ছোট গল্প

  • গদ্যময়

    গদ্যময়

    গাপ্পুর মন ভালো নেই। এমনিতেই দিন দিন অসাড় হয়ে পড়ছে শরীরের কলকব্জা। তবু এক টুকরো চিনচিনে কষ্ট বুকের ভেতর, কিছুতেই ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না সে। হিল্লিকে মনে পড়ে খুব। মনে হলেই একটা প্রশ্ন প্রায়ই কুরে-কুরে খায় ওকে। কিছু না বলে চলে যেতে পারলো হিল্লি? কেন, একমুখ হেসে কি বিদায় নেওয়া যেত না ওর…

  • মৃত্যুযাত্রা

    মৃত্যুযাত্রা

    চাঁদটাকে মাঠের ঠিক মাঝখানে এইভাবে গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সে এতটাই ধাক্কা খায় যে তার তেমন অবাক হওয়ার কথাও আর মনে থাকে না। এতক্ষণ সে আকাশে চাঁদের অবস্থান দেখে দেখে দিক ঠিক করে পথ চলছিল। এই তো মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে সিগারেট ধরানোর জন্য চাঁদ আর রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে দেশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠিটার দিকে…

  • তনুজার হেমন্তরাত

    তনুজার হেমন্তরাত

    মধ্যরাতে এরকম হয়, মধ্যরাতে জেগে ওঠে তনুজা, জেগে উঠে অন্ধকারের বিস্তারে নিজেকে হাতড়ে বেড়ায়। হাতড়াতে হাতড়াতে একসময় আর মনে করতে পারে না, আসলে সে কী খুঁজে পেতে চাইছে, এই মধ্যরাতে সেটা খুঁজে পাওয়ার দরকারই বা কী! একরাশ ক্লান্তি নিয়ে তখন থমকে বসে সে। আর জানালার পর্দাটা দুলে উঠলে অবশেষে কেন যেন মনে হয়, তৃষ্ণা –…

  • দরবার

    দরবার

    মুখোমুখি সিটে বসা ভদ্রমহিলার কপালের ভাঁজে চরম বিরক্তি। ঈশানের দিকে তিনি ঘন ঘন অগ্নিদৃষ্টি হানছেন। দাঁতে দাঁত পিষছেন, ‘উফ! মানুষের কমনসেন্সের এত অভাব!’ ফোনে ঈশানের লাগাতার কথা বলাই ভদ্রমহিলার বিরক্তির কারণ। কিন্তু কিছু করার নেই। কমনসেন্সের চাইতে বাড়িতে লাগাতার যোগাযোগ রাখাটা এখন অধিক জরুরি।  রজব আলীর ছুরির আঘাতে বাবা হাসপাতালে অথচ  তার অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট…

  • তলোয়ার

    তলোয়ার

    শ্রীরেখা মিত্রের চোখে জল। টিভিতে দেখছিলাম। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের প্রযোজিত সিনেমা সম্পর্কে যখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন, তখন শ্রীরেখা কথা বলতে গিয়ে একসময় কেঁদে ফেলেন। এ-মাটির টান তাঁকে কাঁদায়। একসময় বলতে থাকেন – ‘মাদারীপুরের জমিদার ছিল আমাদের পূর্বপুরুষ। বিশাল বাড়ি, পুকুর, খামার। হাজার ঘর প্রজা। সব ফেলে দেশভাগের সময় আমার পিতামহ কলকাতায় চলে যান। মাদারীপুরের…

  • ও মানুষ, ও অসুর

    ও মানুষ, ও অসুর

    লোকটির নাম কৃষ্ণ মুহাম্মদ যিশু …। আমরা আসলে জানি না – লোকটির নাম প্রকৃতপক্ষেই কৃষ্ণ মুহাম্মদ যিশু – নাকি অন্যকিছু। অন্যকিছু হওয়াই স্বাভাবিক। লোকটির নাম নিয়ে কথা উঠলেই আমাদের মধ্যে, এটা অবধারিত – তর্ক বেঁধে যাবে। আমি হয়তো বললাম, হতে পারে – কৃষ্ণ মুহাম্মদ যিশু লোকটির নাম। সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক মৌমাছি আমাকে আক্রমণ করে বসবে।…

  • মাৎস্যন্যায়

    মাৎস্যন্যায়

    ‘মাঝেমধ্যে মন যা চায় তাই করুন, ইচ্ছেমত সময় কাটান’ – ফ্যামিলি ডাক্তারের বলা কথাটা বীথি কাগজে লিখে শোবার ঘরে শাড়ির ক্লজেটে লাগিয়ে রেখেছিল। মন্ট্রিল শহরটা বছরে চার-পাঁচ মাস বরফে ঢাকা থাকে, তখন  শাড়ি পরার অনেক ঝক্কি। তবু  গ্রীষ্মকালে, বা কোনো উপলক্ষে যখন শাড়ির খোঁজ পড়ে, ওই কাগজটার গায়ে আলতো করে আঙুল বোলায় বীথি। মনে মনে…

  • বাসনার তেল ও সোনামুখী নদী

    বাসনার তেল ও সোনামুখী নদী

    একটা বাসনার তেল আইনেন, মেলা দিন অইচে চুলে কোনো তেল দেই না, চুলগুলা জট বাইন্দা যায়, আঁচড়াইতে গেলে চুল ছিঁইড়া যায় – সামনের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আবদার জানায় জরিনা। পানমুখে পিক ফেলতে ফেলতে উঠোনে নামে জহির আলী, এক কাঁধে মাছ ধরার জাল আর এক কাঁধে বৈঠা। স্ত্রীর আবদারে ফিরে তাকায়। জরিনা তাকিয়ে আছে। জহির মুখে…

  • সাপ

    সাপ

    বৈশাখ মাসে যে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি হতে পারে সেটা বাদলার আগে জানা ছিল না। বৃষ্টি আর বৃষ্টি – সে কী বৃষ্টি। ছিচকাঁদুনে মেয়ে হয়ে আকাশ যেন রাতদিন কেঁদে-কেটে একসা। ঘর থেকে বেরোনো যায় না। ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায় না। মাঠে বল খেলার নাম করে গঞ্জেও যাওয়া যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় শুধু ঘরে শুয়ে-বসে থাকা।…

  • গোমতী বানের চাঁদ

    গোমতী বানের চাঁদ

    জ্যোৎস্নার শাদা আলোতে গাছপালার সবুজ কেমন শীর্ণ হয়ে উঠেছে। আকাশে আস্ত একটা চাঁদ, কিন্তু পুকুরের জলের বিচ্ছিন্ন ঢেউয়ের ভেতর চাঁদটা ক্রমাগত ভাঙছে। মৃদুমন্দ বাতাসে বাঁশঝাড়ের মাথা নড়ছে- তির তির, তির তির।  পুকুরটা তেমন বড় নয়। চৌকোণা, দীঘপাশ প্রায় সমান। একপ্রস্থ জল ভেদ করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তাকালে পাড়ের সীমানা অস্পষ্ট হওয়ার কোনো কারণই থাকে না।…

  • দুই বিঘা জমি

    দুই বিঘা জমি

    বাপের পছন্দে রুহুল আমিন বাপের বন্ধুর মেয়ে রেবেকাকে একদিনের নোটিশে বিয়ে করে। বিয়ে করে বলার চেয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয় বলাটা বিশ^স্ত হয়। এমন নয় যে রেবেকা দেখতে-শুনতে খারাপ বলে রুহুল আমিন অরাজি হবে, দুধে আলতায় গায়ের রঙের সংজ্ঞা মেলানো সুন্দরী না হলেও গায়ের রং তার উজ্জ্বল শ্যামলা। আর্য রক্তের যৎসামান্য মিশ্রণে টিকালো নাকের ঢং,…

  • আয়শার রাত-দিন

    আয়শার রাত-দিন

    আয়শা সকাল থেকে বিকেল বা রাত পর্যন্ত যা যা করে তা নিয়ে তার নিজের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও এলাকার মানুষের মাথা যথেষ্ট ব্যথা করে, তাদের মাথা টনটন করে, চোখ লাল হয়ে যায়, গোখরো সাপের মতো কেউ কেউ ফোঁস ফোঁস করে ওঠে; কারণ সমাজে তার জন্য নাকি অনেকের মানসম্মান নষ্ট হয়। প্রায়শ এরকম হয় আর তাই…