয় অলৌকিক ওই ভেলা যখন ছুটে চলে অজানা অমরায় চিরদুখী জীবনস্রোতও আমাদের সেদিক পানেই ধায় কখনো নামে বিষাদ সন্ধ্যা কখনো তা পায় সূর্যরশ্মির আলো সঙ্গে থাকলে বেহুলা…

  • রোদের আলো গায়ে মেখে নাও

    বাইরে এসো, বাইরে এসো, আর থেকো না অন্ধকারের –                        বদ্ধ ঘরে, অজ্ঞানতার ময়লা ধুলো ঝেড়েই ফেলো, জীবনটাকে বুঝতে শেখো –                    নতুন করে। কেউ কারো নয় ব্যস্ত সবাই আখের গোছায় – এই পৃথিবীর জলসাঘরে, নতুন করে বুঝতে হবে – কোনটা নেবে হাতের মুঠোয়; কাঁটা ও কেয়া, দুঃখ ও সুখ – সাজানো ঠিক থরে থরে।…

  • জানুয়ারি ২০২৫

    আসাদ গিয়েছিলেন রাজপথ রাঙিয়ে সে-ও এই জানুয়ারিতে। বালক মতিউর ভাই আমার তাও তো জানুয়ারি। এই জানুয়ারিতেই ঢাকা, সাভার থেকে গোটা দেশ কাঁপিয়ে দিয়ে আকাশে উড়াল দিয়েছিলেন আমাদের দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের দল। মহান জানুয়ারি তুমি ফেব্রুয়ারি হও মার্চ হও জুলাই-আগস্ট থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর হও। তোমার ডালপালা গজিয়ে উঠুক কৃষকের স্বপ্ন নরকের এই শহরটাকে সবুজ করে তুলুক আমাদের আর্ত…

  • সেকেন্ডের ব্যাকরণ

    সেকেন্ডের ব্যাকরণ প্রহেলিকাময় চাঁদ। ফাঁদ পেতে বসে আছে কেউ অন্ধকারে অচেনা সব ঢেউ অবজ্ঞা আর অস্থিরতা কোথা থেকে আসে উড়ে ব্যাকুল মৌমাছি কিছু প্রাচীন স্থাপত্যকলা খসে পড়া কয়েকটি ইট। সেকেন্ডের ব্যাকরণ নিবিষ্ট চোখ প্রত্নতাত্ত্বিকের জানি ফলাফল নির্ধারিত তবু কেন এই অন্ধ সঞ্চালন!

  • অনার্য রাখাল

    এই তো আমি উঠে দাঁড়ালাম শাস্ত্রবিরোধী এক অনার্য রাখাল চরের যুবকেরাও পার হয় নদী দেখে নিয়ে মুখোশের অন্ধদেয়াল। দ্যাখো – কাস্তের ধারে আছড়ে পড়ে গোটা গোটা সবজি, ফসলের দেহ কালোদের উৎসবে বাজে জ্যোৎস্নার তালি, নড়ে ওঠে শ্রমের উজ্জ্বল গৃহ। আর্যের মন্ত্র বড্ড ধাঁধা, দূষিত লাভার মতো সহজেই পড়ে নুয়ে ভূগোলের মাটি আনে ফসলের ধুমরোদে পোড়া…

  • টান্টালুস

    কী ছিল না তোমার, রাজন? বিপুল ভূখণ্ড, রাজপ্রাসাদ, সমরাস্ত্র, লোকবল কর্মব্যস্ত সংসার, বীরদর্প সন্তানেরা বাক্সভরা মণিমুক্তা, ক্ষেত্রভরা ফল-ফসালি বন্যা এসেছে বছর বছর, ভেসে গেছে ফসল নতুন পলির জমিতে দ্বিগুণ ফলেছে আবার। দেবতাতনুজ তুমি, দেবকুলে স্নেহধন্য শক্তি-সম্পদের পর্বতশৃঙ্গে বসেও নির্বৃত্ত হয়নি বুভুক্ষা তোমার আরো, আরো বৈভব লাভের আশায় তুমি হাত বাড়ালে নিষিদ্ধ স্থানে। তফাৎ বোঝোনি তুমি…

  • দীর্ঘ হচ্ছে সারি

    টিসিবির ট্রাকের পেছনে সারিগুলি দীর্ঘ হতে থাকে – নিত্যপণ্যদাম লাফিয়ে আকাশ ছুঁলে               গোলাপবাগের মাঠে একদিন               শিশুদের হল্লা থেমে যায় উৎসুক চোখে ওরা রাস্তার দৃশ্য দেখে অপেক্ষমাণ ভিড়ে আচানক হুড়াহুড়ি, চিৎকার                                    ছুট পড়িমরি নারী-পুরুষের দুটি সারি পশ্চিমে লম্বা হতে হতে ক্রমশ দীর্ঘ আরও, দীর্ঘতর বরাদ্দ বস্তাগুলি খালি করে ফিরে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাক সারির…

  • এমন কোনো দৃশ্যালোক নেই

    এই তো উন্মুখ হয়ে আছি আর হাওয়ার প্রপেলারে কেটে যাচ্ছে সময়। জড়বাদের কথা বলতে বলতে নিজেই এঁকেছি আমার অস্তিত্বের একটি অবিনাশী রূপরেখা। নতমুখ হয়ে আছি, ঝুঁকে আছি তোমার দিকেই            পুণ্যতোয়া জলে শুদ্ধ হবার বাসনায়। কোনো বিষাদে নয়, কোনো আহ্লাদে নয় নিঃসীম কোনো সত্যের মুখোমুখি হয়ে অভিজ্ঞতার সবটুকু দিয়ে অনেক হেঁটেছি। জ্যোৎস্না ও জলে ভিজতে…

  • যে বোঝেনি

    যে বোঝেনি ক্রীতদাসের চাহনি,  বোঝেনি অসহায়ের নীরবতা।  যে দেখেনি পাখিদের স্বাধীনতা,  অনুভব করেনি ঝরনার ছন্দ।  তাঁকে বলো না নাগরিক বৈষম্য,  বলো না পাতারাও কেন লটকে থাকে।  কোন মায়ায় গৃহবন্দি বঁধুয়া,  কেন স্থির থেকেও হাসছে নক্ষত্র।  বলো না তাকে জাগতিক কিছু,  দেখিও না জাগরণের তীব্র কলরব!  ও বুঝবে না শাসন ও শোষণের গল্প,  যে অন্ধ, নিজ…

  • স্বাধীনতা শুধু একটি পতাকা নয়

    আমার স্বাধীনতা মানে গণতন্ত্র দ্বিধাহীন চিৎকার হাওয়ায় ওড়ানো বাজি স্বদেশে সদম্ভে বুক টান করে হাঁটা আমার স্বাধীনতা সেলাইহীন ঠোঁট যা ইচ্ছে বলতে পারা কারো পছন্দ হোক বা না হোক। আমার স্বাধীনতা তসবিহ হাতে মওলানার মসজিদে যাওয়া মন্দিরে উলুধ্বনি শঙ্খধ্বনি শুক্লাদির বাড়ি। গির্জা, প্যাগোডায় যাক যে যার মতো আমার স্বাধীনতা কেউ হাওয়ায় উড়াক বাজি যা ইচ্ছে…

  • অমোঘ

    অভিশপ্ত ইডিপাস আমার শরীর জুড়ে যে অসংখ্য চোখ রয়েছে তার থেকে তুমি স্রেফ দুটি চোখ তুলে নাও একটিতে দেখো তুমি নিয়তি অন্যটিতে মৃত্যু জুয়ার জীবনের খেলা তখনই হবে শুরু শুধু জানবে না কে সে নাটের গুরু আপেল চুরির রহস্য মিশে থাকবে কৃষ্ণবিবরে শুধু তুমি দুটো চোখ নিয়ে নিয়তি ও মৃত্যুর দ্বৈত সরোবরে একটি অভিশাপ হয়ে…