2022
-
বোধহয়
(মুনতাসীর মামুন, প্রিয়জনেষু) পাশাপাশি বাতাস। যদিও দুজন দুইটি চেয়ারে একই অফিসে। তার সময় হলো না ডানে-বামে ফিরে তাকাবার। সারাদিন নিজেকে নিমগ্ন রাখতেন তিনি হিসাব-নিকাশে। সদাগরী অফিসের হিসাব শাখায়। ভীষণ সুনাম ছিল তার সদাগরী অফিসের সকল শাখায় যেহেতু তিনি চাননি ফিরে ডানে, বামে কোনোদিন। আশা করি এখন আছেন ভালো। আমি ডানে বামে…
-
আমার কোনো সাহস নেই
পিস্তল চালাবো? সেই সাহস ছিলো না, মিছিলে স্লোগান দেবো? কণ্ঠে সুর নেই। জলেভাসা পানা কিংবা তার চেয়ে কিছু কম স্রোতে একা ভাসি, সাহস করি না; কোনো যৌনগন্ধী শব্দ ব্যবহারে আমি আনত লজ্জায় মরে যাই কেন যেন, লোকে খুব মন্দ ভাবে যদি, সেই ভয়ে রতিক্রিয়া, বীর্যধন কিংবা মৈথুনের মতো শব্দ উচ্চারণ করি না সরবে নিজের ভেতরে…
-
সাদৃশ্য
তখন একটা নৌযান পানি ছেড়ে মেঘে ভাসতে লাগলো মেঘগুলো যেন দেবদূতের খোলা হাত তাদের পাখাগুলো ঝুলে আছে রোদে যেমন কাপড় শুকায় সূর্য ছিল না তখন, যখন ফিরে এলো – মানুষগুলো দেখতে প্রথমে হলো পশু, তারপর প্রেতাত্মা। যখন বৃষ্টি কবির প্রেমে পড়লো কবি ভুলে গেল তার নাম, মনোভূমির সব নাম, সে সময় কোনো কিছুর নাম…
-
ঋতুও বদলে যায়
এ কেমন ঋতু দেখছি? শ্রাবণে ভিজে না দুঃখ-দেহ, দ্রোহের আগুন নেভে না জলে। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে না ভিজে অসুখ হতে পাই না পরিত্রাণ। মিথ্যার বেসাতিতে সবুজভূমিতে একে একে জমে গেছে পাপ! শ্রাবণ রাতেও বর্ষার প্রতীক্ষায় থাকি তুমি সুখনিদ্রায় থেকে থেকে – ভুলে যাও বারিধারার আনন্দ! আর আমি শুধু সময় গণনা করি; ভাবি তোমার মতো ঋতুও বদলে…
-
ঘুমিয়ে পড়ার আগে
ঘুমিয়ে পড়ার আগে মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে দরোজায় স্মৃতিসূত্রে প্রীতিসমাবেশ চলছে তখনো! থাকি বা না থাকি তাতে কার কী-বা আসে? গ্রীষ্মের উঠোনে শীতের কুয়াশা রেখে চলে যায় ভোরের বাতাস; নদীটা শুকিয়ে গেছে বালির সন্ত্রাসে! ত্রাসে কাঁপে শঙ্কিত হৃদয়! তবু আমি উদার আকাশে ডানা মেলে অবগাহনের সুখ খুঁজি! একদিন প্রিয়জন যে নামে ডেকেছে তার কাছে অন্য…
-
তোর সাথে সমুদ্রে যাব
তোর সাথে সমুদ্রে যাব তাই উঠোন নিয়েছে ছুটি কী যেন বলতে এসে থেমে গেলি, সূর্য ফিরেছে বাড়ি বালির সংসারে থেমে যাক চুলের অগ্নিকাঁটা পায়ের নিষ্পাপ ছাপে জমে থাক স্মৃতিকথা পেরুনো পথে উড়ে যাক একশটা প্রজাপতি ভুল হলে, ঠিকানা খুলে পড়ে নিক সাঁঝবাতি সেকথা শুনবে বলে সিগাল ধরেছে বাজি আঁচলবিহীন নিরালায় ভাসতে আমি রাজি আনমনে উঁকি…
-
তৃষ্ণার্ত চাতক
পথে নেমেই খুঁজে নিতে হয় পথ প্রত্যাশিত পথ অচেনাই রয়ে যায় তবু বিরামহীন চলায় পৌঁছে যাই ভুলভাল ঠিকানায় চোখের সামনে অবারিত প্রান্তর মিশে থাকে দিগন্তে দিগন্ত কি সীমারেখায় আঁকা যার দাগ বুকের গভীরে যা কিছু আড়াল তা গোপন থাকুক বাইরে তা বড় বেশি বেমানান সবটুকু শূন্যতা মেনে হাত রাখি বিষের পেয়ালায় অভিশাপ ও আশীর্বাদের মাঝখানে…
-
আলো নেই সূর্যের গর্ভগৃহে
পৃথিবীজুড়ে মন খারাপ নিমফুলের গন্ধের মতো ছড়িয়ে আছে আর নিরন্তর মৃত্যুর ছায়া মানুষকে অসীম শূন্যতায় ছুড়ে ফেলছে নিভু নিভু সন্ধ্যার প্রদীপ। আলো নেই সূর্যের গর্ভগৃহে গভীর সন্তর্পণে সমাজ সংসার ডুবে যাচ্ছে চিরকালীন অন্ধকারে। জীবনকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য উজ্জ্বল কোনো পায়রার ঝাঁক যারা বাড়ির উঠোনে রোদ বিছিয়ে দিত তাদেরকে দেখি না বহুকাল, ভিক্টোরিয়ার পরী…
-
কানাবিল ও লাঙল
যে জমিনে, চাষ করি আমি, তার মালিক এক কানাবিল। সে বিভিন্ন সময়, ভিন্ন রূপে আসেন, জমিন দর্শনে। কানাবিলের বুকে, অফুরন্ত বক ওড়ে, আর জলচর পাখালি। আমার ছেলে অঋব, ও আমি রূপা আমন বুনতে বুনতে দেখি যে, জমির মালিক প্রাতঃভ্রমণে এসেছে। অঋব হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে, বাবা এই নারীটা এমন হিংসুটে! জলের রেডিও বাজায় কেন? আমি…
-
পচন
আমাকে সেইসব মানুষের কাছে নিয়ে চল যারা কাঁধে কাঁধ হাতে হাত রাখতে ভুলে গেছে, আমি কেবল একটিবার তাদের শীতলতা পরখ করতে চাই। যে আগ্নেয়গিরি বহুদিন ধরে ঘুমিয়ে পারলে তার জমাট লাভা একটু এনো আমার জন্য, আমি ব্লাড ব্যাংকে জমে থাকা প্লাজমা কখনো দেখিনি। আমাকে তাদের চিনিয়ে দিও যারা রাস্তার দোহাই দিয়ে গাছের গোড়ায় বিষ ঢালে,…
-
দিলাম ঘামের ঘ্রাণ
তোমাকে দিলাম কয়েক বিন্দু ঘামের ঘ্রাণ আমার পূর্বপুরুষ মাটি খনন করে ফলিয়েছে সভ্যতা আমরা মাটি খনন করে পুঁতে রাখি গোলাপ। আমাদের পূর্বপুরুষের ঘামে টুকরো টুকরো ইতিহাস কোনোটি তিতুমীরের বাঁশের বিদ্রোহী কেল্লা কোনোটি তেভাগার কমরেড মণি সিংহ, অমল সেন। আমাদের পূর্বপুরুষের ঘাম থেকে সাম্যের পতাকা ওড়ে তাদের প্রশস্ত উঠোনে ছিল প্রাণময় পাতাবাহার। কারা গিয়েছিল স্বদেশি সংগ্রামে…
-
শালুক
শালুক তুলতে গিয়ে ভিজেছ বলে ওরা তোমায় তিরস্কার করল সেই ভয়ে পূর্ণিমায় ঘরে থাকবে? শালুক তোলাই তো জীবন – পূর্বে যারা শালুক তুলেছে তাদের প্রত্যেককেই ভিজতে হয়েছে।