প্রবন্ধ

  • চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হীরকজয়ন্তী : আমার চারুকলা (১৯৬৬-৭২) 

    চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হীরকজয়ন্তী : আমার চারুকলা (১৯৬৬-৭২) 

    ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জিত হয় ১৯৪৭ সালে, তবে ধর্মীয় সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে দেশটি বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে – ভারত ও পাকিস্তান। এ বিভক্তির ফলে দেশ দুটির হিন্দু ও মুসলমান উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ দেখা দেয়, বিশেষ করে বিভক্ত বঙ্গের দুই অংশেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশত্যাগ করে। জয়নুল আবেদিন জন্মসূত্রে পূর্ববঙ্গের মানুষ…

  • জাহিদুল হকের ‘এইখানে বহু শব, বহু মৃত’ : অস্তিত্বের কাব্যিক কাঠামো

    জাহিদুল হকের ‘এইখানে বহু শব, বহু মৃত’ : অস্তিত্বের কাব্যিক কাঠামো

    কবি-সম্পাদক আবুল হাসনাত তাঁর সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের কবিতা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪) সংকলনের ‘ভূমিকা’য় বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দুর্গত দেশের জীবন ও মননে হীরকখণ্ডের মত এখনও দ্যুতিময়। বাঙালির শিল্পসাহিত্যে তো বটেই, সামাজিক ইতিহাসের বর্ণময় উত্থানেও এই যুদ্ধ কত তাৎপর্যময় ও গভীরতাসঞ্চারী তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।’ কেন কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না? – এই প্রশ্নের উত্তরে আবুল…

  • ঢাকায় জীবনানন্দ : ব্রাহ্ম সমাজ, গোলাপি বেনারসি এবং কালাচাঁদ গন্ধবণিকের মিষ্টির খোঁজে

    ঢাকায় জীবনানন্দ : ব্রাহ্ম সমাজ, গোলাপি বেনারসি এবং কালাচাঁদ গন্ধবণিকের মিষ্টির খোঁজে

    বরিশালের সন্তান জীবনানন্দ দাশ ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর ১৯৩০ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি কালের মধ্যে কোনো এক সময় ঢাকা শহরে এসেছিলেন বিয়ের পাত্রী দেখতে। তিনি তখন দিল্লির রামযশ কলেজের শিক্ষক। আজকে ঢাকার যে-অংশটি পুরান ঢাকা নামে পরিচিত, সেখানেই ব্রাহ্ম সমাজের তৎকালীন নেতা অমৃতলাল গুপ্তের ভাইঝি লাবণ্য গুপ্তকে দেখতে এসে পছন্দ করেন এবং তারপর…

  • বাংলার প্রাচীন চিত্রকলা

    বাংলার প্রাচীন চিত্রকলা

    বাংলার মানুষ শিল্পকলার চর্চা করছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই, তার প্রমাণ পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে আবিষ্কৃত কৃষ্ণ-লোহিত সাংস্কৃতিক স্তরে (তাম্রপ্রস্তর) প্রাপ্ত চিত্র – নকশা-অঙ্কিত মৃৎপাত্রের টুকরা। একটি টুকরায় কালো মাটির পাত্রে ধূসর সাদা রেখায় শিল্পী জাল আর একসারি মাছ এঁকেছিলেন। আর অন্য একটি মৃৎপাত্রে ময়ূরীর ঠোঁটে রয়েছে সাপের চিত্র। দুটি চিত্রেই প্রাগৈতিহাসিক বাঙালির সাবলীল রেখায় অঙ্কিত চিত্র-দক্ষতা প্রশংসনীয়। কালো…

  • রুশ চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ সপ্তরথী

    রুশ চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ সপ্তরথী

    আলম খোরশেদ চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিষয়ে অবগতজনেরা জানেন, শৈল্পিক ও আধুনিক চলচ্চিত্রের সূত্রপাত প্রধানত রুশদেশ তথা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। আর এর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ হিসেবে প্রথমেই যাঁর নাম মনে আসে আমাদের, তিনি আর কেউ নন সের্গেই এইজেন্স্টেইন বা প্রচলিত উচ্চারণে আইজেন্স্টাইন (১৮৯৮-১৯৪৮)। কিন্তু আমি এই আলোচনা শুরু করতে চাই তাঁরই সমসাময়িক আরেক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিন্তক…

  • চা-বন্দনা

    চা-বন্দনা

    ঘুম ভাঙলে সকালবেলা  গরম চা চাই এক পেয়ালা  না-পেলে চা মেজাজখানা তিরিক্ষি হয় উথলে ওঠে মনের জ্বালা। সাব-এর মেজাজ বিবির মেজাজ  বাড়ে দ্বিগুণ গলার আওয়াজ  ঠিকা-ঝি আর চাকরকে কয় চা কর দ্রুত – কণ্ঠে নাগা লঙ্কার ঝাঁঝ। আন জলদি ধোঁয়াটে চা গরম চায়ে মেজাজ বাঁচা কী করিস রে রান্নাঘরে সকাল থেকে  হারামজাদি, গাধার বাচ্চা।  সাব’রা কি…

  • অপরত্ব ও ‘জাতীয় রূপক’-বিষয়ক জেমসনীয় বাগাড়ম্বর

    অপরত্ব ও ‘জাতীয় রূপক’-বিষয়ক জেমসনীয় বাগাড়ম্বর

    ভূমিকা ও অনুবাদ : সুরেশ রঞ্জন বসাক  ভূমিকা উপনিবেশবাদের একটি অনপনেয় উত্তরাধিকার হলো, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি এক বিশ্বকে প্রাচ্য-প্রতীচ্যে দু-টুকরো করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব এবং তৃতীয় বিশ্ব – এই তিন বিশ্বে ভাগ করে ছেড়েছে। এসব বিভাজন রাজনীতি,  অর্থনীতি,  সংস্কৃতি,  সমাজনীতি, ভাষা-সাহিত্য ইত্যাদি ছাড়াও ভৌগোলিকভাবে বিউপনিবেশিতদের চিন্তা ও মননে স্থায়ী বিভাজন-চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। আরেকভাবে…

  • প্রথম বাঙালি নারী-চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

    প্রথম বাঙালি নারী-চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী

    প্রথম বাঙালি নারী-চিকিৎসক ডা. কাদম্বিনী বসুর (বিয়ের পর কাদম্বিনী গাঙ্গুলী) পৈতৃক নিবাস বরিশালের গৌরনদীর চাঁদশীতে। তাঁর জন্ম ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে, মৃত্যু ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে, জীবনকাল ৬২ বছর। পিতার নাম ব্রজকিশোর বসু। তিনি ছিলেনব্রাহ্ম-ধর্মাবলম্বী। কাদম্বিনী বসুর মাতার নাম জানা যায়নি। ডা. কাদম্বিনীর স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীর জন্মস্থান মাগুরখণ্ড, বিক্রমপুর/ মুন্সীগঞ্জ। তিনিও ব্রাহ্ম-ধর্মাবলম্বী ছিলেন। কাদম্বিনী বসুর জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদীর চাঁদশী,…

  • তৃতীয় প্রজন্মের ভাবনা : দেশভাগ ও বাঙালি মুসলমান সমাজ

    তৃতীয় প্রজন্মের ভাবনা : দেশভাগ ও বাঙালি মুসলমান সমাজ

    সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে আমাদের পরিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে চলে আসে। নদীয়ার বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু ও মুসলমান রায়ট বেধে গেলে নদীয়া জেলার বিপুলসংখ্যক মুসলমান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পাকিস্তানভুক্ত কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এলাকায় চলে আসতে শুরু করলে আমাদের পরিবারের সদস্যরাও চলে আসতে বাধ্য হন। আমি রিফিউজি নই, কিন্তু রিফিউজি পরিবারে জন্ম নেওয়ার…

  • কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ : নিভৃতচারী এক প্রতিভা

    কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ : নিভৃতচারী এক প্রতিভা

    রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের সন্তান, যাঁর কথা আলোচনা হলে সবাই বলেন, ‘সেই নেপথ্যচারী মানুষটি’। তাঁর জীবনের দুটি দিক – একটি ঝকঝকে, অন্যটি ধূসর। ঝকঝকে অংশে তিনি একাধারে সাহিত্যিক, সংগীতবোদ্ধা, প্রশাসক, শিক্ষক, কারু এবং দারু শিল্পী। অন্যদিকে ধূসর অংশে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসিত, একা, বন্ধুহীন – তাঁর পরিবার থেকে দূরে থাকা এক দুঃখী মানুষ। রথীন্দ্রনাথ একটি সুবিধা নিয়ে জন্মেছিলেন…

  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : ধ্রুপদী মানের উপাদান প্রসঙ্গে

    বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : ধ্রুপদী মানের উপাদান প্রসঙ্গে

    কথা শুরুর আগে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বয়স হয়েছে প্রায় এগারোশো বছর। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রকাশিত চর্যাপদের সময়টা হিসাবে নিলে বয়সটা সেরাম হওয়ার কথা। কিন্তু এই ভাষা-সাহিত্যের বয়স কি সত্যিই তাই? সম্ভবত নয়। সাধারণ একটা ধারণা যদি মেনে নিই যে, যে-কোনো ভাষার সমৃদ্ধ একটা সাহিত্য তখনই তৈরি হতে পারে, যখন ভাষাটি যথেষ্ট উন্নত ও সাহিত্যের ভাব-প্রকাশের উপযোগী হয়ে…

  • হুমায়ূন আহমেদের ফেরা : ভাটির মানুষের জীবনকাব্য

    হুমায়ূন আহমেদের ফেরা : ভাটির মানুষের জীবনকাব্য

    ফে  রা উপন্যাসের ভূমিকায় নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘‘ফেরা’র গল্প ভাটি অঞ্চল নিয়ে’ (হুমায়ূন আহমেদ, ফেরা, উপন্যাস সমগ্র, দ্বিতীয় খণ্ড, ঢাকা, প্রতীক প্রকাশনা, ২০১৮, ভূমিকা)। হুমায়ূন আহমেদের ভাটি অঞ্চল নিয়ে মুগ্ধতা ছিল। তিনি ভাটির দেশের লোক; হাওরের মায়াময় সৌন্দর্য, হাওরবাসীর উদাসী ও সংগ্রামী জীবনালেখ্য তাঁর ফেরা উপন্যাসের মুখ্য বিষয়। বাংলাপিডিয়ায় ভাটি অঞ্চলের টীকায় বলা…