কবিতা
-
উঠতিরাও অনুরূপ
পোড়া লোহা লাল থাকতে পিটিয়ে নিজের মতো করে গড়তে হয়। সামান্য হেলায় কর্কশ গলায় বলে ওঠে ‘যেই-সেই’। এটাকে কব্জায় আনা আর গিরিশৃঙ্গে ওঠা সমপর্যায়ের। উঠতিরাও অনুরূপ, বুঝিয়েসুজিয়ে অনুকূলে রাখতে পারলে দেখানো দিকেই হাঁটে, যথাযত্নে মেনে চলে আদেশ-নিষেধ। তা না হলে পা বাড়ায় উল্টো পথে, বন্ধুরের দিকে, টান খায় নিষিদ্ধ চুম্বকে, কিলিয়ে কাঁঠাল পাকায় দুপুরে; পঙ্গপাল…
-
বিভ্রম
তোমার বাড়ি গিয়েছিলাম আজ। দরজায় দেখি বিশাল তালা। অদ্ভুত লাগল। তালা নতুন কেন? তোমরা বাড়ি ছেড়েছ আজ নয় মাস। তাহলে? কেউ তো ও বাড়িতে যায় না। তবে? কে আসে? কে যায়? তালা খোলে? ভেতরে ঢোকে? তুমি কি আসো? চুপি-চুপি? আকাশটা আজ আবার মেঘলা। তোমার যাওয়ার দিনের মতো। তুমি মেঘমাখা আকাশমুখে বলেছিলে, ‘যাচ্ছি।’ আমি বললাম, ‘যাচ্ছি…
-
ম্যারিনার-প্রতীক্ষায়
আমাদের প্রিয়জন সীমানা ছাড়িয়ে ওপারে পাখি হয়ে উড়ে যায় আমরা জনপদে নদী, ডোবা, জল শুকিয়ে দিই দুই হাতে, ওরা যেন আর না ফেরে পরিযায়ী প্রাণ পুরাণে এই দেশ; ব-দ্বীপ জলের আকর ছিল নদীময় ভালোবাসা শ্যামল প্রহর জলই তো আদি সত্য তৃষ্ণার জল, স্নানের শুশ্রূষা সবশেষ পাখি এক অ্যালব্যাট্রস খুনের রক্তে শুকিয়ে কাঠ জলদ কণ্ঠস্বর জনপদে…
-
স্থিরতার আয়ু
বহুদিন আগে কোনো পড়ন্ত বিকেলে দেখেছি যাকে – শান্ত সবুজের পাশে – সে তো নদীর পরিমিত উচ্ছ্বাসে এসে, কয়েকটি কথা বলে – চলে গিয়েছিল দূরে আরো – দূরে – সরু পথ ধরে – তার ছোট ঘরটিতে, সেখানে সে বহুদিন ধরে ছিল শান্তিতে; আসলেই কি নিবিড় নির্ঝঞ্ঝাট ছিল তার দিনগুলো?…
-
গড়াই
গড়াই নাকি গোরাই আমার মন পোড়ায় আমার গাঁয়ের নদী কেমন আমায় শুধাও যদি, সে নদী বর্ষায় চঞ্চল যেন ভরা নদী আনন্দে উচ্ছল। সে নদী গ্রীষ্মে শান্ত শীতল দিনমান বয়ে যায় ছলছয়। সবুজে শ্যামলে ধানক্ষেত, খামার যত দুই তীর গ্রাম তার ছবির মতো। এ যে আজন্ম আপন অতি আমার প্রাণের গড়াই নদী।
-
মুখগুলো
মনে করতে পারি না নিজের চেহারা, অথচ অসংখ্য মানুষের ভিড়ে চিনে ফেলি বড় একা, বিষণ্ন সে মুখ। যে মুখ খুবই পরিচিত দেখা যায় রাস্তায়, ফুটপাতে, চায়ের দোকানে নাকের ডগায় কোন এক কালের বসন্তক্ষত দেখে কেউ কেউ শংকিতে তাকায় সে দৃষ্টিবাণে ক্ষতচিহ্ন গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। রাত নিঝুম হলে স্ট্রিট লাইটের নিঃসঙ্গ আলোয় সদ্যজন্মা নক্ষত্রের…
-
অজানা অন্ধকার পথে
শাশ্বতীর যাত্রাপথে সঙ্গী ছিলো না কেউ ছিলো ক্ষুরধার অন্ধকার চারপাশে অনিশ্চিত কালের আঁধারে এগিয়েছি একা একা কণ্টকিত পথে, নিঃসঙ্গতা ফেল্টের টুপির মতো শুষেছে মাথার ঘাম ছিলো তবু বুকে সৃষ্টির তীব্র অনল দহন করেছে যা রক্তমাংস এবং হৃদয়; যা ছিলো সুদূর আলোর রেখা তাও শেষে প্রেতের মতন ছড়িয়েছে নারকী কুহক তবু ছিলো দূর চক্রবালের…
-
আলপনা
একটি ছবি আঁকব বলে ক্যানভাস নিয়ে বসে আছি। চিত্রকরদের মতো আমার সামনে কোনো মডেল নেই, প্রকৃতির কোনো প্রান্তে বসে দেখছি না প্রকৃতির লীলা কিন্তু আমি তো জানি না, কোনোদিন না-দেখা কারো ছবি কেমন করে আঁকব! তাই কল্পনার ওপর ভর করে তুলি চালাবার কথা মনে পড়ে, এখন আকাশ-বাতাস নদী-সমুদ্র, মেঘ-বৃষ্টি-রোদ, সবুজ শ্যামল প্রান্তর আর বাংলার মাটি…
-
নাম
(উৎস : জীবনানন্দ দাশ) একবার ভালোবেসে, অন্যবার অবহেলা করে কখনো-বা ঘৃণা করে মেয়েদের দেখেছেন তিনি মেঘের নকশার মতো মুগ্ধকর অনেক দেখায় সেই মেয়ে – স্তন যার প্রবাহিত জলের উচ্ছ্বাস বরফকুচির মতো শীতল ও সাদা, ছড়ায়ে শিশিরশব্দ, আঁচলের চোরকাঁটা বেছে যে-যুবতী হাসিমুখে দ্রুত চেয়ে থাকে, কোনো কোনো মহিলাকে ভালোবেসে পাওয়া যায় জ্ঞান, যদি মেয়েমানুষের দেখা…
-
ভাষা : রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি
ভাষা মানে সভ্যতার সংবিধান ভাষা মানে রাষ্ট্রচিন্তা ভাষা মানে মুক্তির সনদ ভাষা মানে রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি ভাষা মানে প্রফুল্ল দুপুর ভাষা মানে হলুদ বিকেল স্নিগ্ধ রোদের কোলাহল ভাষা মানে সন্ধের তুলসীতলা – ভোরের আজান ভাষা মানে ভালোবাসার নিবিড় আলোপড়া – গভীর গোপন তীব্র মুখর মুগ্ধতা ভাষা মানে লাবণ্য-কবিতা …
-
শীতসন্ধ্যা
বাদুরের ডানার মতো ক্রমাগত ধূসর হয়ে ওঠে দিন তার ছায়া পড়ে আকাশেও পাতায় পাতায় জড়িয়ে থাকে ঘন কুয়াশার জাল পথে নেমেছে কত নবীন নৃজন – কতজন হেঁটে যায় তবু মানুষের যাতায়াত ক্রমে শ্লথ হয়ে আসে এই শীতে; কয়েকটি বাদলা-পোকা উড়ে উড়ে বেড়ায় ঘুরে ইলেকট্রিকের হলুদ আলোর ভেতর ক্রমশ কমে আসে মানুষের যাতায়াত মাটির…
-
আয়না
কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে ক্রূর বর্তমান এখন সকালবেলা তুমি দেখতে না পেলেও এখনো সবুজ দেখো আমার পেছনে এখনো বাতাস আমাকে দোলা দিয়ে যায় চাঁদনী রাতের মতো মুখরিত আমার শরীর তবু কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে শনপাপড়ির মতো চুল বলে? খরায় চৌচির হওয়া জমির মতো এই মুখ আমার তো নয় আমি তো সময়কে বাঁধতে চেয়েছি নদীর স্রোতের…