কবিতা

  • রহস্যময়ী

    কেটে গেছে অনেকগুলো বছর পদ্মদিঘির পাড়ে জমে উঠেছে শ্যামলা রঙের দিনগুলো নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে হেরে যাচ্ছি সমাজ-বন্ধুর কাছে অযথা নিজেকে লুকিয়ে রাখার নির্মম বাসনায় পালিয়ে বেড়াই। গভীর থেকে গভীরতার মধ্যেও তলিয়ে যায়, সে কি আশ্রয় চেয়েছিল হাতের তালুতে, জানি না তবে সে ফিরেছে নৈর্ব্যক্তিক আঙ্গিকে ঘন কুয়াশার ভেতরে মিশে যাচ্ছে দুধসাদা জোছনার পথে…

  • সে আশ্চর্য দহ

    হৃদয় এক আশ্চর্য দহ বলেছি যেই খিলখিল, শ্যামা বউদির হাসি উল্লোল; হিল্লোল থামলে ঘোমটা নামিয়ে চোখের গহন কাজল তুলে টিপ আঁকলেন কপালে শরাহত পথিক সে-জন, বোঝে এক নয় – ভুবন, আঁচলে সামান্যই ঢাকে। তোলপাড় দহের জল শ্যামাবউটি দরজা সদরের।

  • রঙ্গন চুম্বন চায়

    খোঁপায় বাগান সুন্দর হইল রঙ্গন ফুলের রংটা লাল সংযম ধইরা রাখতে কষ্ট মন কী ব্যাকুল হয় বেহাল। ছোঁয়া যায় না সেই ফুলে রে রই বেচইন কোন ভুলে রে দুঃখের নিশি কাটতে চায় না কিচ্ছুতে আর শান্তি পায় না দেখবে কবে ভোর সকাল। রঙ্গন পুষ্পের বর্ণিল ছটায় আবেগ-উচ্ছ্বাস ধুলায় লুটায় বুকের ভেতর দ্যায় সে মোচড় কাঁইপা…

  • বন্দি পাখি

    পরিণাম যে নির্মম হবেই আগে থাকতেই জানা চারপাশে খুব কড়াকড়ি বিঘ্ন বিপদ নানা জাইনা-শুইনাই বিষ খাইয়াছি বিষের বর্ণ নীল দংশন ছোবল জান পেরেশান মৌচাকে দ্যায় ঢিল পরানপঙ্খি আমি তোমার খুলবা কবে খাঁচার দুয়ার ভালোবাইসা হইছি কঙ্কাল খাইতে দিচ্ছ সকাল-বিকাল একটু পানি দানা। ওড়াউড়ি আর কী হবে? মুক্ত স্বাধীন হই যে কবে বন্দি যে একটানা।

  • ছায়াতে বিলীন

    যখন নিজের ছায়াকে আর দেখা যায় না চিত্ররূপ মনের ভেতরে থেকে প্রখর দুপুরবেলায় পারম্পর্য রেখে যে-ছবি ভেসে ওঠে চোখের সমুখে চোখের পেছনে ঠিক অন্যরূপ। মধ্যদুপুরে বদলে যায় ছায়া-প্রচ্ছায়া কখনো নিহিত হয় কিংবা নিহত হয় মিশে যাওয়া রোদের ভেতর নির্ণীত মুখের কাঠামো খুঁজতে গিয়ে নিজের ছায়ার সাথে নিজেকে মেলাতে ব্যর্থ এই আমি ছায়াতে বিলীন। কখনো কখনো…

  • ঢেউমন্ত্র

    ফিরে গেলে এবার – মন্ত্র দেবো তোমায় কীভাবে ঢেউমন্ত্রে পার হতে হয় নৌ-যুবতীর গাঙ আমি যে বাড়তি দেহের মানুষ জানবে কোনো কোনো পারাপার কেন এত সহজ নয় যেমন এত সরল সমীকরণ নয় মালা গাঁথার ফুলপথ ওই অর্ঘ্যরে অঙ্গে লেগে আছে প্রজাপতিদের আকাশ নামানো বর্ষার গান মৌরানির ফুল থেকে ফুলে নিষিক্ত সময়ের ঘ্রাণ শত স্মৃতি স্মরণ…

  • মহাপ্রস্তুতি

    আরো এক হাজার বিস্ময়কর কবিতা লেখার প্রস্তুতি চলছে এবং এক হাজার পিরামিড তৈরির পরিকল্পনা যে-সমস্ত বই এখনো লেখা হয়নি সেগুলো মুদ্রণের কার্যাদেশ চূড়ান্ত কারাগারের ফটকগুলো ফাঁক যেন বন্দিরা ইচ্ছেমতো ঢুকতে কিংবা বেরুতে পারে আর লাইব্রেরির দরোজা বন্ধ কেননা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব বই না পড়ে কেউ বেরুতে না পারে ব্যাংকগুলো তার প্রয়োজন হারিয়েছে ফলে এখন সবার…

  • প্রশ্ন

    গভীর রাতের সাথে জলের কী কথা হয় সাগরমুখী সব নদী হয়তো জানে আমার জানার ইচ্ছে হলে আমি ডেকের জানালায় বাতাসের কাছে জানতে চাই সে কোনো উত্তর দিতে পারে না ঘনকুয়াশামাখা রাতে চাঁদের মৃত্যু হলে অন্ধকার আরো ঘনীভূত হয় চোখের সব শক্তি দিয়ে তাকিয়ে থাকি কোন দিকে পৃথিবী? কোনদিকে মানবজনম? অসীমের সাথে তার যোগ? নাকি নিবিড়…

  • শ্রাবণের শরীর

    কতবার ফেলে এসে কতদিন ডেকেছি তোমায় গোপন দাওয়ায়। ঘুম ভেঙে বারবার শ্রাবণের ডুবভেজার গল্প শুনি। বহুবার কতবার কদমফুলেরা এসে ডেকে যায়, স্বপ্নে কাতর – শুনে যায় এভাবেই, পায় না কিছুই! ওরাও কি একদিন ভেসে আসে শ্রাবণের এতসব যুবতী শরীর নিয়ে – আরো কোনো কাকভেজা ডিঙিজল, নোনাজল ভাঙনের মৃত কোনো স্বপ্নরেখায়। তারাও কি তৃষ্ণার জল হয়ে…

  • নিজস্বতা

    কলিংবেলে আঙুল রাখি – নিয়মিত ভুল করি। দরজায় তাকিয়ে দেখি নিঃসঙ্গ তালা – তাকিয়ে আমাকেই দেখে, তবু এই ভুল বারবার হয়, হয়ে যায় মনের অজান্তে – দূরত্ব হাতের তালুর রেখায় গণিতের নির্ভুল ফলেও একঝাঁক ভুলের হানা – ভুলের মাঝেও খুঁজে পাই তোমাকে, তুমিময় ঘর আলোর ছটায় দিনের ঘুম কেটে যায় – সেদিন তোমাকে রেখে চোখের…

  • বিধিমালা

    কেমন আছো জনাবালি? বিবি কোটা পূরণ হয়েছে তোমার? এক হালি গাভি রাখলে গেরস্তালের দম্ভ বাড়ে। চার গণ্ডা ফসলিজমি আর বহুত বর্গাচাষি। বাহ্ দহলার গোমস্তা তুমি, তাই বুঝি, বেগমও ঠিক চারটে লাগে? তুমি মিয়া ধর্মমতেই কবুল বলছ, বিবাহ করছ, তবু ছোটবিবি জানি ক্যামন ক্যামন নিয়ম ভাঙতে চায়। পর্দাপ্রথায় বেঢপ চপেট লাগায়। আহারে ভোগবিদ্যায় না জানি তোমার…

  • ঠিকানা

    বাউলের আখড়া থেকে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এসে, মৃত্যুকে খোঁয়াড়ে বন্দি করে, যে-শিশু নাচছে আগুনলাগা গাছে, তার ঠিকানা জানে না এ তল্লাটের বাসিন্দারা … একটা পাখি তার নাম ধরে ডাকতেই, আজব শব্দের ডানায় চড়ে উচ্চারিত শব্দরা মিলিয়ে গেল আগুনের মেঘে; পোড়া গাছের ছাইগাদায় তলিয়ে গেল আস্ত গ্রাম; শিশুটি পাখির পালকে মুখ লুকিয়ে হেসে উঠতেই, সবুজে ছেয়ে…