ছোট গল্প

বাড়ি দেখে বেরিয়ে আসতেই কালিদাস দালাল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী পছন্দ হয়েছে তো?’ বলেই গড়গড় করে বলে চললেন, ‘বলেছিলাম না তৈরি জিনিস, থাকার লোক নেই। মালিক কলকাতায় ফ্ল্যাটে থাকেন। বাড়িটি স্রেফ ফেলে রাখা হয়েছে।’ অয়ন দালালের কথায় পুরো মনোযোগ দেয়নি। ফলে, কাজের কথাটুকু শুধু বলল, ‘পছন্দ-অপছন্দের কথা নয়, মাত্র দুমাস থাকব, তার কম দিনও থাকতে পারি।…

মধ্যরাতের এমন আকাশ আগে কখনো দেখিনি। কেমন যেন তারকাখচিত হিংস্র আবর্ত নিয়ে কেঁপে কেঁপে দুলছে। একে তো মধ্যরাতের নীরবতা, তার ওপর দৃষ্টিবিভ্রম। সময়ের কি নিদারুণ উপহাস! স্থির মাংসপিণ্ডের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে মনে হলো, আমার চিন্তার জগতে গড়িয়ে পড়ছে অজস্র রক্তফোঁটা। নিশ্বাস বন্ধ করে প্রাণপণ শক্তিতে যেন দৌড়াচ্ছি। কোথায়? জানি না। একবিংশ শতাব্দীতে অনেকেই হয়তো নিজেদের…

এই সময় কলকাতায় শীত জাঁকিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই। এখানে এই জেটির সামনে বসে যতদূর দেখা যায়, শান্ত সমুদ্রের সঙ্গে নীল আকাশের মাখামাখি। বেলা গড়িয়ে এলো। সমুদ্রের জলকাচে বিভিন্ন রঙের মাছের আনাগোনা। পোর্ট ব্লেয়ার শহরটা অনির্বাণের খুব সুন্দর লাগে। শান্ত, সমাহিত। ইংরেজি নতুন বছরের গোড়ায় টুরিস্টের ছড়াছড়ি। রাস্তাঘাটে কান পাতলেই কলকাতার বাবু-বিবিদের কথা ধরা পড়ে। তবু এখানে…

সূর্য ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে শীতের অবসন্ন দিন শেষে অফিস শেষ করে রাস্তায় হাঁটছি। দিন সাতেক হলো রাজবাড়ীতে বদলি হয়ে এসেছি। নতুন জায়গা, অনেক কিছুই চিনি না, জানি না। তবে আমার পুরনো অভ্যাসটাকে বজায় রাখার জন্য পত্রপত্রিকার দোকানগুলি খুঁজে বের করেছি। এসব দোকানে দাঁড়িয়ে পত্রিকার পাতা ওল্টানো, কখনো কোনো বই ভালো লাগলে সেটা কিনে ফেলা আমার…

কী রাঁধবে না রাঁধবে ভাবতে ভাবতে আঙিনা ঝাঁট দিচ্ছিল সালমা। ঘরে চাল আছে। ডাল আছে। আলু আছে। বড়ি আছে। ঘরের চালে কুমড়ো আছে। কান্টার মাচায় পুঁইশাক আছে। সজনে গাছে সজনে শাক আছে। ওল আছে। এসব তো রোজই থাকে। গেরস্তবাড়ি বলে কথা! কিন্তু ওই একই জিনিস রোজ রোজ আর কত খাবে? মুখে ছালি পড়ে গেল! স্বামীটাও…

আমগো লুকমানের চোখগুলি আছিল ক্যামুন কালা ডাঙ্গর। আর শইল্যের রংডা আছিল ঠিক বগার মতোন সাদা। মাডি দিয়া খেললেও কুনোদিন কালি লাগত না শইল্যের মইধ্যে। তুই হেই রং পাইছোসরে মাইয়া … কী যে কও দাদি, যেই মানুষডার চেহারা ঠিকমতোন মনে নাই, কুনোদিন দেহিও নাই তার রং বগার মতোন না কালা কাউয়া এইসব মিলাই ক্যামনে? এইসব আন্দাজি…

পা ফেলতে ফেলতে থমকে দাঁড়ায় হরনাথ। কী এক মায়াবী আকর্ষণে বারবার পেছনে ফিরে তাকায় বুড়ো হরনাথ। আকাশের দক্ষিণ-পূর্বদিককার আগুনের গনগনে আভা হরনাথকে ভীষণভাবে চমকে দেয়। কার ডাকে-পদশব্দে সম্বিৎ ফিরে পায় হরনাথ। জয়নাল-মাইজপাড়ার তাজু বেপারির পড়ুয়া ছেলে – এখন মুক্তিবাহিনীর জাঁদরেল কমান্ডার। তাকে ইশারায় তাড়া দেয় জয়নাল – ‘একটু পা চালিয়ে হাঁটো কাকা, রাত পড়ে আসছে।’…

আপনি কে? আমার পিছনে পিছনে হাঁটছেন কেন? বিরক্তির সঙ্গে প্রশ্ন করে কেশবতী। আমি লক্ষ করেছি কয়েকদিন ধরে আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন। কেন? চেনেন আমাকে? হঠাৎ একসঙ্গে এতো প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, বুঝতে পারেনি সৈকত হালিম। বিব্রত মুখে একবার কেশবতীর চোখের দিকে আর একবার মাটির দিকে দৃষ্টি রাখে। গলি পার হয়ে চৌরাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। আকাশে…

খবরটা কে আনে, জানি না। তবে আমি জানি এ-সময় কী করতে হবে। বোনকে একটা মাটির গর্তে লুকিয়ে রেখে নিজে ঢুকে যাই গভীর জঙ্গলে। বর্বরদের হাত থেকে আগে জীবন রক্ষা করতে হবে। জমাট অন্ধকার। আকাশ দেখা যায় না। দেখা গেলে হয়তো আলো আসত। গভীর বনের ভেতর রাতে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না? রাতটা কোনো রকমে একটা…

হাশেম আলীর সকালটা শুরু হয়েছে চরম বিরক্তি দিয়ে। ঘুম থেকে উঠে মধু দিয়ে লেবু-পানি খেতে গিয়ে দেখলেন, মধুর বয়াম কিচেন ক্যাবিনেটে তার নির্ধারিত জায়গায় নেই। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে দেখা মেলে, কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয় না। বয়াম একদম খালি। কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন তারও উপায় নেই। সবাই ঘুমাচ্ছে। শুধু লেবু দিয়ে পানি খাওয়ার কথা ভাবলেন…