August

  • নিষিদ্ধ হরিবালা

    নিষিদ্ধ হরিবালা

    নাগরিক পথ। পথ মানে বড় কোনো সড়ক নয়। আবার ঘুপচি গলিও নয়। মাঝে মাঝে মাছি-ভনভন-করা এঁদো খানাখন্দ। আসা-যাওয়ার অসচ্ছল এক ব্যবস্থা মাত্র। প্রচণ্ড কোলাহল নেই। মানুষের যাওয়া-আসা আছে। তবে সীমিতই বলা চলে। চঞ্চল পায়ে চলতি মানুষগুলি কেউ কাউকে চেনে বলে মনে হয় না। যেন অচেনা অন্যরকম মানুষ। বড় যানবাহন তেমন চলে না ওপথে। রিকশা-ইজিবাইক চলে…

  • রূপকথার গল্প

    রূপকথার গল্প

    আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মোজাম্মেল। বড় করে একটা শ্বাসও টানলেন। শরীরটা এখন পাখির পালকের মতো হালকা হয়ে আছে। হবে না? এতো টেনশনের পরে এতো বড় একটা সাফল্য! যা কি না মানুষের কল্পনারও অতীত, তেমন একটা কাণ্ড ঘটিয়ে একশতে একশ পাওয়ার যে সাফল্য, তার আনন্দ কি কম? নিন্দুক, সমালোচক, খুঁত খুঁজে বেড়ানো…

  • ছায়ার সমান্তরাল

    ছায়ার সমান্তরাল

    নীলপাড় মেরুন শাড়ির কুঁচির দোলাচল আর একটি মিষ্টি নারীকণ্ঠ – এই দুইয়ের আবেদন উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না বলে কুয়াশার মতো ঘোলাটে মাথাব্যথা নিয়েও সাজিদ বাঁদিকে ঘুরে তাকায়। সে-সময় সে নিজেকে মৃদু তিরস্কার করে, কারণ সাজিদ জানে এই কাজটি তার স্বভাববিরুদ্ধ হয়েছে। পথ চলতে ঘাড় ঘুরিয়ে যেসব পুরুষ বুভুক্ষু চোখে মেয়েদের রূপ দেখে, তাদের সে…

  • নির্বাচনী

    নির্বাচনী

    প্রস্তাব এলেও কামাল প্রথম প্রথম ভোটযুদ্ধে নামতে রাজি হয়নি। তখনো সে ভিন্ন মানসিকতার। রোজগারের উৎস বলতে তো একটাই মাত্র ছোট্ট দোকান। সেটার ওপর তাদের সংসার সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় খরিদ্দারকে পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ করে দিয়ে লাভ কী? যারা বিরুদ্ধে থাকবে, তারা নিশ্চয় ভোটের পরে তার দোকানে আসবে না। গ্রামীণ চক্ষুলজ্জার এ অশুভ বিভাজন-সংস্কৃতি আদিকাল থেকে…

  • ফেনার রাজ্য

    ফেনার রাজ্য

    হঠাৎ করেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। অল্প একটু আলো ছিল, বাল্বের আলো, আমার পেছনের কোনার দিকের, ফিউজড? উঠে দাঁড়াই। না, বাল্ব না, বিদ্যুৎ চলে গেছে। দেখি, সামনের সিঁড়ির ওপর আলো নেই। এই ঘরে আমি অন্ধকারেও সবকিছু দেখে নিতে পারি; আমার চেনা ঘর, আসবাবপত্র কোনটা কোথায় আমার জানা আছে। অন্ধ মানুষ চেনা জগতে হাতড়ে হাতড়ে হাঁটে…

  • বত্রিশের সিঁড়িটা সেই থেকে

    পাড় ভাঙা নদী পেরিয়ে তিনি উঠে এলেন। তিনি উঠে এলেন মেঠো সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে তামাটে বাঙালির চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে দাঁড়ালেন তিনি আকাশের চেয়েও উঁচু হয়ে। তারপর সব নদী রক্তাভ সমুদ্র হলো বত্রিশ নম্বরের শাদা বাড়িটা ভেতো বাঙালির নিঃশঙ্ক শয্যা হলো। কে ডাকে? কোন শকুনেরা ডাকে আগস্টের ভেজাঘুম ভোরে? তিনি ওম শয্যা ছেড়ে নেমে এলেন বত্রিশের…

  • পুঁজি

    মতিচ্ছন্ন ভারি না হলে, ভরা বর্ষায় নদীতে কে পুঁটি ধরতে যায়! ছোট সে খ্যাপলা, থাকে না মীন, ইলিশও জেনেছে মেছো, পারবে না তাকে ছুঁতে। তবু গন্ধ ভাসে জানা নেই হেঁশেলে শ্রীমতী কীভাবে হয়েছে মাতোয়রা! বাঁশি হাতে টোপ ফ্যালে ছোঁড়া আঁশ গন্ধ শুধুই সম্বল।

  • শ্লোকসন্তাপ

    এই অনুজ্জ্বল জীবনের অর্থ কী? বন্ধু; ঝড়ের রাতের বিপন্ন প্রদীপ আমি, এইটুকু আশা নিয়ে বাঁচি যে নিভে যাওয়ার আগে যদি একবার উজ্জ্বল হয়। একটা জীবন হাসি-কান্নায় কেটে গেল ভাবলাম মৃত্যুর পর অবসরে যাব কিন্তু আমি তো জানি না, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার জন্য না জানি কত দিন অপেক্ষা করতে হয়। কাল সবকিছু গ্রাস করবে জানি তবে…

  • নয়া বছরের চিঠি

    নয়া বছরের হাওয়া এসে লাগছে আমার এ-গতরে আমিও তো ভুলে যেতে চাচ্ছি ফেলে আসা সব গত রে কিন্তু পাচ্ছি কোনো পার কী কিছু সুখ ভাসছে যে মনে ভালোবাসামোড়া –                তাতে অবশ্য কার কী কিন্তু ছুটে যেতে চাই সঙ্গ কারো পাই বা না-পাই উতলা বৈশাখ বিজু সাংগ্রাই বিষু চাংক্রান বেচইন করে টানছে আমার প্রাণ তবে…

  • রক্তাক্ত দৃশ্যকাব্য

    ভোকাট্টা ঘু‌ড়ির সা‌থে শকুন উড়ে এসে ব‌সে শহ‌রের উপক‌ণ্ঠে। পৃ‌থিবীর ক্যানভাসজু‌ড়ে আজ ধূর্ত চোখ আর রক্তাক্ত দৃশ্যকাব্য। যারা মৌন হ‌য়ে ব‌সে আছে সু‌দি‌নের আশায় তাদের আশার ওপর চুই‌য়ে পড়ে শকু‌নের আহ্লাদ! অদ্ভুতভা‌বে পাশঘে‌ঁষে ব‌সে চিল ‌যেন ছোঁ মে‌রে নি‌য়ে যা‌বে জগৎসংসার ডো‌মেইন দূরাগত ভা‌লোবাসা উড়তে থা‌কে ঘরময়,‌ হো‌স্টিং এর নি‌চে স্তব্ধ হ‌য়ে আছে বিশ্বা‌সের চাকা!…

  • একটি জারুল গাছ

    নদী যেথায় অথই ধারায় বাহিত স্রোতস্বিনী ছিল ওখান থেকে একটু সামান্য দূরে অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা পথরেথা, সোনাঝরা গ্রাম ঝোপঝাড়, গাছপালা কাশবন শিউলি-বকুলের গন্ধ আর শান্ত শীতের সকাল পলাতক বালকের মতো দিগন্তে হারিয়ে গেছে। আর, এ-গাঁয়ের নক্ষত্রসোহাগী রাত অমরাবতীর গল্প শুনে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে চেয়েছিল … সেও, দ্যাখো, ওই দূর শহরের আইসিসিইউ’র কাচঘরে এথন বন্দিনী।…

  • গ্রীষ্মের সকালে

    গ্রীষ্মের সকালে হঠাৎ পলকে দেখা হয়ে গেল পড়েনি পা যদিও মাটিতে, ছিলে চাকার বাহনে দূরগন্তব্যের আহ্বানে, কেমন কপিশ কন্দরে আর যেন সকালের সারস্বত সম্মিলনে। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে পথ যায় পথের কিনারে; তাড়াতাড়ি ছিপ ফেলে বসে থাকা চলে মগড়ার উজান গাঙে। সোমেশ্বরী বসে আছে প্রতীক্ষার বাষ্পীয় শকটে নদীর ঠিকানা কোনো ডায়েরিতে লেখা নাই।