2021

  • জানা নেই কিছু!

    জানি না জীবন হৃদয়ে কেন যে ভ্রান্তিরে দিলো ঠাঁই দিলো প্রশ্রয় ভুল পাত্রের মরণমদিরা গিলে নাকি তাই ছিল জীবনডানায় ঝড়তোলা প্রাণপাখি! কে জানে কী ছিল ছিল-বা কোথায় শুদ্ধ বা ভুলে-ভরা পায়েচলা পথে একালের যান ঠেলে               এগুনো-পেছানো খেলা; প্রগাঢ় রোদের কাঠফাটা দিনে অসহ গরমে ঘেমে কালকে ভুলিনি – মানবীয় ভুলে ঘটেনি ব্যত্যয় কোনো বেতালা বাতাসে…

  • ক্যাসান্দ্রা

    কবি যেন  অভিশপ্ত   কন্যা ক্যাসান্দ্রা বলে চলে  সূর্যজাত সত্য  যতদিন শ্বাস আমোদগেড়ে নগরবাসী  সে সবে  রাখে না বিশ্বাস অথচ  কত অনুক্ত কালবেলা বলেনি কী ডেলফি  সেই সব  অমোঘ সত্য বার্তা; সময় গড়িয়ে যায়  মুক্তা সময় হারিয়ে যায় নষ্টগ্রহ মানুষ  তবু তৃপ্তিহীন রয় এক যুদ্ধের পরে  থাকে আরেক  যুদ্ধের অপেক্ষায় আর প্রাচীন কবির পাণ্ডুলিপি  শুধু ধূসর…

  • সামান্য আলোর রেখা

    সামান্য আলোর রেখা, এই নিয়ে আশ্চর্য এ-পথে পেরিয়েছি অফুরন্ত নদীজল তীব্র জোছনায় আমাকে যে ডেকে নিল মধ্যরাতে ধীবরের রথে অস্পষ্ট, দেখি না তাকে; পলাতক, মৃদু কুয়াশায় যে গান শোনায় রাত্রি, তার সুরে স্রোত অবিরল সেখানে বিহঙ্গ ডাকে, কারা ডাকে, পথিক উদাস ঠিকানা ঘুমন্ত গ্রাম, গাঙে তবু উজানের জল আমিও মাটির পুত্র, মাছ-ভাতে করি বসবাস যে…

  • আমি মাতাহারি

    আমার চোখ বাঁধা থাকবে না ফায়ারিং স্কোয়াডের অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে উঠলো তার কণ্ঠ নিজের সাথে স্বগতোক্তি – আমি মাতাহারি আমি নিরপরাধ জানি অভিযোগগুলো সাজানো আইনগুলো বানানো হিংসারা হিংস্র গুপ্তচর আর যৌনতার অভিযোগ প্রহসন   ভাবি, কত নিরপরাধী হয়েছে ডাইনি আর পুড়িয়ে মেরেছে বীরপুরুষেরা কারাকক্ষে স্মৃতি ছিল একমাত্র সহায় কৈশোরের রুটির গন্ধ নাকে এসে লাগলে…

  • যোগাযোগ

    আলোছায়ার খেলা তোমার মুখে যতই কেন থাকি আলোর খোঁজে মুখ ঢাকলো ছায়াই অসংকোচে ভাগ্য হাসে বিদ্রƒপে কৌতুকে ওষ্ঠাধরে অনেক মধু জমা দাওনি পেতে কখনো তার স্বাদ একটা ছোট বিচ্যুতিকে ক্ষমা করলে জীবন হতো না বরবাদ চাঁপার সুবাস ছিল তোমার দেহে দূরে থেকেই উপভোগের স্নান চেয়েছিলাম, লুকোলে সন্দেহে সহ্য করি তীব্র অপমান অস্নাত সেই অবস্থাতেই বাঁচি…

  • একাত্তরের হরিদাসী

    চার কুড়ি বছরের কৃষাণী হরিদাসী মলিন ধূসর ছনঘরে একা পরবাসী। হাসতে ভুলে গেছে, প্রহর কাটে নয়নজলে  কোথায় সংসার, কেউ নেই আজ ওর দলে? একে একে বিয়োগ হয় জঠরের জীবন একাত্তরে যুদ্ধে হারায় একমাত্র পুত্রধন। মা-মেয়ের সময় কাটে ভয়ে আর ভয়ে, দ্বাদশী তুলসীর সতীত্ব শেষ পরাজয়ে।  দোসর পাকিও ছাড়েনি তিরিশের মাকে, স্বাধীনতায় সব হারায় যুদ্ধের দুর্বিপাকে।…

  • শুভকামনা

    গভীর রাতের দূরপাল্লার ট্রেনের সারি সারি যাত্রীবাহী সিটের মতোন শিয়রে বসে থাকে স্বপ্নেরা তাদের হাতে হাত রেখে ঈশ্বরের খোঁজে বেরোই লাল ধুলোর পথ ধরে সুঁচের ভেতর যেমন রঙিন সুতো গলে যায় আমার সত্তায় অনুপ্রবেশ করে তোমার অনুপস্থিতি তার পর থেকে আমার সমস্ত কর্মপদ্ধতি সেই সুতোর রঙে রঙিন বাগানে জড়ো হওয়া দেবদূতেরা ডানা দুটো খুলে রাখে…

  • নিভৃত মৃত্যু

    পুরোনো পাতার মতো নৈঃশব্দ্য পড়ছে ঝরে এই বসন্ত দুপুরে – তারপর অপরাহ্ণ এসে গেছে আকাশজুড়ে; জীবন-বিচ্ছিন্ন চমকিত শিলা গিয়েছে গড়িয়ে               বহুদূর অধঃপাতে, তাকে আর ফেরাবে কে? এইসব বিচ্ছিন্নতা, মুছে-যাওয়া নির্জন দিন       আনে শুধু বেদনাই আমার হৃদয়ে; অতল জলের সাঁতারে খাবি খেয়ে বাঁচে শুধু সাহসী নাবিক – অন্যদিকে আমি দেখি চমকিত জীবনের দ্যুতিময় বসন্তের…

  • প্রক্সি কবিতা

    যে-সব দিনকে সবাই দিন বলে গুনে গুনে যাচ্ছে, ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাচ্ছে, জন্মদিন পালন করছে, নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখলাম, এগুলো কোনো দিনই নয়। দেখাই তো যাচ্ছে, দিন এখানে মাসিক বেতনে চাকরিজীবী। অনেকটা নিভুনিভু কেরানির মতো এই দিন, আসছে ও চলে যাচ্ছে, ভালো করে না তাকালে চোখেই পড়ে না। অর্থাৎ সোনালি রোদের ডায়েরি-লেখা ছাত্রীটির কাছে এই দিন গৌরবহীন,…

  • স্বর্ণলগ্ন

    তিন স্বর্ণমাছি উড়ে উড়ে ঘোরে আনাগোনা সোনার আড়তে স্বর্ণপাতে খোঁজে ঘ্রাণ অর্ধেক ভোজন যদি হয়! চার ঝরছে আকাশ থেকে স্বর্ণবৃষ্টি স্বর্ণ-শীল পড়ছে গড়িয়ে শিশুরা কুড়ায় আর ভিজে ঝিল থেকে বিলে লাফিয়ে উঠছে স্বর্ণ-কই কিশোরেরা হইচই করে আর ধরে পাঁচ কৃষকের গোলাভরা স্বর্ণ মণ-দরে বিক্রি করে হাটে খুব দ্রুত বাড়ে স্বর্ণমাছ পুকুরেও সোনা ফলে হাঁকে ডাক…

  • সোনালি স্বপ্ন

    সবুজ আগুনের চারা মাঠে মাঠে, বাতাসে দোল খায়। মেঘের ডানা খসে পড়ে আগুন পাতায়, মাঠের বুকে সবুজের ঢেউ। বৃদ্ধদিনে সোনালি রং ঝরে পড়ে সবুজ দেহে। প্রাণোৎসবে মেতে ওঠে মাঠ। একদিন বাবার আঙুলে ঝরে পড়ে সোনালি আভা – স্বপ্নগুলো শুয়ে থাকে উঠোন জুড়ে, শুকায় রোদ্দুরে।

  • অভিমান

    অভিমানেরও নিজস্ব বারান্দা আছে … অনুভব ক্রুদ্ধ হলে, মাশরুমের মতো মেলে ধরি অবুঝ ডানা ঠিক তখন মানস উপবন বেয়ে একদল দুর্বৃত্ত ছুটিয়ে যায় – হোর্ডিংয়ে আঁকা নীল ঘোড়া তারপর শহরটা নিকটস্থ হলে ডায়েরি থেকে তুলে আনি, ঈশ্বরকে লেখা                যাবতীয় শব্দাবলি