কবিতা

  • স্থিরতার আয়ু

    বহুদিন আগে        কোনো পড়ন্ত বিকেলে দেখেছি যাকে – শান্ত সবুজের পাশে – সে তো নদীর পরিমিত উচ্ছ্বাসে এসে,        কয়েকটি কথা বলে –         চলে গিয়েছিল দূরে আরো –           দূরে – সরু পথ ধরে –             তার ছোট ঘরটিতে, সেখানে সে বহুদিন ধরে ছিল শান্তিতে; আসলেই কি নিবিড় নির্ঝঞ্ঝাট                 ছিল তার দিনগুলো?…

  • গড়াই

    গড়াই নাকি গোরাই আমার মন পোড়ায় আমার গাঁয়ের নদী কেমন আমায় শুধাও যদি, সে নদী বর্ষায় চঞ্চল যেন ভরা নদী আনন্দে উচ্ছল। সে নদী গ্রীষ্মে শান্ত শীতল দিনমান বয়ে যায় ছলছয়। সবুজে শ্যামলে ধানক্ষেত, খামার যত দুই তীর গ্রাম তার ছবির মতো। এ যে আজন্ম আপন অতি আমার প্রাণের গড়াই নদী।

  • মুখগুলো

    মনে করতে পারি না নিজের চেহারা, অথচ অসংখ্য মানুষের ভিড়ে চিনে ফেলি বড় একা, বিষণ্ন সে মুখ। যে মুখ খুবই পরিচিত দেখা যায় রাস্তায়, ফুটপাতে, চায়ের দোকানে নাকের ডগায় কোন এক কালের বসন্তক্ষত দেখে কেউ কেউ শংকিতে তাকায় সে দৃষ্টিবাণে ক্ষতচিহ্ন গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। রাত নিঝুম হলে স্ট্রিট লাইটের নিঃসঙ্গ আলোয় সদ্যজন্মা নক্ষত্রের…

  • অজানা অন্ধকার পথে

    শাশ্বতীর যাত্রাপথে সঙ্গী ছিলো না কেউ ছিলো ক্ষুরধার অন্ধকার চারপাশে                অনিশ্চিত কালের আঁধারে এগিয়েছি একা একা কণ্টকিত পথে, নিঃসঙ্গতা ফেল্টের টুপির মতো                       শুষেছে মাথার ঘাম ছিলো তবু বুকে সৃষ্টির তীব্র অনল দহন করেছে যা রক্তমাংস এবং হৃদয়; যা ছিলো সুদূর আলোর রেখা তাও শেষে প্রেতের মতন ছড়িয়েছে নারকী কুহক তবু ছিলো দূর চক্রবালের…

  • আলপনা

    একটি ছবি আঁকব বলে ক্যানভাস নিয়ে বসে আছি। চিত্রকরদের মতো আমার সামনে কোনো মডেল নেই, প্রকৃতির কোনো প্রান্তে বসে দেখছি না প্রকৃতির লীলা কিন্তু আমি তো জানি না, কোনোদিন না-দেখা কারো ছবি কেমন করে আঁকব! তাই কল্পনার ওপর ভর করে তুলি চালাবার কথা মনে পড়ে, এখন আকাশ-বাতাস নদী-সমুদ্র, মেঘ-বৃষ্টি-রোদ, সবুজ শ্যামল প্রান্তর আর বাংলার মাটি…

  • নাম

    (উৎস : জীবনানন্দ দাশ) একবার ভালোবেসে, অন্যবার অবহেলা করে কখনো-বা ঘৃণা করে মেয়েদের দেখেছেন তিনি মেঘের নকশার মতো মুগ্ধকর অনেক দেখায় সেই মেয়ে – স্তন যার প্রবাহিত জলের উচ্ছ্বাস                বরফকুচির মতো শীতল ও সাদা, ছড়ায়ে শিশিরশব্দ, আঁচলের চোরকাঁটা বেছে যে-যুবতী হাসিমুখে দ্রুত চেয়ে থাকে, কোনো কোনো মহিলাকে ভালোবেসে পাওয়া যায় জ্ঞান, যদি মেয়েমানুষের দেখা…

  • ভাষা : রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি 

    ভাষা মানে সভ্যতার সংবিধান  ভাষা মানে রাষ্ট্রচিন্তা  ভাষা মানে মুক্তির সনদ ভাষা মানে রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি  ভাষা মানে প্রফুল্ল দুপুর  ভাষা মানে হলুদ বিকেল  স্নিগ্ধ রোদের কোলাহল  ভাষা মানে সন্ধের তুলসীতলা – ভোরের আজান ভাষা মানে ভালোবাসার নিবিড় আলোপড়া –                   গভীর গোপন তীব্র মুখর মুগ্ধতা  ভাষা মানে লাবণ্য-কবিতা …

  • শীতসন্ধ্যা

    বাদুরের ডানার মতো ক্রমাগত ধূসর হয়ে ওঠে দিন তার ছায়া পড়ে আকাশেও     পাতায় পাতায় জড়িয়ে থাকে ঘন কুয়াশার জাল পথে নেমেছে কত নবীন নৃজন – কতজন হেঁটে যায় তবু মানুষের যাতায়াত ক্রমে শ্লথ হয়ে আসে এই শীতে; কয়েকটি বাদলা-পোকা উড়ে উড়ে বেড়ায় ঘুরে ইলেকট্রিকের হলুদ আলোর ভেতর             ক্রমশ কমে আসে মানুষের যাতায়াত মাটির…

  • আয়না

    কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে ক্রূর বর্তমান এখন সকালবেলা তুমি দেখতে না পেলেও এখনো সবুজ দেখো আমার পেছনে এখনো বাতাস আমাকে দোলা দিয়ে যায় চাঁদনী রাতের মতো মুখরিত আমার শরীর তবু কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে শনপাপড়ির মতো চুল বলে? খরায় চৌচির হওয়া জমির মতো এই মুখ আমার তো নয় আমি তো সময়কে বাঁধতে চেয়েছি নদীর স্রোতের…

  • ঘরে ফেরা

    ঘরে ফিরে মনে হয় স্বয়ংক্রিয় আলো জ্বলে উঠবে স্বপ্ননীল, ঘরে ফিরে রোজ মনে হয় কেউ আসবে, নিয়ে যাবে খোঁজ বেঁচে আছি কিংবা আমি মরে গেছি কি না প্রিয় বন্ধু কেউ এলে খুবই হয় ভালো বন্ধু যদি নাও আসে অন্তত শত্রুরা ঘরে এসে কথাচ্ছলে করে যাক ঘৃণা আমার তুচ্ছাতিতুচ্ছ দুঃখ ব্যথা সুখ ঘরের আসবাব ছাড়া কেউ…

  • মাতাল মহুয়া

    ইমেজের অন্তহীন কুয়াশায় বিভোর রহস্য রূপের আঁধার খুঁটে খুঁটে আয়না বসায় এক মাতাল মহুয়া তামারং ক্যানভাসে আঁকে পাতার সবুজধ্বনি, লাল নীল ফুলের আহ্বান পাখিদের ডানার কম্পন চারদিকে টুপটাপ ঝরে পড়ে নিসর্গের শব্দ ধ্যানমগ্নতায় কখনো কুড়ায় আবার কখনো অনন্তের চোখে মুখে মাখে রং

  • অসীম অভিধান

    গভীর জল অতল কোনো মেয়ে,  কেউ ছিল না সুন্দরী তার চেয়ে। খুঁজতে তাকে গিয়েছে এক কবি, চিনতো না সে ঊষা কালের ছবি। জানতো না সে সূর্য কাকে বলে, সন্ধ্যা থাকে দূরে অস্তাচলে। সেই মেয়েটি রাজার মেয়ে নয়, কবির চোখে আনখ বিস্ময়। সেই মেয়েটি কাজের ফাঁকে ফাঁকে জানলা দিয়ে দেখতো ছেলেটাকে। জানতো না সে ছেলেটা শুধু…