April
-
ভূমিজ চর্যার ইতিহাস
অক্ষরের সুবিন্যস্ত অবয়বে লেখা আবেগের বাহন হয়ে যে আমার জীবন রচনার ক্ষেত্রে গল্প হয়ে ফুটে ওঠে প্রিয় বর্ণমালা – নিশীথ রাতের এক কুহকিনী – যে আমার অস্তিত্বের সংবেদী ঠিকানা – যে আমার হৃদয়ের গহিন সুন্দর, বোধের দু’কূল বেয়ে থরে থরে মৌন মৃত্তিকার স্তরে সাজানো গোলাপ – যে আমার উদাসীন পাথারের একা সঙ্গিনী যে আমার কর্মব্যস্ত…
-
আমার পক্ষ
আমি ফিলিস্তিনের পাশে আছি। ফিলিস্তিনের মাঠে যেসব ঘাস যেসব শিশুর খেলা আর স্কুলের পড়াশুনা আমি তার পাশে আছি। আমি সেই জানালাটার পাশে আছি যে জানালায় কবিতা লেখা হয় আকাশ দেখা হয় আর জোছনা এসে পড়ে ঝরে। আমি সেই হাটবাজারের পক্ষে আছি যেখানে মানুষের উত্তাপে উত্তাপে ওঠে জমে। মানুষ আনন্দমুখর হয় কোলাহল করে। আমি কোনো নির্জনতার…
-
তীর্থনদ
ব্রহ্মপুত্রের একান্ত নিজের এক গান আছে তার বিশাল বিশাল চর, চরের কাশবন সরিষার হলদে বান, জলের ভয়াল পাঁকের যে স্বরলিপি, যে সুর তা আর কারো নেই তার কাছে এলে আর কোনো গান শোনা যায় না মোসার্ত, ম্যারাডোনা কী মাইকেল থেকে জ্যানেট জ্যাকসন, সাকিরা কী ডায়নার দেহ ও প্রেমের গান, গল্প এখানে কোনো সুর খুঁজে পায়…
-
নিনাদ
তোমার পদধ্বনির ভারে টলে গেল ব্রহ্মাণ্ডের নীরবতা সশব্দ বাজলো বুকে মৃত্তিকার প্রবল আর্তনাদের গান মাটি চিরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে অনর্থ প্রলাপ কোথায় লুকানো হৃৎপিণ্ড সেইখানে চোরাছন্দে বেজে বেজে অর্থ পাবে বলে …
-
মাতৃবেদনা
দুঃখভারাবনতা মাকে বহুদিন দেখেছি একা একা ঘরের ভিতর মুখ নত, বিশীর্ণ দু-গালে বহমান উচ্ছ্রিত নোনাধারা – সেই নীরব নত অশ্রুপাতে আমাদের ছোটঘরে কথাহীন জড়ো হতো পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের পাথর বিমূঢ় প্রশ্ন করি শিশু কৌতূহলে, ‘কী হইছে মা?’ ‘বুঝবি না তুই, বাবা’, বলতে বলতে আঁচলে চোখ মুছে মা সরে যেতেন অন্যদিকে … আমার প্রাত্যহিক…
-
আমি এই পথে আরো কিছুদিন হেঁটে যাবো
আমি এই পথে আরো কিছুদিন হেঁটে যাবো আরো কিছুদিন নীল বাসনায় স্বপ্নের দোল খাবো সাদা হাঁস আর মেঘ-বালিকারা পথে ছুটে এসে দাঁড়াবেই ধান-বনগুলো বুক চিরে তার সোনা মনখানা বাড়াবেই নদী ছিঁড়ে দেবে চিতলের পেট দোয়েলের শিস অফুরান ভেট ঘন শালবন দেবে উপহার মউ-মন গাঁথা ফুল-মালা হার লাল রং মেখে গোলাপের ঠোঁট ঠোঁটে চুম্বন পরাবেই মৌমাছি…
-
একই অঙ্গে
সন্ধ্যাপ্রদীপ দেখতাম তুলসী পাতার ঘ্রাণে হেঁটে আসতো নিভু নিভু মনমরা মন, আগুনরাঙা সময়ের কাছে পরাজিত নই; অধরে নধরে হাসির কাছে সভ্যতা ম্লান, জলযৌবনে গানের সিম্ফনি শুনে; খেয়াঘাটের কালসিটে দাগগুলো জাগত, পাপড়ি খুলে ফেলত কামনার পাতা, মাঝির বৈঠা শক্তপোক্ত হয়ে যেত নিমিষেই, নদী আর রাত পার হয় একইসাথে একই অঙ্গে ॥
-
উঠতিরাও অনুরূপ
পোড়া লোহা লাল থাকতে পিটিয়ে নিজের মতো করে গড়তে হয়। সামান্য হেলায় কর্কশ গলায় বলে ওঠে ‘যেই-সেই’। এটাকে কব্জায় আনা আর গিরিশৃঙ্গে ওঠা সমপর্যায়ের। উঠতিরাও অনুরূপ, বুঝিয়েসুজিয়ে অনুকূলে রাখতে পারলে দেখানো দিকেই হাঁটে, যথাযত্নে মেনে চলে আদেশ-নিষেধ। তা না হলে পা বাড়ায় উল্টো পথে, বন্ধুরের দিকে, টান খায় নিষিদ্ধ চুম্বকে, কিলিয়ে কাঁঠাল পাকায় দুপুরে; পঙ্গপাল…
-
বিভ্রম
তোমার বাড়ি গিয়েছিলাম আজ। দরজায় দেখি বিশাল তালা। অদ্ভুত লাগল। তালা নতুন কেন? তোমরা বাড়ি ছেড়েছ আজ নয় মাস। তাহলে? কেউ তো ও বাড়িতে যায় না। তবে? কে আসে? কে যায়? তালা খোলে? ভেতরে ঢোকে? তুমি কি আসো? চুপি-চুপি? আকাশটা আজ আবার মেঘলা। তোমার যাওয়ার দিনের মতো। তুমি মেঘমাখা আকাশমুখে বলেছিলে, ‘যাচ্ছি।’ আমি বললাম, ‘যাচ্ছি…
-
ম্যারিনার-প্রতীক্ষায়
আমাদের প্রিয়জন সীমানা ছাড়িয়ে ওপারে পাখি হয়ে উড়ে যায় আমরা জনপদে নদী, ডোবা, জল শুকিয়ে দিই দুই হাতে, ওরা যেন আর না ফেরে পরিযায়ী প্রাণ পুরাণে এই দেশ; ব-দ্বীপ জলের আকর ছিল নদীময় ভালোবাসা শ্যামল প্রহর জলই তো আদি সত্য তৃষ্ণার জল, স্নানের শুশ্রূষা সবশেষ পাখি এক অ্যালব্যাট্রস খুনের রক্তে শুকিয়ে কাঠ জলদ কণ্ঠস্বর জনপদে…
-
স্থিরতার আয়ু
বহুদিন আগে কোনো পড়ন্ত বিকেলে দেখেছি যাকে – শান্ত সবুজের পাশে – সে তো নদীর পরিমিত উচ্ছ্বাসে এসে, কয়েকটি কথা বলে – চলে গিয়েছিল দূরে আরো – দূরে – সরু পথ ধরে – তার ছোট ঘরটিতে, সেখানে সে বহুদিন ধরে ছিল শান্তিতে; আসলেই কি নিবিড় নির্ঝঞ্ঝাট ছিল তার দিনগুলো?…
-
গড়াই
গড়াই নাকি গোরাই আমার মন পোড়ায় আমার গাঁয়ের নদী কেমন আমায় শুধাও যদি, সে নদী বর্ষায় চঞ্চল যেন ভরা নদী আনন্দে উচ্ছল। সে নদী গ্রীষ্মে শান্ত শীতল দিনমান বয়ে যায় ছলছয়। সবুজে শ্যামলে ধানক্ষেত, খামার যত দুই তীর গ্রাম তার ছবির মতো। এ যে আজন্ম আপন অতি আমার প্রাণের গড়াই নদী।