কবিতা
-
শক্তি
যুদ্ধ শেষ হলে চলে যায় শক্তি যোগাযোগহীন রাস্তা, উজাড় বেসাতি ক্ষতবিক্ষত শিশু। রক্তাক্ত ইতিহাস অস্ত্রের ভেতর দাগ কাটে অস্ত্র শামুক অস্ত্র পামুক শক্তি আবহমান যুদ্ধ সমকালীন যুদ্ধে জেতা ক্ষণস্থায়ী, হারা দীর্ঘকাল তবু মানুষ যুদ্ধ করেছে। অনন্ত করেছে যুদ্ধ টেকেনি শক্তি টিকেছে – আমাদের শক্তি চট্টোপাধ্যায় রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে যুদ্ধ না করে হেমন্তের অরণ্যে পোস্টম্যান হয়েছেন।
-
রাত্রিভ্রমণের পর
ভোর হলো, এই উন্মার্গগামী পথের কিনারে – সম্মুখে বিস্তৃত পটভূমি নিয়ে ছড়িয়ে আছে আরক্ত সূর্যসম্ভাষণ – হাওয়ায় দুলছে একগুচ্ছ মান্দারের ফুল – আরো কিছু সমুদ্র-পলাশ এইমাত্র চুষে নিল রাত্রিভ্রমণের সমস্ত ক্লান্তি – এ কাদের দেশ – কেবলই ফুল আর পাখিদের মেলা, সর্বত্র শূন্যতা ও সমুদ্রগর্জন – স্তনবতী রমণীর কাঁখে রুপোর গাগরি – আসমুদ্র তার পবিত্র…
-
পুব-পশ্চিম
আমার উঠোন ভর্তি মুঠো মুঠো সোনা খুঁটে খুঁটে খায় সুখের পায়রা! পাখিদের আনাগোনা একে অপরের পাশাপাশি – গা ঘেঁষাঘেঁষি! খোশগল্প, আড্ডা ও আনন্দে মত্ত – সুখের পায়রা শুকপাখি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথি। ২ আমার উঠোন ভর্তি ময়লা নেই দূর্বাদল, গুল্মলতাপাতা জাপটানো মায়া আবরণ ওঠে না রোদ, ডুবেছে যে সূর্য! আহা! ওই চান্দের সাথে পূর্ণিমার আলাপন – এখন…
-
পেটমোটা বাড়ি
পেটমোটা বাড়িটার দোষ ছিল না কোন তবু সবসময় মনে হতো মায়েরা আলাদা হয়ে কোথাও চলে গেলে পারতেন … এইরকম একটা মনে হওয়া নিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে প্রেমিকদের সাথে বাবারা মিলে যেতে থাকেন। দশক দশক পরের পুরুষও কী প্রাচীন অর্বাচীন ওই আদিম পুরুষেরই মতো – ভাবতে ভাবতে প্রেমিক ছাড়তে ছাড়তে আমরা বড় হতে থাকি … মায়েরা…
-
আজকাল অকস্মাৎ
আজকাল অকস্মাৎ ছুটে যেতে ইচ্ছে করে ওই মাঠটায় চারপাশে ঘেরা শক্ত দেয়াল ছাই রঙের; এত সুন্দর তোরণ কোনো প্রবেশদ্বারে দেখা যায় না। গেটের দুপাশে বয়োবৃদ্ধ বৃক্ষ দুজন বিশ^স্ত দারোয়ানের মতো পাহারা দিয়ে যাচ্ছে যেন কেউ উঠে দাঁড়িয়ে আবার কষ্টের কাছে না ছোটে যা জুটেছে সেখানে, সে-জীবনে কিছুই তো প্রশান্ত করেনি হৃদয় ফিরে এসেছে তাই সে…
-
কবির প্রতি
একদিন চলে যাবে তুমি, এ হৃদয় হবে মরুভূমি, ভেবে মনে জাগে বড় ভয়! সব স্মৃতি পিছে পড়ে রবে, সব লেখা পুরাতন হবে, ভালোবাসা হবে না তো ক্ষয়! সেই দিন কেঁদে হবো সারা, বই হাতে হবো দিশেহারা, লেখা ছুঁয়ে খুঁজে পাব আলো! সেই দিন বৃথা যাবে বেলা, শেষ হবে ছন্দের খেলা, আকাশের…
-
তাকে
জানতে কি, কতদিন ভেবেছি আকুল হ’য়ে তুমি না থাকলে কি করে থাকব। আজ তুমি নেই কত কাল। তবু তো থেকেই গেছি। রোজ ভোরে উঠি, কাজ নেই, সারাদিন ছুটি, খাওয়া দাওয়া, এটা ওটা দেখি, শুনি, দিন শেষ হলে শুতে যাওয়া। আবার সকালে ওঠা। এ…
-
বিহানবেলায়
ধানখেতের ধারে কাঁটাতার। টানা কাঁটাতারের দুই দিকে এই বিহানবেলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পরস্পরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দুইজন মানুষ। কেউই বলছে না কোনো কথা। ওরা প্রতিবেশী। মাঝে-মাঝে এইরকম হয়। মাঝে-মাঝে কাঁটাতারে আটকে থাকে বহতা সময়। কেউই বলে না কোনো কথা। মানুষ বলে না কথা, সমুদ্র ও নদীও বলে না। পাহাড় তো জন্মাবধি নির্বাক, কখনও সে কোনো ব্যাপারে…
-
সূর্যাস্তের রক্তরাগ
কী করে বলি ব্যর্থ জীবন জন্মেই পেয়েছি মাতার স্নিগ্ধ স্তন্য দু’চোখে দেখেছি শ্যাম সমারোহ চারিদিকে জনারণ্য। গ্রীষ্মে পেয়েছি সুশীতল ছায়া শ্রাবণে পেয়েছি বৃষ্টি যৌবনে দেখেছি প্রেয়সীর মুখ গীতি-সুধাময় দৃষ্টি। আজকে যখন রক্ত ভাটায় নিঃস্ব তখনো দেখি, কী গভীর প্রেমে সজ্জিত এই বিশ্ব। জোয়ারের শেষে তাই তোমার আমার সন্ধি বয়েস খাঁচায় আমরা হবো না বন্দি। সৃষ্টির…
-
যেতে যেতে : দিন যায় রাত্রি যায়
দিন চলে যায়, পায়ে পায়ে রাত্রি আসে স্বাভাবিকভাবে আসে, আসতে হয় আসে নিজস্ব নিয়মে আসে যখন যৌবন ছিল রক্তে শোনা যেত বাঘিনীর ডাক চিতাবাঘ এ কোণে ও কোণে, জঙ্গলে, সাবুই ঘাসের ঝোপে লুকিয়ে থাকতো উত্তুঙ্গ জীবনে ঘাপটি মেরে থাকা মৃত্যুর মতন স্বপ্নের মতন বিশ্বাসের মতো তারা সব ভেসে যাচ্ছে তারা আর দেহ নয়, ছায়া একটা…
-
কলগার্ল
কলগার্ল বুদ্ধকে দিয়েছে তার আজকের দিনের উপার্জন। কারুণিক সঙ্গে-সঙ্গে তাকে দেখালেন সমস্ত ভুবন জুড়ে ব্যাপ্ত এক অনন্তনাগের ফণায় ফণায় জ্যোৎস্না সমবিতরিত হয়ে আছে। অথচ দু-গজ দূরে ওঁৎ পেতে রয়েছে বৈমাত্রেয় ভাই-টাই – যাকে বলে আত্মীয়স্বজন – তাদের নগদ পাওনা লুফে নেবে ব’লে; অনন্তনাগের তুলনায় এরা ছোটখাটো সাপ, এদের ফণায় অন্ধকার টায়টায় হয়েছে বণ্টন। দু-চারজন তবু…
-
বালক, তুমি একদিন ॥ তৃতীয় পাঠ
বালক, তুমি একদিন আমাদের কবি হবে, উড়ে যাবে কালের ফুৎকারে – আমি সেই শিরোনাম ছেপে দিচ্ছি আজকের মেঘাবৃত সংবাদপত্রে। দূরপ্রান্ত বালক, তোমাকে স্বাগত এবং শোকের ভেতরে টানটান আমি তোমার ওষ্ঠের ভেতরে উপস্থিত, তোমার অভিষেকে আমি উপস্থিত। এই ঝকঝকে দুরবিন, ওই প্রজ্বলিত নীলাঞ্চল, এই চোখ, ওই নক্ষত্র, এই বিকাশমান দিন, ওই অস্তমান বিস্তার, এ সকলই একদা…