কবিতা

  • সুতীব্র আলোর অর্থ

    সুতীব্র আলোর অর্থ অন্ধকারে একা আলো যদি বিপরীত হয় সৌন্দর্য শরীর থেকে দূরে সরে যায় তুমি তো নিজেই আলো আলোকের ঝর্ণাধারায় তোমার কৌশল যতই প্রসাদগুণে ইন্দ্রজাল হয়ে নিজেকে বিকাশ করে ময়ূখে লুকাও সুতীব্র আলোর মাঝে অন্ধকারে একা তুমি আলো তুমি আলো তুমি আলো বিপরীত

  • শী‌তের অর‌ণ্যে ভুয়া তদন্তকারী

    শী‌তের অর‌ণ্যে ভুয়া তদন্তকারী প্রতিপক্ষ হ‌য়ে উন্মা‌দের মতো দৌড়া‌তে থা‌কে! যার পিছু নি‌য়ে‌ছে সে সা‌বেক যোদ্ধা? না বু‌দ্ধিজীবী? বহু‌দিন ঘ‌রের ম‌ধ্যে আবদ্ধ থাক‌তে থাক‌তে এক ধর‌নের অ‌স্থিরতা ও যন্ত্রণা  ম‌স্তিষ্ক নি‌ষ্ক্রিয় ক‌রে দেয় এ সময় ক‌মিউ‌নিস্ট, সোশ‌্যা‌লিস্টরা কে কোথায় কী কর‌ছে কে জা‌নে? তা‌দের‌ কী নির্দিষ্ট কো‌নো কাজ আছে? প‌রি‌স্থি‌তি মানুষ‌কে বদ‌লে দেয় না বদ‌লে…

  • মৃত্তিকার গান

    প্রতিদিন ভোর আসে, আর আমি  ভোরের আগুনে ফসলের মাঠ হই  রোদে মাখা কলাবতী  আমার শরীরে ধান্যশস্য ফলে, সরিষা কলাই মাঠে মাঠে চড়–ইয়ের ঝাঁক  ফড়িংয়ের ঠোঁটে রাখে প্রেমের প্রসাদ আমার বুকের ধানে মায়াবী শালিক  নীরবে ঝুলিয়ে রাখে পায়ের রঙিন  নিঃসঙ্গ আকাশ থেকে জলের মাধুরী  আমার হৃদয়ে খোলে বীজের গীতালি।  দুপুরের রুপা-রোদে আমি পালঙ্কে শয়ান করি লাঙলের…

  • মানুষের কলকব্জাগুলো নড়ছে 

    এয়ার ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি রাত জিরো আওয়ার নির্দেশ করছে মারিজুয়ানার গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আছে অদূরে তরল গরল হয়ে নামছে যেন লাভা গলে পড়ছে জ্বালামুখ থেকে মানুষের কলকব্জাগুলো নড়ছে  অবিকল যন্ত্র কিংবা যন্ত্রমানুষের মতো যেন আগুনে গলিয়ে নিয়ে  তৈরি হয়েছে সার সার মানুষকাঠামো  ঠান্ডায় জবুথবু, স্থির  অথচ ভেতরে হুলস্থূল, অস্থির!

  • হেমন্তের ধানগন্ধী স্মৃতি

    পথে পথে শুকনো পাতার ঘুমভাঙা ঘুম বাতাস যেন স্মৃতির পালকবাড়ি – ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সবুজ কোটর। ভোরের শিশির এক কবির নীরব চিঠি ধানের ছায়ায় শীতের প্রথম স্পর্শ জাগে, বাঁশবনে পাখির ডাকে মেঘের নীরবতা ভাঙে, সন্ধ্যার কুয়াশা হয়ে যায় বিরহী বংশীধ্বনি। পুকুরের জলে অস্থির নক্ষত্রেরা টুপটাপ ঝরে – একটি অসমাপ্ত গান হারিয়ে যায় কালের তলে, হেমন্ত…

  • নদীপথের বর্ণনা

    নথখোলা নদীর ওপার থেকে মৃত মানুষের গন্ধ ভেসে                                                    আসে খুব চেনা চেনা মনে হয় কবে প্রবল প্রতাপে মারা গেছে বনেদি বৃক্ষের তলে তারপর ভেসে ভেসে জোয়ারে কাঁদায় বৃষ্টির কারসাজি চারদিকে তবু নাক বুঁজে আসে আমরা উবু হয়ে বসে নৌকা করে চলি মাঝি গান ভুলে শব্দের গর্জন শোনে ইথারে সভ্যতার নুন ঘামের গন্ধ শুনি রাতে…

  • শ্যাম ও কুল

    তোমার মিনতিপত্র যথাভাবে লুপ্ত করে পড়ে আছি প্রেতের পাড়ায় আগে ছিল পথ, অন্যত্র গমনে যেতে, মনজিল : অচিন্ত্যনগর প্রকৃত নিদ্রাবোধে আমাদের সব ভালো লাগে বিপরীতে সবকিছু প্রেতের প্রমাণ গূঢ় সত্য-বোধে কী যে ভালো হতো ধীরে প্রকাশিত কালো রেখাবলি শ্যাম গেছে, কাল তোমার কুলও বুঝি যায়

  • ঘোর

    লাটিম ঘূর্ণনে ঘুরছি ভবরঙ্গ তামাশার মঞ্চে। কেউ কেউ দেখাচ্ছে ম্যাজিক,  কেউ কেউ ধুরন্ধর অভিনয়।  কী আজগুবি সব কারিশমা!  দেখে দেখে উল্টে যায় বোধ,  তালগোল পাকিয়ে শুধুই প্যাঁচ লাগে  ভুলে যাই চৈতন্য, আদি পরিচয়।  অস্থির সময় যেন টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার গুহায়।  যাচ্ছি আর হারিয়ে ফেলছি খেই, খুঁজে দেখি বুকের ভেতর  বাস্তবিক হৃদয় বলে কিছু নেই। …

  • স্বৈরাচারী

    একটা বেজে অনন্তকাল দীর্ঘস্থায়ী রাতে সহস্র সাপ ফণা তোলে তোমার ইশারাতে পাথর চোখে জমে শিশির পাতার চোখে ঘুম বজ্রপাতে জীর্ণ পাঁজর পৃথিবী নিঃঝুম থমকে থাকে সময়গতি ঘুমের সঙ্গে আড়ি কেউ তো নয় তোমার মতো দারুণ স্বৈরাচারী।

  • কুহক সমাচার

    চোখ রাখো গূঢ় সংকেতের দিকে – ভূ-রাজনীতির মতো পাঠ করতে থাকো এই ইঙ্গিত, দুষ্পাঠ্য সময়ের ইশারা – ওই দূরে লাল-নীল যত আলোর গুঞ্জরণ, লিখে রাখো – লিখে রাখো যাবতীয় কুহক সমাচার – ম্যান্ডোলিন বাজাচ্ছে কেউ – তার মাথায় নেই রাজমুকুট, নেই দোলনচাঁপার কলি – শুধু আকাশে আকাশে রং, ফেনার প্রবাহের মতো নেমে আসছে সমুচ্চ সুরের…

  • অপরপ্রান্তে 

    এই পৃথিবীর অপর প্রান্তে তুমি, হয়তো সেখানে রোদ্দুর করে খেলা, রাত জেগে আঁকি আকাশের ক্যানভাসে  তোমার চোখের তপ্ত সাগরবেলা! কন্যা তোমার কী নাম দিয়েছি জানো? জানবে না তুমি, জানবে না কোনোদিন!  তোমার রয়েছে ছুটে চলবার তাড়া, একলা আমার শুধু হৃদয়ের ঋণ। তোমার শহরে আকাশ ভাসছে সুখে, বৃষ্টি নামছে হয়তোবা ঝিরিঝিরি …  আমার এখানে কেবলই অন্ধকার, …

  • মধ্যবিত্তনামা

    তোমাকে লিখবো লিখবো করে কত দিন কেটে যায় আমার! সকাল দুপুর বিকেল গড়িয়ে রাতের আঁধার সবকিছু কেমন গ্রাস করে নেয় মোটা ভাত মোটা কাপড়ের অধিকারটুকুও। বেঁচে থাকার জন্য এই যা – একমাত্র ‘মধ্যবিত্ত’ তকমাটা ছাড়া আর কিছুই যে থাকে না! তাই তো আগ-পিছ ভেবেচিন্তে তোমাকে আর লেখা হয় না! জানো তো – মধ্যবিত্তের জমি-জিরাত ঘরদোর…