মাহবুব সাদিক
-
অজানা অন্ধকার পথে
শাশ্বতীর যাত্রাপথে সঙ্গী ছিলো না কেউ ছিলো ক্ষুরধার অন্ধকার চারপাশে অনিশ্চিত কালের আঁধারে এগিয়েছি একা একা কণ্টকিত পথে, নিঃসঙ্গতা ফেল্টের টুপির মতো শুষেছে মাথার ঘাম ছিলো তবু বুকে সৃষ্টির তীব্র অনল দহন করেছে যা রক্তমাংস এবং হৃদয়; যা ছিলো সুদূর আলোর রেখা তাও শেষে প্রেতের মতন ছড়িয়েছে নারকী কুহক তবু ছিলো দূর চক্রবালের…
-
পুষ্পপ্রণয়ী চাষা
সিত-পুষ্পের পাশ-ঘেঁষে পথ চলি দেখি বড়বেশি ম্লান মুখ তার – অবনত মাথা, শরীর দুভাঁজ – এই গ্রহণের দিনে যায় না তাকানো এতটা দুর্গতি তার; ভূমি থেকে জল সরে গেছে বহুদূর কে জানে তা গেছে কি না অসীম সুদূরে, আদরে-সোহাগে তাকে কাছে পাবো এমন ভরসা উধাও শূন্যে আজ; গ্রহণের দিনে ভয় মানি তাই – ভয়…
-
বিদ্বেষ ও ভ্রান্তির শেষে
কী করে এলাম এই এতদূরে বিমূঢ় চাতালে পথে পথে ছিল বুঝি ভ্রান্তির বিদ্বেষ হয়তো সেটাই ছিল হিসেবের ভূত – হাতছাড়া হয়ে গেছে কতকিছু প্রায় শূন্য হয়ে এলো আমার ভাঁড়ার, হয়তো প্রবীণ দিন খুবলে খাবে আরো কতকিছু! তখন ব্যাকুল হাত হাতড়াবে স্মৃতির খনিই নাকি ওকেই বলেছে কেউ জ¦লে-ওঠা দ্যুতিগর্ভ জীবনআধার! সারাটা জীবন আমি…
-
বাবেলের থেকে দূরে – বহুদূরে
হিথরোতে দেখা হলো তার সাথে রেস্তোরাঁর খাবার টেবিলে কথা হলো ভাঙা ফরাসিতে – দুজনেই যেন এইমাত্র এসে গেছি বাবেলের অসমাপ্ত ভাঙা দুর্গ থেকে – কেউ কারো ভাষাও জানি না – মেয়েটির মুখচোখ আশ্চর্য ধারালো – হয়তো উঠেছে বেড়ে একালের দ্রুতগতি জঙ্গম জীবনের স্রোতে কোনো পুঁজির প্রাসাদে, আমি তার নীল চোখে চাই, দেখি এক আদিম অরণ্য…
-
বিদ্বেষের তীর
কেউ কি সত্যি তাকিয়ে রয়েছে সুতীব্র চোখে আজ! শিউরে উঠছি আমি ক্ষণে ক্ষণে – কাঁপছে হাত-পা বড়ো বেশি বিব্রত লাগছে নিজেকে – স্তব্ধ-স্বচ্ছ দিন তার শেষ ক্ষণটুকু সাধ্যমতো সবটুকু দীপ্তি যেন উদার দুহাতে দিচ্ছে ঢেলে আমার শরীরে – কী অবিশ্বাস্য, কী অযৌক্তিক এই দান! কারো সুতীব্র চোখ তবু কি হাতড়ে যাচ্ছে আমাকেই? মাথার ভেতরে…
-
কার গাঢ় দীর্ঘশ্বাস!
মাঝরাতে অকস্মাৎ কার গহনের ঘোরগাঢ় দীর্ঘশ্বাসে ঘুম ভেঙে জেগে দেখি জানালায় নাক ঘষে ক্লান্ত এক রাতের পৃথিবী- ঘর থেকে বাইরে নেমে আসি খড়কুটো নড়ে, হালকা বাতাসে কেঁপে ওঠে ঘাসপাতা ছোট্ট সোনা কাঠবেড়ালিটা পুটোচোখে চায় – পাতা নড়ে, পাতা ঝরে ঘাসের গহনে, হয়তো কোথাও কোনো আড়ালে-আবডালে খাপ পেতে বসে আছে মুখভরা দাড়ির আড়ালে কোনো…
-
দ্বিধাঘোর
হয়তো আমার চোখমুখে ছিল আবেগের গাঢ় রেখা – চাঁদজ¦লা রাতে আলোর ইন্দ্রজালে যখন ছিলাম নিবিড় স্বপ্নে ডুবে দুজনে হেঁটেছি নীরবেই পাশাপাশি, সেটুকুই ছিল অর্জিত অধিকার – তবু মনে হলো কোথাও গহনে তার রয়ে গেছে দ্বিধাঘোর নাকি সে নিজেই ছিল দর্পিতা আরো – চোখ তার ছায়াময় খুঁজেও পায়নি মিলন-মাধুরী প্রিয় রয়েছে যা আঁকা মহাকাল মুখজুড়ে –…
-
জানা নেই কিছু!
জানি না জীবন হৃদয়ে কেন যে ভ্রান্তিরে দিলো ঠাঁই দিলো প্রশ্রয় ভুল পাত্রের মরণমদিরা গিলে নাকি তাই ছিল জীবনডানায় ঝড়তোলা প্রাণপাখি! কে জানে কী ছিল ছিল-বা কোথায় শুদ্ধ বা ভুলে-ভরা পায়েচলা পথে একালের যান ঠেলে এগুনো-পেছানো খেলা; প্রগাঢ় রোদের কাঠফাটা দিনে অসহ গরমে ঘেমে কালকে ভুলিনি – মানবীয় ভুলে ঘটেনি ব্যত্যয় কোনো বেতালা বাতাসে…
-
প্রিয়তম পৃথিবী আমার
গাছেরা মেতেছে খুব নান্দনিক নাচে অবেলার এই অকাল বসন্তে এবার, গাঢ় নীল আকাশের তলে পাতারাও নামিয়েছে সবুজের অঢেল সুন্দর – দূর শৈশবের পরে বাহারি ফুলের দল ছত্রিশ রঙের আয়োজনে কখনো এমন মেতেছে বলে মনেও পড়ে না; ছায়াতলে শীর্ণ গাছেরাও যৌবনের নানারং ঘাগরা মেলে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সেও ফেলনা কেউ নয়; অন্যদিকে মানবসংসারে আজ তীব্র হুলস্থূল…
-
সময়ের কাছ থেকে
পালাতে পালাতে শেষে এইখানে বনের কিনারে – কালচে সবুজের ফাঁকে শেষ বিকেলের অদ্ভুত আলো এসে ঢুকে পড়ছে তোমার চোখে এই আলো সত্যি অপার্থিব – যেন তা কল্পনার স্বর্গ থেকে নেমে আসছে ধরাধামে, তবে বর্তমান বড়ো শত্রু ভয়ানক – বনের ছায়া-ছায়া অচেনা আলো-আঁধারি চমক নৃশংসতা ভয় আতঙ্ক ধূসর-বিস্ময় – সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত আলাদা চরিত্রই যেন…
-
আমার আবেগ
(আবুল হাসনাত স্মরণে) তুমি দেখেছিলে একা, জেনেছিলে কতকিছু জীবনের দ্বন্দ্ব থেকে পেয়ে গেছো জ্ঞান আর স্মৃতি মাঝে মাঝে সেইখানে নেচে গেছে স্মৃতির চড়ুই – জেনেছিলে এই সত্য – সময় চলেছে উড়ে ক্রূরচোখ ঈগলের মতো – রূপসীর রূপের জাদুও তার নখে ছিঁড়েখুঁড়ে যায়, মানবশরীরও বাঁচে না শুধু হৃদয় বাঁচে অন্যদের হৃদয়-গভীরে তোমার নশ্বর দেহ চলে…
-
খণ্ডিত-টুকরো জীবন
মাহবুব সাদিক নদীটা উতল – ঢেউভাঙে, স্রোতে দোলে ভাঙে জল এইখানে প্রায় দুইভাঁজে বাঁকফেরা নদী তবু তুমি দেখছো তাকে অখণ্ড নদীই – নিজেকে কি মনে হয় ওরকম অখণ্ডসত্তা কোনো? এই প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর আমার ঠোঁটচাপা বোধ; জীবন টেনেছে খুব – টানায়-পোড়েনে ছিঁড়েফেটে শেষে খণ্ড খণ্ড হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে সারা পৃথিবীতে বেশিটাই স্বদেশের এখানে-ওখানে, বেশকিছু বিদেশে-বিভূঁইয়ে…