কবিতা

  • জানি বৃষ্টি আসবেই

    সারাদিন বৃষ্টি-প্রার্থনায় থাকি একটুকরো মেঘের জন্যই প্রত্যাশা এমনকি রাত্রিও যায় বিষণ্ন রোদনে মাঠজুড়ে ধানকন্যার কষ্টের প্রলাপ মেঘেরা উড়ে উড়ে বনবাসে যায়, চৈত্র কি শাওন কি পৌষের হিম কোথাও বৃষ্টি নেই জনপদে শিশুদের তীক্ষ্ণ বিলাপ মায়েদের শুষ্ক ওলান, তবে এর সবকিছুই ক্ষণিক যেমন রাত্রি দিনের জন্যই নামে যেমন চমৎকার সকাল উপ্ত থাকে শর্বরীর ঘনকৃষ্ণ খামে তেমনি…

  • রেইনি

    বৃষ্টিবাদলার ঢাকা মেঘদূতের মহল্লা পুড়ে যাওয়া মল্লার ভেজা আত্মার এস্রাজ পট্যাটো রোস্টেড না ম্যাশ ভ্যান গঘ জানেন বেশ এই কাদাপানির রাস্তা সানাইয়ে বিষণ্ন বিসমিল্লা ও মেয়ের স্তনের বনাঞ্চল হঠাৎ প্রেম লেগে চঞ্চল হু-হু হাওয়ার সমাধি, আজীবন রোদ মাথায় আমি আজ তোমার মেঘলা মনের মুখোমুখি।

  • একটি প্রার্থনা

    সময়ের টুঁটি চেপে ধরে বলি তোমার আগেই রবে আমার শকট ভীরুতার তরবারি ভেঙে গেছে অশোকের হাতে গগনে তবু শুধু নৈরাজ্যিক মাঠ এখানে দেখবে মঞ্চে দর্শক টিকিট কেটে খেলা তাই তো এবার নয় পাতানো সংবাদ নিয়ে করতালি দেয়া এখন দুপুর নামে ভয়ার্ত তিমিরে মেঘলা চাদরে সব কিঙ্করীরা ঘুমে করোনা নামের এক দৈত্য এসে দরবারে বসে বাজায়…

  • অনেক কিছু দেখার আছে

    আমার অনেক কিছু দেখার আছে ॥ আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা শিশুর মুখ, পথের অভুক্ত কুকুরের লালায়িত জিহ্বা। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরীর লাশ, সঙ্গোপনে প্রেমিকের আর্তনাদ। অবুঝ সন্তানের কোলে মায়ের লাশ, পথে পড়ে থাকা নিহত কিশোর, কুমারীর গর্ভে অবহেলায় বেড়ে ওঠা অভিশপ্ত শিশু আমার আরো অনেক কিছু দেখার আছে ॥ আমার বেঁকে যাওয়া মেরুদণ্ড – আমার বিকল…

  • প্রাচীর

    অট্টালিকা নয়, আটপৌরে টিনের চাল আঁতুর দেয়ালগুলি পলেস্তারাহীন অশঙ্ক প্রাচীর চারধারে পাহারায় তরল শৈশবের বিবক্ষু কোলাহল গৃহের অলিন্দে অলিন্দে নিষুপ্ত। যাপিত জীবনের প্রান্তভাগে এসে ইচ্ছা হয় একবার চোখে দেখে আসি প্রাচীন প্রাচীরখানা আছে কি আজো রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ঋজু দণ্ডায়মান কালের স্থবির সাক্ষী দৃষ্টি নির্লেপ। অবশেষে একদিন সেই বাস্তুভিটায় উপস্থিত আমি – বক্ষ কম্পমান আশ্রয়ের লোভে নয়,…

  • শ্রাবণদিনে হারিয়েছে সুন্দরী

    মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠি দুর্জয়-ঝড় এলো বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যাবে – খেয়ার ডিঙ্গি! বহুরূপী-রূপ বদলায় ক্ষণে ক্ষণে মেঘ উড়ে কালনদী ঝড়ঝঞ্ঝা যেন মাতাল ক্ষ্যাপা হাতি; আকাশ-বাতাস দেহ নাচিয়ে হাসে জন্তুর হাসি নিপোশাকে নেমে আসে চক্ররাশি। রোদফাটা মাটির কণায় গড়ায় প্রেয়সী উর্বশী আলিঙ্গনে মাতে লাভা অগ্নিগিরি; পরাবাস্তব রংধনুর লীন হাসি দেখে হেসে উঠি হেসে ওঠে আঙিনা…

  • জাতির পিতা তিনি

    দিগন্তবিস্তৃত আকাশের মতোই বিশাল এক হৃদয় ছিল যার শেখ মুজিবুর রহমান নাম তাঁর। ভেতরে বাইরে অভিন্ন মানুষ সংগ্রামের নিউক্লিয়াস যিনি শেখ মুজিবুর রহমান তিনি। জাতির স্বপ্নের কথা বজ্রকণ্ঠে অর্কেস্ট্রার মতোই অনুপম ছন্দে অনুক্ষণ কণ্ঠে বেজেছে যার শেখ মুজিবুর রহমান নাম তাঁর। স্বাধিকারের ডিঙিতে চড়িয়ে স্বাধীনতার জাহাজে জাতিকে তুলেছেন যিনি স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু তিনি। স্বাধীনতার মহান…

  • হে বন্ধু আমার

    শেষবার তোমার কোলে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম মুজিব যখন মৃত্যুদণ্ড এবং প্রবাসে। এরপর ফিরলেন তিনি স্বদেশে, সংক্ষিপ্তভাবে উদ্যাপিত হয়ে নিহত হলেন যেই, কান্নার বদলে ইতিহাসে পর্যালোচনায় খুব ডুবে গেছি, এবং দেখেছি অন্যান্য অনেক চোরা খুন; তথাপি ভেঙে পড়িনি, সৃজিত চৌধুরী আর জাকারিয়াদের বাঙালির আত্মপরিচয় বিষয়ক সেমিনারে এমনকি কূটতার্কিকের ভূমিকা নিয়েছি কিংবা নর্মদা নদীর সংরক্ষণে যে-নারীটি ব্যস্ত…

  • ধন্য সেই পুরুষ

    ধন্য সেই পুরুষ নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে; ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মত উপত্যকায়; ধন্য সেই পুরুষ হৈমন্তিক বিল থেকে যে উঠে আসে রঙ বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে। ধন্য সেই পুরুষ কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে                                                              আসে ফসলের…

  • পিতা চিরঞ্জীব

    ঘুমিয়ে আছেন পিতা টুঙ্গিপাড়ার স্নিগ্ধ ঘাসে তাঁরই কণ্ঠস্বর আজো প্রতিধ্বনি বুকের বাঁপাশে। মৃত্যু মুছে দিতে পারে এমন অক্ষয় ভালোবাসা! পারে না বলেই আজো বাঙালির বুকে জাগে আশা। তিনি তো আছেন প্রতি নিশ্বাসে-বিশ্বাসে। মানুষের জাগরণে, প্রগতির আন্দোলনে উজ্জ্বল উদ্ভাসে। কোটি কোটি মানুষের অন্তরে অনির্বাণ যাঁর অবদান তিনি তো সূর্যই, তাঁর মৃত্যু হলে পৃথিবীর হবে অবসান। মহান…

  • তিনি উজ্জ্বল দাঁড়িয়ে আছেন 

    যাপনের সকাল দুপুর আর সন্ধে ভোরবেলা  বেদনার মেঘ বুকে নিয়ে পা ফেলেছো দূর দিগন্তের প্রান্তে, কখনো খোঁজনি তুমি বৃষ্টির আকাশ, স্বরচিত আলো জ্বেলে হেঁটে গেছো তুমি  বড়ো একা-ক্লান্তিহীন; একদিন এই বাড়িগুলি, ঘরগুলি বকুলতলার ছায়া  আমাদের আপন ছিল না, স্বপ্নভাঙা বুকভরা দীর্ঘশ^াস ছিল জীবনের  তোমার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো উজ্জ্বল উচ্চারণ  – ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বধ্যভূমি, শহিদ মিনার –…

  • স্মৃতিসত্য

    (উৎস : শেখ মুজিবুর রহমান-রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী) ভূমিকা সময় নির্মাণ করে মানুষের বহুবিধ কাজের সোপান ওরা আমার উর্বর সময়ের বুকে বসিয়ে রাখছে দাহ, জন্মক্রুদ্ধ বিষধর ছোরা ক্লান্ত পথিকের মতো বেঁচে থাকাটুকু                                    বয়ে নিয়ে বাঁচি ‘বসেই তো আছ, লেখ, তোমার জীবনের গল্প আর                               স্মৃতি-সত্যগুলো’ জেলগেটে যতবার দেখা, সহধর্মিণীর চাপা অনুরোধ একবার, হাতে গুঁজে দিলো…