কবিতা
-
উড়ে যায় সময়
শরতের শিউলি ঝরে পড়ে রোজ শিশুকালের আলো-আঁধারের স্মৃতি কত চেনা অচেনা ফুলের বাগান আর সব ভুতুড়ে বাড়িতে ফেরার গল্প। কত কান্না ঝরে যায় চোখের পাপড়ি বেয়ে কাঠ চেরাইয়ের কলের নিচে নিজেকে শুইয়ে রাখি। তবু ভুলতে পারি না কাকে? এখন আর বলতে পারি না। শুধু মনে হয় কেউ একজন ছিল। কাশবনে গেলে হয়তোবা তাকে খুঁজে পাওয়া…
-
তুমি ভালো থেকো শকুন্তলা
প্রকৃতি দিনরাত চেষ্টা করে চলেছে মানুষে মানুষে ভালোবাসা সৃষ্টি হোক, তার মতো সান্ত্বনা হয়ে নির্জনে নিজেকে মেলে ধরুক … সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের গোধূলি শিখুক; শৈলশিখরে দৃশ্যমান সূর্যের উদয় মুহূর্তে ক্ষণে ক্ষণে আকাশে যে নান্দনিক দৃশ্যের সূচনা হয় মানুষ তা নিজের জীবনে অনুবাদ করে প্রতিফলনের আনন্দে লোকজ জীবনে বাস্তবায়িত করতে শিখুক; প্রিয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লালনের…
-
সুচ
মানুষ একটি জাদুকরী সুতীক্ষè সুচের শক্তিসৌন্দর্য নিয়েই পৃথিবীতে আসে যা যে-কোনো কঠিন বস্তুকে ভেদ করে যায় – ওই সুচের ডগায় কোন হাইপার মারণাস্ত্রের আয়ু কয়েক মুহূর্ত! এই সুচের সংবাদ জানাটাই মানুষের দ্বিতীয় সৌভাগ্য যা নিশ্চিত করে মনুষ্য অভিধা! অসংখ্য জন্মের স্রোতে তাই মানুষ সংখ্যকমাত্র!
-
সেতুর উপর গালিয়া
মস্কো নদীর সেতুর উপর হঠাৎ হলো সাক্ষাৎকার নদী তখন সূর্য-তেজে গলন্ত এক দীপ্ত ধাতু ফাল্গুন না চৈত্র মাস ঠিক মনে নেই এখন আমার উরালদেশি আধো আধো মিষ্টি রুশি উচ্চারণে মনের ভিতর কুয়াশানীল, চোখেও কী আশ্চর্য জাদু গলার রুমাল ঘোমটা হলো, কপালে টিপ কী বিভ্রমে হঠাৎ সিঁদুর, বেলাশেষের ক্লান্ত আলো এক ঝলকে স্নিগ্ধ শিথিল জ্যোৎস্না যেন…
-
প্রেমের ঝড় ও কাঁপনে কী করো তুমি সৃজন
চোখের উপর হাত চাপা দিয়ে জেগে ঘুমাও কেন? খোলা জানালার মতো তোমার শরীর মনের সবগুলো জানালা খুলে দাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তোমারও সব কিছু হাসে ঘুমের পাহারায় না থেকে কারো শরীরের পাহারায় থাকো তুমি, অতীতের ধুলোগুলো উড়তে থাকুক। জীবনে গাঁথছো তুমি সুখ ও আনন্দ, গাঁথছো পাখির ডাক আর নদীর গান গেয়ে চলা। এই পৃথিবীর…
-
জোড়া কবর
তোমার পাঁজরে জোড়া কবর খুঁড়ে রেখো, দুজনে ঘুমিয়ে থাকবো পাখির ছানার মতো … ছুটির দরখাস্ত দিয়ে রেখেছি মালিকের কাছে, মঞ্জুর হোক বা না হোক আমি আসবোই মানকচুর পাতা মাথায় তোমার চোখের মেঘ থেকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নামলে, জানি দেখা হবে না … আমাদের পায়ের ছাপ ধরে এখনো ঘুরে বেড়ায় এতিম কৈশোর, যৌবনের ভরাবিলে গোলাপি শাপলা শোল…
-
পিকাসোর পোর্ট্রেট থেকে
মানুষ সহজে মরে না। আত্মা ধ্যানঋষি। পিকাসোর পোর্ট্রেট থেকে খসে পড়ে নাগরিক চাঁদ। বাতাস নির্ঘুম রাতে আকাশ ধুয়ে যায় মেঘ কাশফুল কফিনে। আর্ট গ্যালারি থেকে শত শত মৃত মানুষ উঠে আসে আয়ু শীতের শূন্যতা বাগানবাড়ি। খেয়া পারাপার ঘটনাবলি ঢেউ বরফের নদী। চুল্লির আগুনে দাহপোড়া কাঠ নির্গত বায়ু। নিস্তব্ধ চরাচর শেষযাত্রায় স্বপ্নের বুনন ছায়া দৃশ্যের অন্তরালে…
-
সম্পদ
জিতু মণ্ডল আমার বাবার দাদা বাবা জানতেন না ঠিক কোন জায়গায় তার দাদার কবর মনিরউদ্দিন মুন্সী আমার দাদা আমিও জানি না, ঠিক কোথায় দাদার কবর! আমার নাতি-নাতনিও একসময় জানবে না ঠিক কোথায় আমার কবর ওগো অকথ্য সম্পদ তোমার সাথে এই সম্পর্ক কতদিনের? কাঁহাতক যায়? তোমাকে ধ্যানজ্ঞান করে কী লাভ হলো আজ যদি খুইয়েছি তোমার জন্য…
-
অনিবেদিত প্রেম
দাও তোমার অগ্রন্থিত সমস্ত কবিতা – জোনাকির ম্লান আলোয় পড়ে ফেলি আমাকে লেখা তোমার যাবতীয় বসন্তবাসনা – আমাকে শোনাও তোমার অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র – যার প্রতিটি পঙ্ক্তি তোমারই হৃদয়ের যথার্থ অনুবাদ – প্রতিটি উপমান একেকটি বাঁশপাতার চেয়েও দামি – ঘাসের ডগায় চিকচিক করা একবিন্দু শিশিরের চেয়েও ভারী, প্রকাণ্ড – মনে পড়ে হ্রস্ব দিন, ভাবতীর্থের দিঘি –…
-
উত্তাপ বাড়ে
তুমি বাউল হলে ফাঁকা থাকে চৌকাঠ, সুখেনের ঘর বড় একা একা লাগে। সবাই পর পর ভাবে। উৎসুক মুখ মলিন হলে – হেমন্তের হাওয়ায় আরো উত্তাপ বাড়ে মনের ভেতর কেমন ধুকপুক করে তুমি বাউল হলে সন্ধানে নামে কেউ কোথায় একতারা, বাউলানির ধ্যান যা কিছু দেখি নতুন লাগে আরো নতুন লাগে অচেনা রাত মাঠঘাট, হাটবাজার,…
-
রাত্রির সাদা ফুল প্রেম
রাত্রির সাদা ফুল প্রেম – শিথানে সুঘ্রাণ – বেভুল বাতাসে দোল খায়। পরান উথলায় – নয়া পানির মাছের মতো উজানি হৃদয়, এখনো সময় কাটে রাজপথে – আওয়াজে। অনাহারি মুখ রাতের রুগ্ণ চাঁদ, তিলে তিলে ক্ষয়ে যায় মৃত্যুর কাছে এসে। তবু ফিরে থাকায় ক্ষীণ নক্ষত্রের মতো। বুকের তলায় অসুখের মতো সুখ, চাতক হৃদয় স্বপ্ন বোনে –…
-
আমাদের টেলিভিশন
তুমি চলে যাওয়ার পর আমাদের দীর্ঘদিনের টেলিভিশনটা নষ্ট হয়ে গেল। ওটা আর কোনোদিনই চালু হবে না। কোনোদিন পর্দা হবে না সবুজ-সুনীল। এখন চোখে চোখে নিদ্রাহীন নুহের প্লাবন। অন্য চোখে উল্লাস প্রবল ফাঁকা ছায়াহীন একটা ঘর কেবল মায়ার টানে কপিকল ঘুরে। আমার বাবা বললেন, দেখো এর চেয়ে ভালো একটা টেলিভিশন তোমাদের এনে দেব আমরা তখন একসাথে…