কবিতা

  • সম্পদ

    জিতু মণ্ডল আমার বাবার দাদা বাবা জানতেন না ঠিক কোন জায়গায় তার দাদার কবর মনিরউদ্দিন মুন্সী আমার দাদা আমিও জানি না, ঠিক কোথায় দাদার কবর! আমার নাতি-নাতনিও একসময় জানবে না ঠিক কোথায় আমার কবর ওগো অকথ্য সম্পদ তোমার সাথে এই সম্পর্ক কতদিনের? কাঁহাতক যায়? তোমাকে ধ্যানজ্ঞান করে কী লাভ হলো আজ যদি খুইয়েছি তোমার জন্য…

  • অনিবেদিত প্রেম

    দাও তোমার অগ্রন্থিত সমস্ত কবিতা – জোনাকির ম্লান আলোয় পড়ে ফেলি আমাকে লেখা তোমার যাবতীয় বসন্তবাসনা – আমাকে শোনাও তোমার অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র – যার প্রতিটি পঙ্ক্তি তোমারই হৃদয়ের যথার্থ অনুবাদ – প্রতিটি উপমান একেকটি বাঁশপাতার চেয়েও দামি – ঘাসের ডগায় চিকচিক করা একবিন্দু শিশিরের চেয়েও ভারী, প্রকাণ্ড – মনে পড়ে হ্রস্ব দিন, ভাবতীর্থের দিঘি –…

  • উত্তাপ বাড়ে

    তুমি বাউল হলে ফাঁকা থাকে চৌকাঠ, সুখেনের ঘর বড় একা একা লাগে। সবাই পর পর ভাবে। উৎসুক মুখ মলিন হলে – হেমন্তের হাওয়ায় আরো উত্তাপ বাড়ে মনের ভেতর কেমন ধুকপুক করে                  তুমি বাউল হলে সন্ধানে নামে কেউ কোথায় একতারা, বাউলানির ধ্যান যা কিছু দেখি নতুন লাগে                       আরো নতুন লাগে অচেনা রাত মাঠঘাট, হাটবাজার,…

  • রাত্রির সাদা ফুল প্রেম

    রাত্রির সাদা ফুল প্রেম – শিথানে সুঘ্রাণ – বেভুল বাতাসে দোল খায়। পরান উথলায় – নয়া পানির মাছের মতো উজানি হৃদয়, এখনো সময় কাটে রাজপথে – আওয়াজে। অনাহারি মুখ রাতের রুগ্ণ চাঁদ, তিলে তিলে ক্ষয়ে যায় মৃত্যুর কাছে এসে। তবু ফিরে থাকায় ক্ষীণ নক্ষত্রের মতো। বুকের তলায় অসুখের মতো সুখ, চাতক হৃদয় স্বপ্ন বোনে –…

  • আমাদের টেলিভিশন

    তুমি চলে যাওয়ার পর আমাদের দীর্ঘদিনের টেলিভিশনটা নষ্ট হয়ে গেল। ওটা আর কোনোদিনই চালু হবে না। কোনোদিন পর্দা হবে না সবুজ-সুনীল। এখন চোখে চোখে নিদ্রাহীন নুহের প্লাবন। অন্য চোখে উল্লাস প্রবল ফাঁকা ছায়াহীন একটা ঘর কেবল মায়ার টানে কপিকল ঘুরে। আমার বাবা বললেন, দেখো এর চেয়ে ভালো একটা টেলিভিশন তোমাদের এনে দেব আমরা তখন একসাথে…

  • ছায়াহীন কবিতা

    গাছের পরিধি বেড়েছে অনেকদূর অথচ সময়োপযোগী সদিচ্ছার কাছে আমরা হেরে গেছি। সূর্যের আলো নিয়ে আমার অনেক ভাবনা, আলো সম্বন্ধীয় সেমিনার করার সক্ষমতা নিয়ে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াই। ইমেজভর্তি লোক গিজগিজ করছে, প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার একটা কলম শেষ করার দাবি রাখে। এমনই অনেক আত্তীগত দৃশ্যের কথা বলার আছে। বলার আছে অনেক রাত অব্দি ছাদে বসে আমি কীসব ভাবি।…

  • হরিণচোখ

    হরিণচোখে খেলা করে স্নিগ্ধ আলো দিগন্তের পানে রংধনু রং ওড়ে ও-পাড়ার ফর্সা মেয়েটির গালে হাসির টোল চিত্রল রেখা মনে করিয়ে দেয় বৃষ্টিভেজা দিনের খুনসুটি গাঙের এপারে জীবনবাবুর কুটিরে তালপাতার ছাউনি ফুল ফোটায় পূর্ণিমা চাঁদ বকুলের গন্ধে আকুল মন হরিণচোখে খেলা করে গাঙের জোয়ার বারোমাসি গানের শরীরে লেপ্টে দেই জীবনের নতুন রং …

  • জারজ

    রাত্রির ঝাঁকে ভরসাই নিয়তি আমার … সিথানের কালঘুম করে কিলবিল  ধারালো আঁধারে সারিনের ফণায় ঘোমটা দিয়েছে প্রসন্নতা। পা রেখে চলে গেছে পথ ভিটেছাড়া সমুদ্র লুকোচুরি খেলে ফুলে ফুলে রটে গেছে বিকৃত ছায়া দানবের হুল্লোড়ে বিদীর্ণ মাটি। প্রেতাত্মার পাললিক নষ্ট পরম্পরায়  সুবোধ সম্ভাবনা হয়েছে জারজ। অপাঙ্ক্তেয় বিদ্বেষে পৃথিবীর পথে নেমে আসে দুর্বৃত্ত বিধ্বস্ততা।

  • সমুদ্রচারী

    এভাবেই বদলে যায় গন্তব্য … নদী নিমজ্জন শেষ হলে, অভ্রান্ত খুঁজি দূর সমুদ্রযাত্রার দিন এতকাল জল শ্যাওলাতেই কেটেছে শৈশব অতঃপর প্রলোভন দুপুর, সবুজ জাজিমের স্বপ্ন মিথ্যে বলিনি, সম্ভাব্য যাত্রা শেষে অবলীলায় ডুবে যাব, সমুদ্র গহ্বরে অদূরে ভেসে ওঠে, সমুদ্রচারীর  গন্তব্য …

  • জীবনানন্দের শেষ গল্প

    বর্ষার গল্পটাও ছিঁড়ে গেছে অন্ধকারে স্মৃতির নির্জন ব্যাধি মৃত্যু ছুঁয়ে থাকে মনে পড়ে জীবনানন্দের শেষ গল্প কী বিষাদ গভীর বৃষ্টির আর্তনাদ নৈঃশব্দ্য পাঁজরে সর্বনাশের করুণ পবিত্র গল্পের হলুদ-আগুন ছায়া …। বুনোরাত্রি। দীর্ঘ তাড়া খুব ছেঁড়া-প্রত্নপথ ধ্বংসস্তূপের ভেতর হারানো খোয়ানো মানুষের নিঃস্বতার অনিঃশেষ যাত্রা, সময় ধারণ করে দাহভাষা। বিভ্রান্ত ভ্রমণ মানুষের। নিদ্রাহীন বেদনার তীব্র দাহ ভিজে…

  • সভা 

    কোটর থেকে বাড়াল মুখ টিয়া কাঠঠোকরা সরে গেল হাসি হাসি মুখ, ওরা কেউ শাস্ত্র জানে না। স্নানঘর থেকে সোনার ময়না তবু উঁকি দিলো বারান্দায়, তারও কিছু বলার আছে, ময়দানে ভিড় তাই জানাল ইশারায় – ভাষণ রাখবে মাঠে। মাঠভর্তি শ্রোতা, তারা কেউ পাখি নয়। দোলে পক্ষীকুল, রহস্যময় শূন্যের খাঁচা                                দ্বার খোলা

  • ক্ষুধা

    ক্ষুধা মেটানোর জন্য             কত রকমের অগ্নিকুণ্ডে পুড়ি! ক্ষুধা নিবারণের জন্য চব্বিশ প্রহর ছোটছুটি করি         চব্বিশ জায়গায় পা রাখি! স্থির থাকতে পারলাম না – স্থানান্তর হতে হতে             আশ্রয়চ্যুত হতে হতে স্থায়ী ঠিকানা বলে আমার কোনো ঠিকানা নেই! আমি কি আমাকে রপ্তানি করিনি?                     আমিও এখন পণ্য! ক্ষুধা মেটানোর জন্য      কত রকমের জার্সি…