March
-
প্রসঙ্গ নন্দনতত্ত্ব
নন্দন – পুত্রসন্তান। রঘুনন্দন – শ্রীরামচন্দ্র। চট্টগ্রাম শহরে রিয়াজুদ্দিন বাজারের পাশে অবস্থিত ছিল – নন্দনকানন। মেয়েদের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে ওই নামে। স্বর্গের-উদ্যান যার অধিপতি দেবরাজ ইন্দ্র : নন্দনকানন। নন্দনের সঙ্গে সুন্দরের একটা সংযুক্ততা আছে। আছে ভিন্ন অর্থও। সন্তানলাভ ভাবগত অর্থে আনন্দ-সংবাদ। এসব উচ্চমানের জায়গা ছেড়ে আমরা মানুষের জীবনের যাত্রাবিন্দুতে পৌঁছতে চাই। সেখানে নন্দন ছিল না।…
-
আলোকিত অন্ধকার
সন্ধেয় যখন জানতে পারে সাঈদুল, ভালো এক খবর, যাব কি যাব না ভাবনায় আরো একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে শেষমেশ পুরনো মাফলার দিয়ে মুখ-নাক ঢেকে বের হয়ে যায়। তখন আলিয়া পেছন থেকে ডাক দেয় – ‘বাবা এই সন্ধ্যার সময় কোথায় বের হলে? যা শীত পড়েছে, তোমার তো কোট-জ্যাকেটও নেই, আদ্যিকালের এক সোয়েটার, শীত কাটে না; কিছু লাগলে…
-
শতবর্ষের অভিমুখে ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ ও শিখা
‘বাংলার রেনেসাঁস’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এর ভূমিকায় অন্নদাশঙ্কর রায় উল্লেখ করেছেন : ‘এতকাল আমরা যেটাকে বাংলার রেনেসাঁস বলে ঠিক করেছি বা ভুল করেছি, সেটা ছিল অবিভক্ত বাংলার ব্যাপার। পার্টিশনের পর পূর্ব বাংলা – এখন তো বাংলাদেশ – নতুন করে জেগে ওঠে। সেখানে দেখা দেয় দ্বিতীয় এক রেনেসাঁস। প্রথম রেনেসাঁসে নায়কদের মধ্যে ইউরোপীয় ছিলেন, খ্রিষ্টান…
-
জীবনানন্দ দাশের দীর্ঘ কবিতা
১৯৩৮-এ অনেকগুলো খাতায় কবিতা লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ; তখন বসবাস করছিলেন বরিশালে। এসব খাতার বেশ কয়েকটি কলকাতায় ভারতের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে ‘রেয়ার কালেকশন’ সেকশনে সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত জীবনানন্দ দাশের খাতাগুলোয় নম্বর দেওয়া আছে ১ থেকে ৪৭। ৩৫ নম্বরে ক এবং খ দুটি। এর মধ্যে ১৮-সংখ্যক খাতায় মে-জুন মাসে কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন জীবনানন্দ। খাতাটির প্রথম পাতায় ইংরেজিতে…
-
মানচিত্রের বি-উপনিবেশিকায়ন
ভাষ্য ও ভূমিকা : সুরেশ রঞ্জন বসাক ভাষ্য সাহিত্যে মানচিত্র বা দেশকে রূপকথা নয়, রূপক ও রূপকল্প হিসেবে ব্যবহার ব্যাপক না হলেও দুর্লক্ষ্য নয়। গার্সিয়া মার্কেস – বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার লিটল তাঁর ঔপনিবেশিক/ উত্তর-ঔপনিবেশিক/ নব্য-উপনিবেশবাদ-বিরোধী একটি পাঠে (‘Er endira in the Middle Ages : The Medievalness of Gabriel Garcia Marquez’১) দেখিয়েছেন কিভাবে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের অসাধারণ…
-
হৃদয়ে রহো
(রবীন্দ্রনাথের প্রতি আন্না তড়খড়) পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে চেনা গন্ধ, চুমুর আওয়াজ ভুলেও তোমার চোখ তাকাল না কেন?! একদিন, দুপুর-সময় নির্জনতা কোলে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুমে আমিও তোমার কোলে মাথা পেতে আছি পাত্র থেকে উপচে পড়া জলের মতোন সরল আনন্দ নিয়ে বলি : আমার দোপাট্টা যার মুঠোগত হবে সে-ই পাবে শর্তহীন চুমুঅধিকার যথেষ্ট আকাক্সক্ষা…
-
সমাচার
ললাটের কী বা দোষ লিখতে হবে ওইখানে সব! আশপাশে জায়গা অনেক যা ইচ্ছে, যেমন খুশি ঘাসের ওপর কিছুটা আলো ও কুয়াশামাখা আঁধার। কলমে নামুক শব্দমালা চিত্তদ্বারে চরণের চিহ্ন এঁকে যার – মাথা ভর্তি এই সে কপালে মাথা ভর্তি এই সে কপাল। সেই-ই তো ভালো, দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে আলো কপাল ঠুকে যে নেমেছে, ডাকো।
-
জেন-জি
বেলা অবেলা নেই, যেন অন্বেষণ ঘূর্ণমান সিঁড়িতে উঠছে নামছে, পাশের বাসার মেয়েটি, কী রূপকথা সে, কখনো দেখিনি, পূর্ব-পশ্চিমের মিউজিক আর গানে নিজেকে বারবার রচনা করে উপসংহারহীন। আমার ঘরের নীরব শূন্যতায় উড়ে আসে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’র ডানা। দিগন্তে কোন অচেনা উড়ে গেল? পর্দা তুলে ঢুকে পড়ে : ‘ইউ ও’ন্ট ব্রেক মাই সোল’। কে তুমি রাখবে…
-
মাঝে মাঝে
মাঝে মাঝে কোনো একলা বিকেলে করুণ মূর্ছনার মতো বাজতে থাকি নিজের ভেতরে রোদ নেমে যায় দৃশ্যাতীত পথের ওপারে; তখন কুয়াশা নামে সন্ধ্যায় – আর চারপাশে শুকনো ধুলো ওড়ে, ধূসর বেদনার মতো শুকনো ধুলো ওড়ে; আমার দুঃখভরা গান কুয়াশায় ঢাকা জ্যোৎস্নার মতো তাকে ফেলে রেখেছি কুঁকড়ে-থাকা শীতের ভেতরে তার ম্রিয়মাণ অস্পষ্ট অন্তরাল আমাকে লুকিয়ে রাখে…
-
হিমকর
হিমকর! এই হিমেল দিনেও খোলা প্রান্তরে এসে উপস্থিত হয়েছি, তোমার রূপমাধুর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত হবো আমিও! আমারও জমেছে মেদ ও ক্লেদ! আলোকশূন্যতা নিয়ে বড় অসহায় হয়ে আছি! অঙ্কুরোদ্গমও হচ্ছে না চারাগাছও বাঁচছে না! আমাদের গগনতলে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে পারো, তোমার দীপন ও উজ্জ্বলনে! আমরা তো দীর্ঘস্থায়ী রোগে জর্জরিত! আমরা তো মৃত্যুজয়ী হতে…
-
প্রিয় ভাষাপত্র
নিঃস্ব ভাষাপত্র ওড়ে রাত্রির পাঁজরে নিদ্রিত বসন্তের মুখর পাখি দেখার উপমা নেই, পৃষ্ঠাজুড়ে অসমাপ্ত দীর্ঘবৃত্ত অন্ধ দীর্ঘশ্বাস ভুল ছন্দে রাত্রির বিন্যাস বিমুখ তীব্র হাওয়ার নিচে বিভ্রম…
-
হৃদয় শুকিয়ে গেলে
হৃদয় শুকিয়ে গেলে অরণ্যও ন্যাড়া হয়ে যায়; অক্ষয় মালবেরী থেকে ইমনকল্যাণ রাতের কম্বলের ওম বুকের উঠোনের আলপনা বটের শিকড়ে বাঁধা নাও – মুহূর্তেই ভেসে যায় সুনামির জলে। হেমন্তের ডায়েরি ঠোঁটে নিয়ে ইষ্টিকুটুম যখন কার্নিসে উড়ে এলো তখনো কাঁদছিল পিপাসার্ত প্রান্তিক পিয়াল। আর, আমাদের দিনরাত্রি ব্ল্যাকহোলের ভেতর নতুন তারার জন্ম দেখার আশায় শেষমেশ দিবাস্বপ্নে মুহ্যমান –…